ন্যাশনাল ডেস্ক:
ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের বিভিন্ন অনলাইন সেবার মাধ্যমে সারা দেশে টাকা স্থানান্তরের খরচ প্রায় ৭২ শতাংশ কমানো হয়েছে। আগে টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হতো। এখন তা কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের অনলাইন সেবাকে জনপ্রিয় করতে এবং টাকা স্থানান্তরের খরচ কমাতে সার্ভিস চার্জের হার কমানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এটি বুধবার ডাক বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছেছে।
সূত্র জানায়, এই সিদ্ধান্ত অচিরেই কার্যকর হবে। এটি ইতিমধ্যে ডাকঘরের শাখা অফিসগুলোতে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সারা দেশে অনলাইনের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর যেমন সহজ হবে, তেমনি খরচও কমবে। উপকৃত হবেন গ্রাহকরা, বাড়বে টাকা স্থানান্তর। ফলে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে টাকার সঞ্চালন বেড়ে যাবে, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরও শক্তিশালী করবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহাপরিচালক প্রশান্ত কুমার মণ্ডল বলেন, কম খরচে টাকা স্থানান্তরের জন্য জনগণকে সুযোগ দেয়ার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে কম খরচে গ্রাহকরা ভালো সেবা পাবেন। সেবার পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
সূত্র জানায়, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের অনলাইন মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস (ইএমটিএস), মোবাইল মানি অর্ডার সার্ভিস, পোস্ট ই-সেন্টার সার্ভিসসহ অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রধান করে।
সারা দেশে ডাকঘরের প্রায় ১০ হাজার শাখা রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে শাখা রয়েছে। সব শাখাকে ইতিমধ্যে অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে। এসব শাখার মাধ্যমে আগে প্রতি মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকা স্থানান্তর হতো। এর পরিমাণ এখন বেড়ে যাবে। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে স্থানান্তর হচ্ছে প্রতি মাসে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ই-মানি অর্ডারের মাধ্যমে সর্বনিু ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা স্থানান্তর করতে এখন থেকে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ নেয়া হবে। এর মধ্যে সর্বনিু সার্ভিস চার্জ রাখা হয়েছে ১০ টাকা। আগে ছিল ১৫ টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে ১০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠাতে খরচ হবে ১০ টাকা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ নেয়া হয় ১ দশমিক ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি হাজারে ১৮ টাকা।
এটা এজেন্টগুলো প্রতি হাজারে ২০ টাকা নিয়ে থাকে। এই হিসাবে ১০ হাজারে নেয়া হয় ২০০ টাকা। সেটা ডাকঘর সেবার মাধ্যমে স্থানান্তর করলে ফি লাগবে ১০ টাকা। এর আগে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছিলেন, মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বিপরীতে যে চার্জ নেয়া হচ্ছে এটি গ্রাহকদের গলা কাটার মতো। এই চার্জ অবিলম্বে কমানো উচিত। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
সূত্র জানায়, ডাকঘরের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা বা এর বেশি পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর করা যাবে। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এত টাকা স্থানান্তর করা যায় না। এসব টাকা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহক যে কোনো ডাকঘরের শাখা থেকে নগদ আকারে তুলতে পারবেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, টাকা স্থানান্তরের খরচ যত বেশি কমানো যাবে লেনদেন তত বেশি হবে। লেনদেন বেশি হলে এটি দেশের জিডিপিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ফলে লেনদেন সহজ করার ব্যবস্থা করলে সেটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।
এদিকে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর করতে নিজের অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। কিন্তু ডাকঘরের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর করতে গ্রাহকের কোনো অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন নেই। শুধু প্রেরক ও প্রাপকের মোবাইল নম্বর ও পরিচিতি সংরক্ষণ করা হয়। এর বাইরে বাড়তি কোনো তথ্যের প্রয়োজন পড়ে না।