সাংবাদিকতা, সাংবাদিক ও সাংবাদিকের গুণাবলি

959

সাংবাদিকতাঃ
সাংবাদিকতা কথাটা এসেছে ইংরেজি জার্নালিজম থেকে। জার্নালিজম হলো জার্নাল ও ইজম এই দুটি শাব্দের মিলিত রুপ। জার্নাল শব্দের অর্থ হচ্ছে কোন কিছু প্রকাশ করা আর ইজম শব্দের অর্থ হচ্ছে অভ্যাস করা, অনুশীলন বা চর্চা করা। এই হিসেবে কোনকিছু প্রকাশ করার জন্য যে চর্চা বা অনুশীলন করা হয় তার নাম সাংবাদিকতা বা জার্নালিজম।

সাংবাদিকঃ
সাধারণভাবে যিনি সংবাদপত্রের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করেন ও লিখেন তিনিই সাংবাদিক। তবে আজকের আধুনিক সাংবাদিকতার বিশাল পরিসরে সাংবাদিককে কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় বেঁধে দেয়া কষ্টসাধ্য।
অবশ্য মার্কিন সাংবাদিক আর ডি ব্লুমেনফেল্ডের ছোট সংজ্ঞায় অনেক কিছুই বলা আঝে। তার মতে, যিনি সংবাদ সংগ্রহ করেন, সংবাদ উপযোগী করে প্রকাশ করেন এবং সংবাদ সংক্রান্ত কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনিই সাংবাদিক।

তবে একজন সাংবাদিক শুধুই সংবাদ সংগ্রহ বা লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন না। তিনি তার সমকালের ইতিহাসের চঞ্চল স্রোতের ভেতর বাস করেন আর তার গাতেই বর্তমানের টুকরো টুকরো ঘটনার বর্ণনা লেখা হয়ে ইতিহাস তৈরী হয়। আর এই দায়িত্ব পালন করতে একজন সাংবাদিকের দরকার হয় নিরপেক্ষ মমন, নির্লোভ পেশাদারিত্ব, সৃজনশীল যোগ্যতাম বাস্তবতা, ও দায়িত্ববোধসম্পন্ন দক্ষতা, অসাধারণ ও অপরিসীম অধ্যবসায়।

সাংবাদিকের গুণাবলি
উপরের সংজ্ঞার মতো সাংবাদিক হবার জন্য বেশ কিছু গুণাবলি অর্জন করতে হয়। গুণগুলো একদিনে আসার কথা নয়। সাংবাদিকতা চর্চার সময় গুণগুলো আয়ত্ব করে নিতে হয়। যিনি যত দ্রুত সব গুণ আয়ত্ব করতে পারেন, তিনি তত দ্রুত সফল সাংবাদিক হয়ে উঠেন। নিচে সাংবাদিকদের চর্চা করা উচিত এমন ১৫টি গুণ নিয়ে আলোচনা করা হয়।

পেশার প্রতি নিবেদিকপ্রাণ:
সাংবাদিকতাকে শখের বা সামাজিক মর্যাদার হাতিয়ার মনে রে এ পেশাকে ব্যবহার করার ইচ্ছায় সাংবাদিক হতে চাইলে সফল সাংবাদিক হওয়া যাবে না। ভালো সাংবাদিক হতে চাইলে এ পেশাকে ভালোবাসতে হবে। দেশ, সমাজ ও সমাজের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার জন্য এ পেশায় আসা উচিত এবং সবসময় এই কথাগুলো মনে রাখতে হবে।

কঠোর পরিশ্রমী:
সাংবাদিকের কাজের কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। যখন তখন যে কোন কাজে যেতে হতে পারে। ফলে কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা না থাকলে তিনি এ পেশায় টিকে থাকতে পারবেন না।

সময়ানুবর্তী:
একজন সাংবাদিক সময়ের প্রতি যত যতœবান হবেন, পেশাদারিত্বের দিক থেকে তিতি ততই এগিয়ে যাবেন। সময়মতো ঘটনাস্থলে বা সাক্ষাৎকারদাতার কাছে পৌছানো, সংবাদ পাবার সাথে সাথেই অফিসকে জানানো, সময়মতো দায়িত্ব পালন করা সাংকাদিকের বিশেষ গুণ।

সাহসী:
যথেষ্ট সাহসী ও নার্ভ শক্ত না হলে তার সাংবাকিতায় আসা টিক হবে না। ক্ষমতার দাপট বা পেশিশক্তির সামনে ভয়ে আড়ষ্ট হলে সত্য তথ্য কিভাবে আসবে? সাংবাদিকতা ঝুঁকি ও বিপদের পেশা। জীবন বিপন্নের হুমকি উপেক্ষা করার সাহস থাকতে হবে। সাংবাদিককে সহজে ভেঙ্গে পড়া বা পিছু হটলে চলবে না।

কৌতুহলী:
যে কোন ব্যাপারে কৌতুহল থাকতে হবে। কৌতুহল ছাড়া কোন খবরের গভীরে যাওয়া যায় না। সেই সাথে থাকতে হবে গোয়েন্দাদের মতো তীব্র পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। কী কারণে কী ঘটতে পারে এই বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও খবরের মধ্যে খবর খুঁজে বেড়ানোর নেশা থাকা জরুরী।

গন্ধ শোঁকার নাক:
সাংবাদিকের সংবাদের গন্ধ শোঁকার নাক থাকা জরুরী। সাংবাদিকের চোখ কান সবসময় খোলা রাখতে হবে। চলতি পথের অনেক ঘটনা-কথা তাকে বড় সংবাদের ইঙ্গিত দিয়ে দিতে পারে। তাই কোন ব্যাপারকেই তুচ্ছ বলে ফেলে দেয়া যাবে না। কোন ঘটনার মধ্য থেকে একজন সাংবাদিকের যদি খবর বের করে আনার দক্ষতা না থাকে, তিনি সাংবাদিকতায় সফল হতে পারবেন না।

বুদ্ধিদীপ্ত:
একজন সাংবাদিক একটি পরিস্থিতি থেকে যত দ্রুত ঘটনা আঁচ করে নিতে পারবেন তিতি তত এগিয়ে থাকেন। সাংবাদিকতার যে কোন পরিস্থিতিতে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে না পারলে, পিছিয়ে পড়তে হয়। বিশেষ করে সংবাদ সংগ্রহ ও যাচাই- এর সময় সাংবাদিকের উপস্থিত বুদ্ধি দেখাতে হয়।

ক্ষিপ্রতা:
সাংবাদিককে নির্দিষ্ট সময় বা ডেডলাইনের ভেতর কাজ করতে হয়। দ্রুততম সময় অন্যদের আগে নির্ভুলভাবে কাজ শেষ করার জন্য সাংবাদিকের মধ্যে গতি থাকতে হবে। যে ব্যক্তি নড়াচড়া করতে চায় না বা ঝটপট কাজ করতে পারে না তাকে কোন দায়িত্ব দিয়ে সময়মতো পাওয়ার আশা করা যায় না।

স্মৃতিশক্তি:
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হলে তার পক্ষে সাংবাদিকতা করা কষ্টসাধ্য। কারণ সাংবাদিককে কবে, কখন, কোন ঘটনা ঘটেছে, কে কী বলেছে তা মনে রাখতে হয়। এছাড়া মানুষের নাম, পরিচয়, ঠিকানা, টেলিফোন নাম্বার, কোন তথ্য কোথায় পাওয়া যাবে এসব বিষয় স্মৃতিতে রাখতে হয়। প্রখর স্মৃতিশক্তি ভালো সাংবাদিকের বড় গুণ।

দলনিরপেক্ষ:
সাংবাদিকককে অবশ্যই আদর্শবাদী হতে হবে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তবে সাংবাদিকতা করার সময় কোন দলের পক্ষ নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকতে পারে কিন্তু যখন তিনি সাংবাদিকতা কবরেন তখন সব বিশ্বাসের উর্ধ্বে ওঠে দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে কাজ করতে হবে।

সততা:
সততা একজন সাংবাদিকের সবচেয়ে বড় গুণ। অনেক যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলেও সতততা অভাবে সাংবাদিকের সব সম্মান ধুলায় মিশে যেতে পারে। সাংবাদিকতার পথ হচ্ছে লোভ ও প্রলোভনের পিচ্ছিল পথ। সেই প্রলোভনকে জয় করতে না পারলে কোন সাংবাদিকের পক্ষে দেশ ও সমাজের জন্য দায়িত্ব পালন অর্থহীন হয়ে পড়ে। অসৎ সাংবাদিকতা করা আর যৌনকর্মীর দালালি বা নারী-শিশু পাচারকারীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

ধৈর্য, ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধ:
অনেক সাংবাদিক নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করে মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। তাহলে তিনি কার জন্য এ পেশায় এসেছেন? সাংবাদিককে তাই হতে হবে ভদ্র, সৌজন্যবোধসম্পন্ন। অহঙ্কারী, খিটখিটে মেজাজ বা অসহনশীল ব্যক্তি সমাজের মানুষের সাথে মিশতে পারেন না। যে কোন সমাজ ও পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলার মতো ধৈর্য সাংবাদিকের থাকতে হবে।

কুটবুদ্ধিসম্পন্ন:
সংবাদ সংগ্রহের সময় সংবাদিককে কুটবুদ্ধির আশ্রয় নিতে হতে পারে। স্বার্থ হাসিলের জন্য রণকৌশল গ্রহণ করা ও তা পাল্টানোর দক্ষতা থাকতে হবে।

রস ও সাহিত্যবোধ সম্পন্ন:
সংবাদ লেখায় দক্ষতা ও সৃজনশীলতা প্রমাণ দিতে সক্ষম।