আজিজুর রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি: কেশবপুরে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষরা হামলা চালিয়ে গর্ভবতীসহ ২০ জনকে গুরুতর আহত করেছে। এর মধ্যে ১০ জনকে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি আহতরা স্থানীয় চিকিৎসা নিয়েছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে উপজেলা দত্তনগর গ্রামের আব্দুল রাজ্জাক শেখের ছেলে আব্দুল হাই শেখ (২৮) মানসিক রুগী হওয়ায় সে তার পিতা ও চাচাদের দেশী দা নিয়ে তাবড় দিতে থাকে। এঘটনাকে কেন্দ্র করে আব্দুল হাইয়ের পিতা রাজ্জাক শেখ, চাচাত ভাই জামির শেখ, আব্বাস শেখ, কুদ্দুস শেখ, শনিবার রাত ৯টার দিকে আব্দুল হাইকে পিটিয়ে রক্তাক্ত যখম করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেশবপুর থানায় কোন অভিযোগ হয়নি বলে আহত আব্দুল হাই জানান । এব্যাপারে মুঠোফোনে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস সাত্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান আব্দুল হাই মানসিক রুগী। সে দেশী দা দিয়ে তার পিতা ও চাচাত ভাইদের ওপর হামলার চেষ্টা করলে আব্দুল হাইকে পিটিয়ে জখম করেছে। এদিকে পাওনা ৪০টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের গর্ভবতীসহ ১০ জন আহত হয়েছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে উপজেলার দেউলী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বিরেন দাসের সাথে প্রতিবেশী লক্ষী দাসের সঙ্গে পাওনা ৪০ টাকা নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় কথা কাটা-কাটির এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে আহত হন নান্টু দাস (২৮) তার স্ত্রী গর্ভবতী শিলা রাণী দাস (২৪) মনোতোষ দাস (৩৫) পঙ্কজ দাস (৩০) তার স্ত্রী দীবাকি দাস (২৫) বীরেন দাস (৫৫) তার স্ত্রী গীতা রাণী দাস (৪৫) ভোলা দাস (১৮) লক্ষী দাস (৮০) অরবিন্দ দাস (৪০) নারান দাস (৫০)। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেশবপুর থানায় কোন অভিযোগ হয়নি বলে আহত উভয় পক্ষরা জানান ।
অপরদিকে এসকো মিটারের ব্যাটারী চুরি করাকে কেন্দ্র করে উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের আব্দুল গণি গাজীর ছেলে ইসমাইল গাজী (২২) ও শফি গাজী ছেলে মাসুদুজ্জামান গাজী (২৫) কে মণিরামপুর উপজেলার হাসাডাঙ্গা গ্রামের তালেব মোড়লের ছেলে সুলতান মোড়লের নেতৃত্বে মধ্যকুল গ্রামের জাহাঙ্গীর গাজী, শফিকুল গাজীসহ ৭/৮ জন মিলে মাসুদুজ্জামান ও ইসমাইলকে মারপিঠ করে। এঘটনায় শফি গাজী বাদি হয়ে কেশবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে বলে আহত ইসমাইল গাজী জানান। ঘের মালিক সুলতানের কর্মচারী জানান তারা ব্যাটারী চুরি করেছে বলে আমরা বুঝতে পেরে তাদেরকে ধরে ফেলি। মাসুদুজ্জামান শিকারোক্তি দেওয়ায় তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলার রাজনগর বাকাবর্শি গ্রামের ইছাক আলী গাজীর ছেলে মটর সাইকেল চালক আনারুল ইসলাম গাজী (৪৫) কে তার আপন বুনাই মৃত সাত্তার মীরের ছেলে ওমর ফারুক মীর আনারুলকে শনিবার রাত ৯ টায় হঠাৎ করে লাঠি দিয়ে রাজনগর বাকাবর্শী নতুন হাট বাজারে তাকে একা পেয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেশবপুর থানায় কোন অভিযোগ হয়নি বলে আহত আনারুল জানান । এব্যাপারে ওমর ফারুকের বক্তব্য নেওয়ার জন্য বারবার মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অপরদিকে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই গুরুতর আহত হয়ে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। উপজেলার পরচক্রা গ্রামের সাজ্জাত সরদারের ছেলে ডাক্তার বাহারুল সরদার (২৫) সাংবাদিকদের জানান দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল আমার বড়ভাই জাহিদুল সরদারের সাথে। এরই জের ধরে বুধবার রাত ১১ টার দিকে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার উপর আসলে ওত পেতে থাকা আমার ভাই জাহিদুল সরদার আমাকে পেছন থেকে হঠাৎ করে টর্চলাইট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এসময় আমি বড় ভাইকে মারার ঘটনা জিঞ্জাসা করলে সে আমাকে বিভিন্ন ভয়-ভিতিসহ হুমকি দিয়ে বলে যদি তুই বেশি বাড়াবাড়ি করিস তাহলে তোকে হত্যা করে ফেলব বলে হুমকি দেয়। এব্যাপারে মুঠোফোনে জাহিদুল সরদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান আমার ভাইয়ের সঙ্গে কোন জমি-জায়গা নিয়ে বিরোধ নেই। আমার ছোট ভাই বাহারুল সরদার ওই দিন রাতে আমার মা ও খালাকে মারপিঠ করেন। তারপরও সে আমার পিতার ওপর চড়াও হয়ে ওঠে। সেজন্য আমি ছোটভাইকে ৩/৪ টা ঘুষি মেরেছি। তাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। পরিকল্পিতভাবে যে হত্যার হুমকির বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এদিকে কেশবপুরে চলাচলের রাস্তাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মহিলাসহ ২ জন আহত হয়ে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। জানাগেছে উপজেলার বড়েঙ্গা গ্রামের আনন্দ বিশ্বাসের সাথে একই গ্রামের কওছার খাঁনের সঙ্গে চলাচলের রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। আনন্দ বিশ্বাসের স্ত্রী অসিমা বিশ্বাস (৩০) সাংবাদিকদের জানান বুধবার বিকালে বাড়ি থেকে পূজা দেখতে যাওয়ার পথে চলাচলের রাস্তা নিয়ে কওছার খাঁনের ছেলে জাকির খাঁন আমার উপরে হামলা করে আমাকে গুরুতর আহত করে। জাকির খাঁন জানান আমাকেও অসিমা বিশ্বাস হামলা করে আহত করেছে। এদিকে উভয় পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় শান্তিপূর্ণভাবে মিমাংসা হয়েছে বলে জাকির খাঁন জানান। অন্যদিকে মণিরামপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষরা মনোয়ারা বেগম (৬০) নামে এক বৃদ্ধকে মারপিঠ করে গুরুতর আহত করেছে। আহত ওই বৃদ্ধ কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। মণিরামপুর উপজেলার রতনদিয়া গ্রামের আঃ রহিম শেখের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম সাংবাদিকদের জানান দীর্ঘদিন ধরে একই গ্রামের মৃত খোদাই শেখের ছেলে ইয়াছিন আলী শেখের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে বুধবার বিকালে ইয়াছিন আলী শেখ আজগর আলী শেখ রবিউল শেখ ইব্রাহীম শেখ মিলে আমাকে লাঠি দিয়ে মারপিঠ করে গুরুতর আহত করে। এসময় লাভলী বেগম (৩০) নামে ঠেকাতে আসলে প্রতিপক্ষরা তাকেও মারপিঠ করে। লাভলী বেগম স্থানীয় চিকিৎসা নিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মণিরামপুর থানায় কোন অভিযোগ হয়নি বলে আহত মনোয়ারা বেগম জানান। এব্যাপারে ইয়াছিন আলী শেখের বক্তব্য নেওয়ার জন্য বারবার মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে আব্দুল হাই, নান্টু দাস, মনোতোষ দাস, আনারুল গাজী, মনোয়ারা বেগম, বাহারুল সরদার, ইসমাইল গাজী, জাকির হোসেন, অসিমা বিশ্বাস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে। মাসুদুজ্জামানকে খুলনা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা স্থানীয় চিকিৎসা গ্রহণ করেছে।