আমি যখন শিকারিদের কাছ থেকে পাখি উদ্ধার করে মুক্ত করতে পারি তখন মনে হয় আমার কাজ সার্থক : রাশেদ বিশ্বাস

187
রাশেদ বিশ্বাস

মোঃ মামুন হোসেনঃ  ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পশু ও পাখি তার খুব ভালো লাগতো। কিন্তু তার এ ভালো লাগার ওপর যখন আঘাত আসতো তখন তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারতেন না। তার বন্ধুরা শালিক, ঘুঘু, বিড়াল, কাঠবিড়ালি মেরে খুব আনন্দ করতো তখন তার মনটা বলতো আমি যদি এ প্রাণিদেরকে মুক্ত করতে পারতাম! কখনো সখনো সুযোগ পেলে প্রাণিগুলো বন্ধুদের কাছ থেকে নিয়ে ছেড়েও দিতেন। মনে মনে ভাবতেন মানুষের মত এসব প্রাণিরও তো জীবন আছে। তাহলে কেন এভাবে এ প্রাণিদের কষ্ট পেতে হবে? তখন থেকেই তার এই সব প্রাণিদের প্রতি মায়া কাজ করা শুরু করলো। বাড়ির আশেপাশে যখনই পশুপাখির উপর নির্যাতনের খবর আসতো ছুটে যেতেন রক্ষা করতে। কখনো রক্ষা করতে পারতেন আবার কখনো মন খারাপ করে ঘরে ফিরতেন।
যারা শখের বশে এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকার করে তাদের রুখতে ছাত্র, যুবকদের সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ করছেন। এছাড়াও প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে বিভিন্ন ভাবে সহযোতিার মাধমে পাখি শিকারকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন। তার এ কাজের জন্য তালা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান হাফিজুর রহমানের সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছেন। বিভিন্ন সময় পুলিশ পাঠিয়ে পাখি শিকারিদের আইনের আওতায় এনেছেন। তার এ কাজে সাধারণ মানুষের সাধুবাদ পেলেও ধীরে ধীরে রাশেদ বিশ্বাস পাখি শিকারিদের পথের  কাঁটা হয়েছেন। বিভিন্নভাবে তাকে এ কাজ বন্ধ করার জন্য বলা হলেও তিনি থেমে থাকছেন না। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও মানুষের সহযোগিতায় তিনি তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পাখি শিকার বন্ধে প্রচরণা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাশেদ বিশ্বাসের কাছে তার কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, “আমার নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই আমি এ কাজ করি। আমি যখন এ কাজ শুরু করি তখন আমার বাড়ির লোকই আমার এ কাজ বন্ধ করতে বলেছিলো; কিন্তু আমি আমার কাজ বন্ধ করিনি। আমি বিশ্বাস করি নির্বিচারে পশুপাখি হত্যা করে আমরা আমাদের এই পরিবেশকে সুন্দর রাখতে পারবো না।” তিনি আরো বলেন, “আমি যখন শিকারিদের কাছ থেকে পাখি উদ্ধার করে মুক্ত করতে পারি তখন মনে হয় আমার কাজ সার্থক। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এ গুলো রক্ষা করা একান্ত জরুরি।” তিনি আরো বলেন, “আমাদের সমাজের ২ শ্রেণির মানুষ পাখি বা বন্য প্রাণি শিকার করে। এক শ্রেণির মানুষ যারা দরিদ্র তারা সামান্য অর্থের জন্য এ কাজগুলো করে থাকে। তারা পাখি প্রতি ৫০-৪০০ টাকা আয় করে থাকে। কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হই তা এ শ্রেণির মানুষেরা বোঝে না। আর অন্য শ্রেণীর মানুষ তারা শুধুমাত্র শখের বশে পাখি শিকার করে থাকে। এগুলো আসলে একদিনে বন্ধ করা সম্ভব না। দিন যত যাচ্ছে অভিনব কায়দায় পাখি শিকার ততই বাড়ছে।  তার নিজ এলাকা তালা উপজেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলায় বন্যপ্রাণি, পাখি সংরক্ষণ ও বিচরণ ক্ষেত্র উম্মুক্ত রাখতে সকলকে আহবান জানিয়ে আসছেন। তালার পাখিমারার বিল, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের লক্ষণপুর গ্রাম, ডুমুরিয়ার বিলসহ বেশ কিছু এলাকায় তিনি সম্প্রতি পাখি নিধন বন্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন।

এ ব্যাপারে, রাশেদ বিশ্বাসের কাছে জীববৈচিত্র রক্ষার প্রয়োজনীয়তা জানতে চাইলে তিনি বলেন , ” বেঁচে থাকার জন্য যে নি:শ্বাস আমরা গ্রহণ করি , যে খাদ্য আমরা খাই এবং যে জল আমরা পান করি তা প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র থেকে আসে তাই প্রকৃতি-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যৎ এ প্রকৃতি-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র ধ্বংস হলে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল মানুষের অস্তিত্ব ও বিলীন হয়ে যাবে।