নগরঘাটা ইউনিয়ন পোস্ট ই-সেন্টারের বেহাল দশা, ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

205
নগরঘাটা ইউনিয়ন পোস্ট ই-সেন্টার

নিজস্ব প্রতিনিধি: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের ‘একসেস টু ইনফরমেশন’ কর্মসূচীর আওতায় ২০১৫ সালের জানুয়ারীতে শুরু হয় পোস্ট ই-সেন্টার সেবা কেন্দ্রের কার্যক্রম । উক্ত কর্মসূচীর আওতায় তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়ন পোস্ট অফিসে সরকারী ভাবে ৩টি ল্যাপটপ,একটি প্রিন্টার,একটি স্ক্যানার কাম ফটোকপিয়ার, ইন্টারনেট সংযোগের জন্য মডেম,বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সোলার প্যানেল সহ মোট প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার মালামাল বিনামূল্যে প্রদান করা হয়।

পোস্ট মাষ্টার নিজে একজন উদ্যোক্তা নির্বাচন করে পার্শ্ববর্তী সুবিধাজনক স্থানে একটি পোস্ট ই সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার কথা থাকলেও নগরঘাটায় পোস্ট অফিস ই-সেবা কেন্দ্রটি পুলের বাজারের ভিতরে পুরাতন একটি দোকানকে অফিস বানানো হয়। সেই দোকানটি এমন জায়গায় যেখানে মানুষের চলাচল একেবারে নেয় বললেই চলে। ই-সেবা কেন্দ্র থেকে সরকারী মালামালের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তার এলাকার জনগনের কম মূল্যে নানা ধরনের আইটি সেবা প্রদানসহ পোস্ট অফিসের সকল সেবা প্রদান প্রদান করার কথা থাকলেও বাস্তবে তার কোন সেবাই পাচ্ছেনা নগরঘাটা ইউনিয়নের জনগণ। সেবা পেতে ছুটে যেতে হয় সাতক্ষীরা,পাটকেলঘাটায়। প্রতিদিন চাকরির দরখাস্ত,বিভিন্ন স্কুলের ভর্তি,সরকারি বিভিন্ন ফরম,প্রিন্টিং সহ নানা কাজ করতে ভোগান্তি পেতে হয়,যেতে হয় দূর-দূরান্তে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ই-সেবা কেন্দ্রের জন্য ভাড়া নেওয়া দোকানে লোকজনের যাতায়াত না থাকায় দোকানের দরজার সামনে দূর্বা ঘাস জন্মে গেছে।দীর্ঘদিন ধরে ডিজিটাল ই-সেবা কেন্দ্রটি খোলা হয়না, তালাবদ্ধ থাকে সবসময়।

নগরঘাটা ইউনিয়ন পোস্ট ই-সেন্টার
নগরঘাটা পোস্ট ই-সেন্টারটি দীর্ঘদিন ধরে না খোলাতেই ই-সেন্টারের সামনে ময়লা অাবর্জনায় ভরে ঘাস জন্মে গেছে।

স্থানীয় অনেকেই বলেন, আমাদের ইউনিয়নে পোস্ট ই-সেবা কেন্দ্র আছে সেখান থেকে আমরা সরকারে বিভিন্ন সেবা স্বল্প মূল্যে নিতে পারবো।কিন্তু দোকান থাকে অধিকাংশ সময়ই বন্ধ।এজন্য সেবা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

আরো অনেকেই বলেন, আমরা গ্রাম এলাকার মানুষ। অভাব অনটন সবসময় লেগেই থাকে আমাদের। আমরা ধারদেনা করে ছেলেমেয়েদেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন প্রাইভেট কম্পিউটার সেন্টারে কম্পিউটার শিখাই। অথচ শুনলাম আমাদের ছেলে মেয়েদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য সরকার আমাদের এলাকায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু পলাশ সেটি কখনো করেনি বা করেনা।

দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়,পোস্ট ই-সেন্টারের উদ্যোক্তা পলাশ জনগনের কোনো সেবা দেয়না।তদূপরী যতদূর লোক জানে তারা যখনই সেখানে যায় তখন দোকান বন্ধ থাকে।ফিরে অাসতে হয়, কাজ হয়না।দোকান বন্ধ থাকাতেই এলাকার লোকজন প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সূত্রে জানা যায়,ডিজিটাল ই-পোস্ট সেন্টারের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়নে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ,প্রিন্টিং,কম্পোজ,ছবি প্রিন্ট,স্ক্যানিং, ই-লার্নিং,ই-মেইল,ইন্টারনেট ব্রাউজিং,পরীক্ষার ফলাফল, ভর্তি ও চাকুরির অাবেদন,কৃষি বিষয়ক তথ্য,দেশ -বিদেশে ভিডিও কনফারেন্স সহ নানাবিদ সুযোগ-সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছায়ে দেওয়ার জন্য সরকার দেশের প্রতিটা ইউনিয়নে একটি করে ই-পোস্ট সেন্টার তৈরি করে দিয়েছে।কিন্তু সরকারের এত সুযোগ থাকা সত্বেও নগরঘাটার জনগন বিন্দু মাত্রা সুবিধা পাচ্ছেনা এই ডিজিটাল ই-সেন্টার থেকে।

ইউনিয়ন পোস্ট মাস্টার মোঃ ইয়ারুল ইসলামের কাছে পোস্ট ই-সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন , আমি ই-সেবার সম্পর্কে অবগত আছি। আমার কাছে অনেকেই অভিযোগ করছে যে, তারা ই-সেবা কেন্দ্র থেকে কোনো সেবা পাচ্ছে না। কেন্দ্রটি নিয়মিত খোলা থাকে না। উদ্যেক্তা নিজের ইচ্ছা মতো খোলে। তিনি আরো বলেন , আমরা ই-সেবা কেন্দ্র উদ্যোক্তাকে ৩ বছরের জন্য ডিড (চুক্তিপত্র) করে দিয়েছি, যার জন্য কোনো ব্যাবস্থাও নিতে পারছি না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ই-সেবা কেন্দ্রের আয়ের ১০ শতাংশ আমাকে ও ১০ শতাংশ সরকারী খাতে জমা দেওয়া কথা থাকলেও সেটা মাঝে মাঝে আমাকে দিতে হয়। তিনি বলেন উদ্যোক্তা ঠিক মতো সেবা না দিলে এ বিষয়ে আমার কিছু করার নেই।তিনি বলেন,অামিও চায় জনগণ সরকারে ডিজিটাল সেবা পাক।পরে তিনি বলেন এই বিষয় নিয়ে অামি অামার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।শিঘ্রই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, পোস্ট ই-সেন্টারে যারা দায়িত্বরত রয়েছেন তারা কখনোই এ বিষয়ে আমাদের জানান নাই এবং আমরাও কখনো দেখি নাই পোস্ট ই-সেবা সেন্টারে সেবা দেয়া হচ্ছে। যদি জানতাম তা হলে আমরা অবশ্যই সেখানে গিয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশি করে জানতে পারতাম।

নগরঘাটা ই-পোস্ট সেন্টারে উদ্যোক্তা পলাশের সাথে কথা বলে জানা যায়,ই-পোস্ট সেন্টারের জায়গার সমস্যা থাকাতেই সমস্যা হচ্ছে।তাছাড়া তিনি অভিযোগ করে বলেন, ই-পোস্ট সেন্টারে দিনের বেলা লোকজন অাসেনা বলে দিনের বেলা বন্ধ রাখি।মাঝেমধ্যে বিকাল সময়ে খোলা হয়।তিনি বলেন পরিবেশ দরকার যেখানে পোস্ট অফিস ব্যক্তিগতভাবে কাজ না করে জনগণের জন্য কাজ করবে।তিনি অভিযোগ করে বলেন,ইউনিয়ন পোস্ট মাস্টার ইয়ারুল ইসলাম পোস্ট অফিসের কাজ বাড়িতেই করে থাকেন। তাছাড়া ই-পোস্ট সেন্টারের মালামাল হস্তগত না করে তার বাড়িতেই রেখে দিয়েছিলেন।এখনো অামাদের এখানে পোস্ট সেন্টারের মূল সেবা চালু হয়নি।এরকম অযৌক্তিক অনেক কথাই উদ্যোক্তা পলাশ জানান।তাছাড়া উদ্যোক্তা পলাশ তার কাজের ধরণ সম্পর্কে ঠিকমত কোনো জবাব দিতে পারেননি।

যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে লক্ষ-কোটি টাকা ব্যয় করে জনগনের দোরগোড়ায় সেবা পৌছে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে নগরঘাটা ই-পোস্ট সেন্টারের উদ্যোক্তা পলাশ সরকারের সেবা জনগণের বঞ্চিত করছেন।একদিকে সরকারী জিনিস উদ্যোক্তা পলাশ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন, অন্যদিকে সরকারের মূল লক্ষ্য ও জনগনের ডিজিটাল সেবা ব্যহত হচ্ছে।ব্যহত হচ্ছে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।

উল্লেখ্য ই-সেবা কেন্দ্রের প্রথম অফিস নেওয়া হয় নগরঘাটা রাইচমিল মোড়ের একটি দোকানে, কিন্তু কিছু দিন থাকার পরে হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় মালামাল চলে যায় নগরঘাটা পুলের বাজারে।

সাতক্ষীরা পোস্ট অফিসের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়,অভিযোগ পেলে অামরা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।নিয়মিত কাজ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।সরকার এটার পিছনে অনেক টাকা খরচ করছে, এখন সেখানে যদি জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবা না পায় তাহলে অামরা সেই উদ্যোক্তাকে বাদ দিয়ে নতুন উদ্যোক্তা নিয়োগ দেবো।তিনি বলেন অামি খুব শিঘ্রই তদন্ত শুরু করবো।তারপর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পোস্ট পরিদর্শক অরুণ বাবুর সাথে কথা বলে জানা যায়,ঘটনা সত্য হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু কাজটা জনগণের সুবির্ধাতে করা হয়েছে সেহেতু জনগণ সেবা না পেলে উদ্যোক্তা বাদ দিয়ে দেয়া হবে।
তিন বছরের ডিডের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,সরকারের অনেকগুলো টাকার মালামাল সেখানে দেয়া হয়েছে।তার জন্য একটা চুক্তি করা হয়েছে।অার সেই চুক্তি নামাতে বেশ কিছু শর্ত রয়েছে।এখন সেই শর্তগুলো যদি উদ্যোক্তা পালন না করে তাহলে ম্যানুয়ালি তাকে অামরা বাদ দিয়ে দেবো।তিনি বলেন খুব শিঘ্রই বিষয়টা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এলাকাবাসীর দাবি পোস্ট ই-সেন্টারটি যেনো সবসময় চালু থাকে।সেখান থেকে যেনো এলাকাবাসী ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া বেশ কয়েকজন বলেন নগরঘাটার মূল কেন্দ্র হলো পোড়ারবাজার অথবা রাইচমিল মোড়।সেখানে যদি পোস্ট ই-সেন্টারটি নেয়া হয় তাহলে জনগণ অারো বেশি উপকৃত হবে।তারা দাবি করেন পোস্ট ই-সেন্টারটি পোড়ারবাজার অথবা রাইচমিল মোড়ে নেয়া হোক।