করোনায় আশাশুনিতে থমকে গেছে দৈনন্দিন রোজগার

559

এম এম নুর আলম, আশাশুনি ।। আশাশুনি উপজেলা ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ উপজেলায় প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের মানুষের বসবাস। এর মধ্যে বিপুলসংখ্যক লোক কৃষি কাজ ও মাছ চাষ করে জীবীকা নির্বাহ করেন।

তবে প্রাণঘাতী (কোভিড-১৯) করোনা ভাইরাস সংক্রমনের আতঙ্কে থমকে গেছে মানুষের দৈনিন্দন কর্মযজ্ঞ। বন্ধ রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। শ্রমিকরা এখন বেকার হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। এতে জীবীকার তাগিদে অনেকেই কাজের সন্ধানে বিভিন্নস্থানে ঘোরাঘুরি করছেন। অনেকেই এখনো পাইনি সরকারের কোনো ত্রাণ সহযোগিতা। জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাঁধার মুখে পড়ছেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে মাইকিং করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ করে যাচ্ছেন। উপজেলা জুড়েই চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও সেনা সদস্যদের টহল। স¤প্রতি আশাশুনির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এধরনের বিভিন্ন চিত্র চোখে পড়েছে। কাদাকাটি, দরগাপুর, শোভনালী এলাকায় বেশ কিছু শ্রমিক বলেন, তাদের সঞ্চিত অর্থ ক্রমেই শেষ হয়ে আসছে। সংসার চলবে কীভাবে এমন দুচিন্তায় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। স্থানীয় ইজিবাইক চালক, মটরসাইকেল চালক, কৃষিশ্রমিক, মৎস্য শ্রমিক, সেলুন ব্যবসায়ীসহ পাওয়ার যোগ্য এমন অনেকে এখনো পায়নি ত্রাণ সামগ্রী। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে এরই মধ্যে এগার হাজার পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এর সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানানো হয়েছে।

উপজেলার সব ইউনিয়নের বাজার গুলোতে দোকানপাট এখনও স্বাভাবিকভাবে খুলছে না, অনেক দোকান এখনও বন্ধ রয়েছে। ফলে এলাকার খেটে খাওয়া মানুষের দৈনিন্দন আয়ও থমকে গেছে। সবার মাঝে এক অজানা আতঙ্ক। তারপরও পুলিশের সদস্যরা মাইকিং করে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। অকারণে বাইরে ঘোরাফেরা না করার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে। উপজেলার ব্যস্ততম বড়দল বাজারে দেখা গেলো প্রায় থমথমে এক নিস্তব্ধ পরিবেশ। প্রতিদিনকার ব্যস্ততম এই বাজারে সরকার নির্ধারিত কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যতিত অন্য দোকানপাট অধিকাংশই বন্ধ আছে। তারপরও কাজের সন্ধানে বাইরে বের হয়ে অনেকেই পুলিশের বাঁধার মুখে পড়ছেন। বুধহাটা ইউনিয়নের বৈউলা গ্রামের ভ্যানচালক জানান, মাত্র ৯০ টাকা আয় করেছি। এতে আমার সংসার চলবে না। আগে এই সময়টাতে ৩০০ থেকে ৪০০টাকা আয় করতে পারতাম। এখন তা হচ্ছে না।

বুধহাটার দায়িত্বে থাকা এসআই হাসানুজ্জামান বলেন, মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে মাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই যেন লোক সমাগম হতে না পারে আমরা সেদিকটা খেয়াল রাখছি।

আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবদুস সালাম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ সদস্যরা জনসমাগম ঠেকাতে এবং অন্য এলাকার লোকজন যাতে আমাদের উপজেলায় না আসতে পারে সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে। আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা বলেন, খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক পরিবারকে চালসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী এগার হাজার একশত পরিবার কে দেওয়া হয়েছে। এর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে আরো বৃদ্ধি করা হবে।