স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকের ধান কেটে রাতারাতি হিরো! নায্য মূল্য নেই কৃষকের ধানে

19
জাবের হোসেন
জাবের হোসেন

মোঃ জাবের হোসেনঃ দেশের বোরো মৌসুমের বেশিরভাগ ধান পেকে গেছে।সেই সাথে ধান কাটা প্রায় কমবেশি সব জায়গায় শেষ।
এই কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে রোজায় থেমে নেই কৃষকের ধানকাটা।তবে কৃষকরা সে ধান শ্রমিক সঙ্কটে ঘরে তুলতে পারছেন না ঘরে। শ্রমিকের মূল্য বেশি, অনেক এলাকায় পাওয়াই যাচ্ছে না। আবার অনেক কষ্টে ধান ঘরে উঠালেও ধান বিক্রি করে দেয়া যাচ্ছে না শ্রমিকের মূল্য। বর্তমান বাজারের মূল্য হিসেবে দেখা গেছে এক মণ ধান বিক্রি করে এক কেজি গরুর মাংস কেনার দাম হচ্ছেনা।

ধানের মূল্য নিয়ে যখন এই অবস্থা তখন বার বার হতাশা নিয়ে জমিতে নুয়ে পড়া ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে আফসোস বাড়ছে কৃষকদের। বোরো বাম্পার ফলন হওয়ার পর দাম নিয়ে একদিকে বাড়ছে হতাশা অন্যদিকে ভবিষ্যতে নিজের প্রয়োজনের বেশি ধান উৎপাদন করবে কিনা তা নিয়েও ভাবছে চাষীরা।

চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের ধানের প্রকৃত দাম না পাওয়ায় অনেক জায়গায় কৃষকেরা নিজের ধান ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ আবার মানববন্ধন করছে। তাতে কতটুকু লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা? বড়জোর বিনামূল্য তাদের ধান কেটে দিচ্ছে কোথাও কোথাও।

এক কেজি ধানের মূল্যের থেকে এক লিটার পানির দাম বেশি! এই যদি হয় কৃষিপ্রধান দেশে কৃষকদের অবস্থা, তাহলে কৃষকরা বাঁচবে কীভাবে? অনেকেই স্লোগান দেয়, “কৃষক বাঁচলে কৃষি বাঁচবে,আর কৃষি বাঁচলে দেশ বাঁচবে”।কিন্তু বাস্তবে এই স্লোগানের যৌক্তিকতা কতটুকু সেটি বর্তমান মৌসুমে কৃষকদের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে। দেশের চাহিদার তুলনায় ধান উৎপাদন বেশি হয়েছে, এজন্য যদি ধানের দাম কম হয়।তাহলে কেনো এই ভরা মৌসুমেও ভারত থেকে চাল আমদানি করছে সেটি আমার বোধগম্য নয়।

কোথাও কোথাও স্বেচ্ছাশ্রমে গ্রামের যুবক,সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারি,রাজনীতিবিদরা কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন।কিন্তু এটা নিছক নিজেকে হাইলাইটস্ করার ধান্দা ছাড়া কিছুই না। কৃষকের ধান বিনামূল্যে কেটে দিয়ে তাতে কৃষকরা কতটুকু লাভবান হচ্ছেন? তার থেকে বেশি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয়ে সেই ব্যক্তি ভাইরাল হচ্ছে।কিন্তু কৃষকের কোনো লাভই হচ্ছেনা।যেখানে দেশের ৮০ ভাগ মানুষ কৃষি কাজের সাথে জড়িত সেখানে কেনো বাম্পার ফলনের পরও কৃষকেরা নায্য মূল্য পাচ্ছেনা? সরকারীভাবে ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান কেনার নির্দেশনাও দিয়েছে সরকার থেকে।কিন্তু বাস্তব কি সেটি লক্ষনীয়? চোখে পড়ার মত তো নয়ই, উপরোন্ত ভোগান্তি।

আজ এই সোনার বাংলায় কৃষকেরা কেনো ধানের নায্য মূল্য না পেয়ে বলবে, “করবোনা ধানের চাষ,দেখবো তোরা কি খাস “। এজন্যই কি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে কৃষকেরা যুদ্ধে আত্নহুতি দিয়েছিলো? এটা কি সোনার বাংলা গড়ার কারিগরদের পাওনা ছিলো?

দেখলাম কয়েকদিন আগেই খুব ঘটা করেই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদেরকে কৃষিমন্ত্রী সরকারী গাড়ি তুলে দিয়েছেন। কৃষকের কাজ তদারকি করার জন্য যাদেরকে গাড়ি দেয়া হলো।সেই কৃষকদের জন্য কি করা হলো? কিছুই তো করা হলোনা। কেনো পাচ্ছেনা নায্য দাম,কেনোইবা ভরা মৌসুমে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে হবে?

কথায় বলে, “কারোর সর্বনাশ, আর কারোর পৌষ মাস “। গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে,দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে কৃষকেরা নায্য মূল পাচ্ছেনা।কিন্তু তাদেরকে যারা তদারকি করার কথা তারাই এসি গাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।মাঠে কৃষকেরা কেঁদে মরছে,অপরদিকে দু-একজন বিনামূল্যে কৃষকের ধান কেটে দিয়ে রাতারাতি হিরো বনে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে কৃষকেরা ধান চাষ করবে কিনা সেটি এখন ভাববার বিষয়।তাই এখন যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হয় তাহলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এর ক্ষতিকর প্রভাত পড়বে।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক,লাল সবুজের কথা