ন্যাশনাল ডেস্ক : ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হলেও সন্তুষ্ট নন বেসরকারি রেসিডেন্ট ও নন-রেসিডেন্ট পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল শিক্ষার্থীরা (চিকিৎসকরা)। তারা চান মাসিক ভাতা ৫০ হাজার টাকা করা হোক। সে কারণে সোমবারও তারা কর্মসূচি পালন করেছেন। এদিন সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন। তাদের দাবি, ‘পাঁচ হাজার টাকা বর্ধিত ভাতা চিকিৎসকদের সঙ্গে হাস্যরস ছাড়া কিছুই না, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।’
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে চিকিৎসকরা ‘বেতন ভাতার উন্নয়ন, করতে হবে বাস্তবায়ন’, ‘আশ্বাস নয় প্রমাণ চাই, ৫০ হাজার ভাতা চাই’, ‘ক্ষুধা পেটে সেবা নয়, অধিকার চাই ভিক্ষা নয়’-এসব স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা বলেন, সাত দিনের মধ্যে আমরা প্রজ্ঞাপন নিয়ে ঘরে ফিরতে চাই। আমরা কোনো দয়া-দক্ষিণা চাই না। ৫০ হাজার টাকা ভাতা আমাদের অধিকার। ২৫ হাজার টাকা ভাতা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।’
পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবের হোসেন বলেন, ‘আমরা গতকাল (রোববার) শুনেছি, ৫ হাজার টাকা ভাতা বাড়ানো হয়েছে, এটা একটা উড়ন্ত খবর। এর কোনো সত্যতা নেই। যদি সত্যও হয়, ২৫ হাজার টাকায় আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা এমন একটা ভাতা চাই, যেটা দিয়ে পরিবার নিয়ে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারি। পাশাপাশি আমাদের চলমান কোর্সটি সুন্দরভাবে শেষ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আজকের মতো শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু রোববার আমাদের ওপর পুলিশ যেভাবে হামলা করেছে, তা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। এই অন্যায়ের বিচার আমরা চাই। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদেরও আমরা পাশে পাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজপথে আমরা দাবি আদায় করতে চাই না। টেবিলে আলোচনা করেই দাবি আদায় করতে চাই। কিন্তু আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করা হয়েছে। ৬ মাস ধরে আমরা ঘুরছি, যেখানেই গিয়েছি শুধু আশ্বাস পেয়েছি।’
পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুন্নবী বলেন, ২৫ হাজার টাকায় আমাদের ঘর ভাড়াই হয় না, আমরা পরিবার নিয়ে কীভাবে চলব। সরকার তাদের দুঃখের কথা বলছে। আমরা যে না খেয়ে আছি, চলতে পারছি না, আমাদের দুঃখের কথা কে বলবে। আমাদেরকে এমন একটা ভাতা দেওয়া হোক, যা দিয়ে আমরা পরিবার নিয়ে চলতে পারব। আমাদের কথা স্পষ্ট, দাবি না মানলে আমরা এখান থেকে যাব না।
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকেরা ৮ জুলাই কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন শুরু করেন। পরদিন ৯ জুলাই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর আগে গত ১৩ জুন বিএসএমএমইউ উপাচার্যকেও অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা জানান, ১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেন তারা। তারপরও কোনো উদ্যোগ না দেখে সর্বশেষ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করেন। রোববার সকালে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়। পরে দুপুরের দিকে বিএসএমএমইউর সব ফটকে তালা দিয়ে হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান নেন তারা।
পরে বিএসএমএমইউ থেকে বের হয়ে শাহবাগে অবস্থান করতে চাইলে পুলিশ ও চিকিৎসকদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে শাহবাগ থেকে কাঁটাবনমুখী সড়ক অবরোধ করে সেখানে অবস্থান নেন চিকিৎসকরা। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা যেমন দুর্ভোগে পড়েন, তেমনি সড়কেও যানজট তৈরি হয়।
চলমান আন্দোলনের মুখে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চিকিৎসকদের ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করেছে সরকার। রোববার (১৭ জুলাই) রাতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এই তথ্য জানায়।