এসএম বাচ্চু : স্কুলটির প্রতিষ্ঠার আনুমানিক বয়স ১৭০ বছর। দেশের প্রথম নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলা হয় এই স্কুলটিকে। প্রায় দুই শতাধিক বছর পুরানো এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠাটি এখনো পর্যন্ত জাতীয়করণ না হওয়ার কারণে উৎকণ্ঠাতা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
বলছি, খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলা রাড়ুলী ভুবন মোহিনী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির কথা। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা সাল ১৮৫০। তৎকালীন জমিদার হরিশ্চন্দ্র রায় তার স্ত্রী ভুবন মোহিনী দেবীর নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এই হরিশ্চন্দ্র হলেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের (পিসি রায়ের) পিতা।
প্রকাশ, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেছেন ১৮৮০সালে ৯ ডিসেম্বার। কিন্তু তার প্রায় ৩০ বছর আগে এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরী করা হয়। পিসি রায়ের পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় নারী শিক্ষাকে প্রসারিত করতে ১৮৫০ সালে কোন এক সময় স্কুলটির প্রতিষ্ঠান করেন এবং তিনি নিজের স্ত্রীর নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম করেন।
প্রতিষ্ঠালগ্নে স্কুলটি প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক এ পাঠদান করানো হলেও পরবর্তীতে তা মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে মোট ২১২ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। ১২ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী তাঁদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন দক্ষতার সাথে। বিগত ৫ বছর এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিকে শতভাগ পাস করে আসছে। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে ৩২ জন ছাত্রী। সফলতার হারের কারন স্কুলটির উন্নয়ন বলতে নতুন ভবন তৈরী হয়েছে সম্প্রতি।
স্কুলটির শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের মধ্য অনেকে এই স্কুলটিতে ক্লাস ১ হতে পড়ে আসছি। আমরা নিজেদের কাছে গর্ববোধ করি এজন্য যে এটি দেশের তথা উপমহাদেশের প্রথম নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত আছি। আবার নিজেদের কাছে খারাপ লাগে এজন্য যে দীর্ঘ বছর এই স্কুলটির জাতীয়করণ হয়নি।
স্কুলটির অভিভাবকরা জানান, দীর্ঘ বছর এই স্কুলটির উন্নয়ন হোক, সেটা চাই আমরা। ১৮৫০ থেকে ২০২১ সাল প্রায় দুইশ’ বছর। ভাবতে অবাক লাগে যে স্কুলটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়নি।
এলাকার প্রবীনরা বলেন, আমার বাপ, দাদা ও প্রপিতামহদের আমলে তৈরী এই নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আজও অবহেলিত হিসেবে পড়ে আছে। স্কুলটি পিসিরায়ের পিতা তৈরী করেছেন বলে আমারা শুনে আসছি। পিসি রায় একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী। তার পিতার তৈরী করা দেশের প্রথম নারী স্কুলটি সরকারি করণ না হওয়া দু:খের বিষয়। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি ইতিহাস ও ঐতিহ্যও স্মৃতি হিসেবে স্কুলটি জাতীয় করন করা হোক। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম কুমার ঘোষ বলেন, ধারণা করা হয় ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি। কিন্তু এখনও জাতীয়করণ হয়নি। আমরা বিদ্যালয়টি জাতীয়করণে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।