মহানবী সা:-এর ভবিষ্যদ্বাণী এবং কনস্টান্টিনোপল বিজয়

251
কনস্টান্টিনোপল বিজয়

অনলাইন ডেস্ক: তুরস্কের প্রাচীন শহর কুসতুনতিনিয়া তথা কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন মহানবী সা:। তাই এটি বিজয়ের জন্য মুসলমানগণ অত্যন্ত আগ্রহী ও উৎসাহী ছিলেন। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু আইউব আনসারী রা: ছিলেন তাদেরই একজন। কনস্টান্টিনোপল আজো তার পবিত্র স্মৃতি বহন করে চলছে। হিজরী ৫১ সালে কনস্টান্টিনোপলে প্রথম অভিযানকালে তিনি অসুস্থ হয়ে ইন্তেকাল করলে সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। ঘটনার বিবরণ নিম্নরূপ : প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যের সুপ্রসিদ্ধ শহর ইউরোপীয়দের কনস্টান্টিনোপল এবং মুসলমানদের কুসতুনতিনিয়া ইস্তাম্বুল নামে উসমানীয় তুর্কি খেলাফতের রাজধানী হিসেবে ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।

রাসূলুল্লাহ সা: এই শহর সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের সামনে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন : “লাতাফতাহুন্নাল কুসতুনতিনিয়াতা, ফালা নে’মাল আমীরূ আমীরূহা ওয়ালানে’মা জাকাল জাইশু।” অর্থাৎ নিশ্চিতরূপে তোমরা কনস্টান্টিনোপল জয় করবে। সুতরাং তার শাসক কতই না উত্তম হবে এবং তার জয় লাভকারী সৈন্যরাও কতই না উত্তম হবে! (মুসনাদে আহমদ)।

কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের সৌভাগ্য অর্জনের লক্ষ্যে খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল থেকে অভিযান পরিচালনার স্বপ্ন দেখা হলেও হিজরী ৪৯/৬৬৯ সালে সর্বপ্রথম হযরত আমীর মোয়াবিয়া রা: কনস্টান্টিনোপলে অভিযান পরিচালনা করেন। এই অভিযানে অন্যান্য প্রসিদ্ধ সেনাপতি ছাড়াও বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা: অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে ইন্তেকাল করেন। হযরত মোয়াবিয়া-তনয় ইয়াজিদও এই অভিযানে একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

শহর অবরোধকালে হযরত আনসারী রা: অসুস্থ হয়ে পড়লে ইয়াজিদ তার খেদমতে উপস্থিত হয়ে কোনো উপদেশ আছে কি না জিজ্ঞেস করেন। আনসারী রা: বলেন : ‘আমাকে দুশমনের ভূখন্ডের যতটুকু সম্ভব অগ্রভাগে নিয়ে যাবে এবং মৃত্যু হলে সেখানেই দাফন করবে।’ এই অছিয়ত (উপদেশ) বাস্তবায়ন করা হয়েছিল এবং ইন্তেকালের পর হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা:-কে কনস্টান্টিনোপলের প্রাচীরের নিকট দাফন করা হয়। অতঃপর রোমানদেরকে সাবধান করে দেয়া হয়, যদি তাঁর কবরের কোনো ক্ষতি সাধন করা হয়, তাহলে আরবের কোনো গির্জায় কখনও ঘণ্টা ধ্বনিত হবে না।

যা হোক, শহরটি অবরুদ্ধ হলেও কখনও তা জয় করা সম্ভব হয়নি। এই অভিযানের পর বিভিন্ন সময় এই শহর মুসলমানদের পক্ষ হতে অবরোধ করার কথা জানা যায়। কিন্তু তুর্কি খেলাফতের আগে তা কেউ জয় করতে পারেনি। উসমানীয় তুর্কি সুলতান ওরখান (১৩২৬-১৩৫৯)-এর আমলে পূর্ব ইউরোপে তুর্কি বিজয়ের ফলে তুর্কিদের ইতিহাসে এক নব অধ্যায়ের সূচনা হয়।

ওরখানের ৩৩ বছরব্যাপী শাসনামলে বাইজান্টাইনি এলাকা অধিকার ছাড়াও তুর্কি রাজ্যগুলো উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথম বাইজিদ ইলদ্রিম (১৩৮৯-১৪০২)-এর আমলে প্রথমে কনস্টান্টিনোপলে অবরোধ করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পর দশ বছরের সন্ধির মাধ্যমে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এই সময় কুসতুনতিনিয়ায় একটি ইসলামী আদালত কায়েম করা হয়, যাতে একজন তুর্কি কাজী (বিচারক) নিয়োগ করা হয় এবং সেখানে একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১৩৯৭ সালে বাইজিদ কর্তৃক গ্রিক অধিকার করার পর পুনরায় কুসতুনতিনিয়া অবরোধ করেন ।

কিন্তু তৈমুরলঙ্গের সাথে সংঘর্ষের ফলে এই অবরোধও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে যায় । অতঃপর ১৪২২ সালে দ্বিতীয় মুরাদ কনস্টান্টিনোপলে ব্যর্থ অবরোধ করেন। এরপর মোহাম্মদ ফাতেহ (১৪৫১-১৪৮১) কুসতুনতিনিয়া বিজয়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং ১৪৫৩ সালের ৬ এপ্রিল অবরোধ করেন এবং মে মাসে শহরের পতন ঘটার পর শহরটি তুর্কিদের অধিকারে আসে ।

কনস্টান্টিনোপলে অভিযান চালাতে গিয়ে মুসলমানগণ বারবার প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং সফল হতে পারেননি। কিন্তু তুর্কি সুলতান মোহাম্মদ ফাতেহর সৌভাগ্য যে, তিনি সর্বপ্রথম এই শহর জয় করে মুসলিম গৌরবের এক নয়া অধ্যায় সূচনা করেন এবং মহানবী সা:-এর ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়ন করে বেহেশতের সুসংবাদ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হন।