প্রেস বিজ্ঞপ্তি : সাতক্ষীরায় জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মিথ্যা হত্যা মামলায় বেমাতা ভাইসহ তার দুইপুত্রকে ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে হয়রানি, বেমাতা ভাইয়ের স্ত্রীকে হত্যা চেষ্টার মামলার আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার দুপুরে (৩০ জুলাই) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সদর থানার লাবসা ইউনিয়নের কৈখালি গ্রামের আলী হোসেন মেম্বারের স্ত্রী নাছিমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী সদরের লাবসা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। গত ১১ জুন ২০২২ তারিখে সাতক্ষীরা সদর থানার লাবসা ইউনিয়নের কৈখালি গ্রামের মৃত আনছার আলী সরদারের পুত্র আমজেদ হোসেন বাদি হয়ে আমার স্বামী আলী হোসেন, তিন পুত্র জুয়েল হোসেন, জুলফিকার ও রুবেল হোসেনের নামে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং : ২৮, জিআর নং : ৪৫৭/২০২২। পুলিশ আমার মেজো পুত্র উক্ত মামলার ১নং মিথ্যা আসামী জুয়েল হোসেনকে খুলনা থেকে গ্রেফতার করে। আমার স্বামী সহ বাকি দুই পুত্ররা বিজ্ঞ উচ্চ আদালত হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জামিন নিয়ে বিগত ১৮ জুলাই তারিখে আদালতে হাজিরা দিলে তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। সে হিসাবে আমার বাড়িতে পুরুষশূণ্য হয়ে যায়। ২৬ জুলাই আমি সহ আমার পুত্রবধূরা সাতক্ষীরা আদালতে অবস্থান করি। বিকালে যখন বাড়ি ফিরি তখন দেখি কৈখালি বাজারে আমাদের দোকান সংলগ্ন জায়গায় মৃত এছেম সরদারের পুত্র ইমান হোসেন আমাদের জায়গা দখল করে প্রাচীর নির্মাণ করছে। যদিও উক্ত বিষয়ে লাবসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আলিমের কাছে অভিযোগ দিলে তিনি ইমান হোসেনকে বলে কাজ বন্ধ করে দেন। পূণরায় উক্ত কাজে আমি সহ আমার পুত্রবধূরা তাদের নিষেধ করার ফলে ইমান হোসেন ও তার পুত্র নাঈম হোসেন গংয়েরা আমাদের উপর হামলা করে। ইমান হোসেন ও তার পুত্র নাঈম হোসেন আমার উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপ মারে। পুত্রবধূদের শ্লীলতাহানী করে তাদের উপরও হামলা চালায়। দা, অস্ত্র, লোহার বড়, বাঁশ, ইট দিয়ে হামলা চালায়। স্থানীয়রা আসলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আমাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় ২৭ জুলাই তারিখে আমার ভাই মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় ইমান হোসেন ও তার পুত্র নাঈম হোসেনের নামে মামলা দায়ের করে। যার নং : ৬৩. কিন্তু উক্ত মামলা হওয়ার পরেও তারা গ্রেফতার হয়নি। উল্টো ইমান হোসেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে ২৭ জুলাই তারিখে সংবাদ সম্মেলন করে। তাতে তিনি মিথ্যাভাবে বলেছেন “হত্যা মামলার বাদি ও স্বাক্ষীদের পরিকল্পিত মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে” এবং তার বড় ভাইকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেখানে মারপিটের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আনছার আলীকে হত্যার দায়ে আমজেদ যে মামলা দায়ের করে সেটি শতভাগ মিথ্যা। আনছার আলী সরদারের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী জন্ম সাল ১৯৪২। সে হিসাবে তার বয়স ৮০ বছর। একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধকে হত্যার দায়ে যে মামলা হয়েছে তার কোন তদন্তই করা হয়নি। কারন আনছার আলী আগে থেকেই বয়সজনিত কারনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলো। প্রকৃতপক্ষে ০৯ জুন আনছার আলীকে মারপিটের কোন ঘটনাই ঘটেনি। সে সময় আমার ভাসুরের ছোটপুত্র আব্দুর রাজ্জাকের সাথে আমার ছোট ছেলে রুবেলের সাথে কথাকাটাকাটি হয়। সেখানে আমার স্বামী আলী হোসেন মেম্বর এবং বড় পুত্র জুলফিকার ছিলেন না।
এমনকি আনছার আলীও ছিলেন না। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি আওয়াজ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনাকে হত্যা মামলা সাজিয়ে পরিকল্পিকভাবে আমার পরিবারের ৪ জন পুরুষ যথাক্রমে আমার স্বামী ও তিন পুত্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এতে ক্ষ্যান্ত হয়নি তারা। মিথ্যা মামলায় বাড়ি পুরুষশুণ্য হয়ে পড়লে ১৩ জুন রাতে আমাদের ৬০ বিঘা জমির মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে কয়েক লক্ষ টাকা মাছ হত্যা করে। অথচ এ বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তারা উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে। আমি এবং আমার পুত্রবধূরা নাকি ঘেরে বিষ প্রয়োগ করেছি। গভীর রাতে নারী হয়ে কিভাবে আনুমানিক দুই কিলোমিটার দুরের ঘেরে গিয়ে বিষ প্রয়োগ করা সম্ভব? বর্তমানে আমরা চারজন নারী বাড়িতে থাকার ফলে তারা আমাদের বিভিন্নভাবে ক্ষতি করে যাচ্ছে। কথা বলতে গেলেই মেরে রক্তাক্ত করছে, শ্লীতাহানী করছে তারা। বাড়ি পুরুষশূণ্য হওয়ায় গ্রামের কেউ আমাদের পক্ষে কথা বললে তাদেরকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে ইমান হোসেন, আমজেদ হোসেন গংয়েরা।
নাছিমা খাতুন আরো বলেন, তারা বাড়িতে আমাদেরকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে যে, যতই তাদের নামে মামলা হোক না কেনো পুলিশ কোনোভাবেই তাদের গ্রেফতার করবেনা। আমি একজন অসহায় নারী হিসেবে ওই ইমান হোসেন ও তার পুত্র নাঈম হোসেনকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে ৮০ বছরের বয়স্ক বৃদ্ধ আনছার আলী হত্যা মামলার যে মিথ্যা মামলা আমজেদ হোসেন দিয়েছে তার বিচার হোক। এছাড়া সঠিক তদন্তপূর্বক ওই মিথ্যা হত্যা মামলার দায় থেকে অব্যাহতির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।