কৃষকের প্রতিক্রিয়া ‘সরকার যদি মনে করে চাষি দরকার নাই, তাহলে নাই’

209
কুষ্টিয়ার ঝালুপাড়ার কৃষক রবিউল করিম জানান, সকালে ঘুম থেকে উঠেই তিনি জানতে পারেন, ৮২ টাকার ডিজেল ১১৫ টাকা হয়ে গেছে ছবি: প্রথম আলো

দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া শহর বাইপাস মাঠের ভেতরের মেঠোপথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন কৃষক রবিউল করিম। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরতলির ঝালুপাড়া এলাকায়। নিজের জমিতে সেচ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। কাঁধে থাকা কোদালের মাথায় একটি তেলের বোতল ঝুলছিল। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, ‘রাতে ঘুমাই আছি, কিছুই জানিনি, সকালে উঠি দেখছি তেলের বাজার বৃদ্ধি। চাষির তো সমস্যা। তেলের দাম বাড়ায় উৎপাদন কীভাবে করব। বাজারে ফসল বিক্রি করতি গেলি দাম পাব নানে। ঘরের থিইকি টাকা নি যা খরচ করব, তাতে দাম উঠপি নানে।’

কৃষক রবিউল অভিযোগ করেন, ‘কিছু মুনাফাকারী লোকের জন্য চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী, কিন্তুক ধানের বাজার ঊর্ধ্বমুখী না। এতে তো চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার যদি মনে করে চাষিদের বাঁচাবে, তাহলে বাঁচাতে পারে। আর যদি সরকার মনে করে চাষি দরকার নাই, তাহলে নাই।’

সকালে এই কৃষক দোকান থেকে ১১৫ টাকা দরে ৫ লিটার ডিজেল কিনে ধানখেতে সেচ দেন। কদিন আগে একই তেল ৮২ টাকা দরে কিনেছিলেন তিনি।

একই মাঠে ধানের চারা রোপণ করছিলেন কৃষক আজিবর রহমান। এক বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে বাড়ি ফিরছেন তিনি। ঠিকমতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার সম্পূর্ণ সেচের পানিতেই ধানের চারা রোপণ করতে হচ্ছে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘কদিন আগেই সারের দাম বাইড়লো, এখন আবার তেলের দাম বাড়াইলো। আমরা তো কোনো সাইডই (দিক) পাচ্ছিনে। আমার তো লচ (ক্ষতি) হইয়ি যাচ্ছে। কৃষকমন্ত্রী কোনো খবর গনে না। আমরা কীভাবে বাঁচপো। আমারতো বাঁচার একটা লাইন দিবি। কিন্তু তারই তো কোনো পদক্ষেপ নেই।’

কৃষক আজিবর রহমানের অভিযোগ, ‘শুধু ব্যবসায়ীদের দিকে দ্যাগছে, চাষির জন্যিই কি? দ্যাশতো চলছে কৃষকের মাধ্যমে। খাদ্যদ্রব্য কারা আবাদ করি দিচ্ছে, কৃষক দিচ্ছে। কিন্তু তারা তো (কৃষক) নিচের দিকে দাবি (পথে বসে) যাচ্ছে। আমরা তো দাবি যাচ্ছি। আমরা শুধু খাইটিই যাচ্ছি, কুনু লাভ পাচ্ছিনে। কিছু বলার নাই। কাকে কী বলব।’

কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আবাদ-পানিতো বিরাট ব্যাপারস্যাপার হয়া যাচ্ছে। ত্যাল কিনবো কি কইরি। অসম্ভব হয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন ত্যাল (ডিজেল) লাগছে ২৫-৩০ লিটার। দাম যদি সরকার না কমায়, তাইলে আবাদসাবাদ বাদ দিই ঘরে উঠি যাওয়া লাগবি।’

উচ্চমূল্যে তেল কিনে চাষাবাদ করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার বলে মনে করেন কবরবাড়িয়া গ্রামের কৃষক সাম চাঁদ। তিনি বলেন, ‘সারের দাম কমাতি হবি, তেলের দাম কমাতি হবি। ৪০ বিঘি জমি চাষ করি চলি। কিন্তু এইগুলোর দাম যদি না কমায় তাহলে চাষ করা সম্ভব না। বেশি দামে উৎপাদন কইরি সিরাম দাম মেলে না। আসলে খুবই ক্ষতির মধ্যে আছি।’
সংবাদ সংগ্রহ : প্রথম আলো