সামাজিক মূল্যবোধ কোথাই?

50

মাসুম বিল্লাহঃ আজকের পৃথিবীতে কেন মানুষের এত অধঃপতণ। কেন এত যুদ্ধ সংঘাত,আমাদের তথা মানুষের কিসের এত অভাব? শিক্ষার, নাকি নৈতিকতার?

আসলে আমরা সামাজিক মূল্য বোধ হারিয়ে ফেলেছি।আসলে আমরা একে অপারের ভালো দিকটা দেখতে চাইনা। মানুষের বিপদের সময় এগিয়ে আসতে চাইনা।সামাজিক স্বার্থের কাছে আমরা মানুষিকতা অর্থাৎ মনু সত্যকে বিকৃত করি।

আমরা এখন হয়ে গেছি রাজনীতি কেন্দ্রিক।রাজনীতি ছাড়া কথা বলতে চাইনা।রাজনীতির কারনে সত্যকে অসত্য করে ফেলি।আমরা কি পারিনা রাজনীতির বাইরে থেকে দেশকে সেবা করতে।দেশের মানুষের সেবা করতে।আমি কিন্তু রাজনীতি করতে নিষেধ করছিনা,বলতে চাচ্ছি রাজনীতির চেতনার বাইরে থেকে,রাজনীতির কূট কৌশল ছাড়াও দেশ ও দশের সেবা করা যায়।

আমরা বক্তৃতা ভালোভাবে দিই! নিতি বাক্য শোনায়।আমরা একটু ভেবে দেখি কবি বলেছেন (আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি বাধি তার ঘর……) শুধু কবিদের কথা দিয়ে মাইক কাপিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করেন অনেক নেতারা। নিজেরা পালন করেন না নীতি বাক্য।আসলে মানুষকে ভালোবাসতে হলে, মানুষের সেবা করতে হলে ত্যাগকে স্বীকার করতে হবে, ভোগকে নয়।

আর ত্যাগকে স্বীকার করতে হলে আমাদের প্রতিহিংসা ছাড়তে হবে।

আসল কথা হলো শিক্ষিত হতে হবে।শুধু পুথিগত জ্ঞান নিয়ে খুশি থাকলে চলবেনা।

একটি গল্পবলি, একজন স্বশিক্ষিত লোক তার নিজের চেষ্টায় বাড়ির আশে পাশে যে পতিত জায়গা পড়ে আছে সেখানে সবজির চাষ করে।বাড়ির পাশের ডোবাটাকে কেটে মাছ চাষ করে এবং তা দিয়ে তার পরিবারের চাহিদা মেটায়।দেশের অর্থীনিতিতে বিরাট অবদান রাখে। এবং তার কাঁচা বাজারের জন্য, মাছের জন্য বাড়তি অর্থ ব্যায় করা লাগে না।

এখন যদি পাশের অর্কমন্য চাটুকার ব্যক্তিরা যদি উক্ত লোককে কৃপন বলে।তখন কেমন শোনায়।

আসলে সমাজে এক ধরনের মানুষ আছে যারা শুধু অন্যের কুৎসা রটনা করে বেড়ায়।এই ধরনের কুচক্রী মন-মানুষিকতা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।

কবি বলেছেন, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবো,,,,, আমরা একে অপারের প্রতি প্রতিহিংসা করব না।সব সময় নেতিবাচক দিক না দেখে ইতিবাচক দিক দেখতে হবে।

ভালো কাজকে ভালো বলতে হবে সে যে দলের হোক না কেনো। ভালোকে স্বাগত জানাতে হবে।

ভালোকে অনুসরণ করতে হবে ভালোকে ভালোবাসতে হবে।আমাদের সামাজিক মূল্যবোধটা আমরাই হারিয়ে ফেলেছি।আমরা কি পারিনা নিজ উদ্যোগে ভাঙ্গা সমাজটাকে জোড়া লাগাতে? আমরা কি পারিনা আমাদের অবস্থান থেকে বিপন্ন মানুষের সাহায্য করতে। অসহায়ের পাশে দুই হাত বাড়িয়ে দিতে।

মানুষকে ভালো বাসতে হলে টাকা পয়সা লাগেনা।লাগে শুধু মানুষকে ভালোবাসার মত একটু ভালো মন।শুধু অর্থ দিলেই যে মানুষের সাহায্য করা হয় এমন ধারণা আমাদের সমাজে রয়েছে!পুরাতন কুসংস্কার, আর ধর্মীয় গোড়ামীর কারণে আমাদের এত অধঃপতন। আমাদের সমাজে কেও যদি পুর্ণ বয়স্ক ব্যাক্তি যদি বিবাহ না করে তাহলে আমরা তাকে কী বলি? ব্যার্থ প্রেমিক অথবা ছেকা খেয়েছে! আসলে আমরা তার পারিবারিক অবস্তা জানতে জাইনা।আমরা তার মানুষিক অবস্থা জানতে চাইনা। শুধু তাকে উপহাস করার জন্য ব্যাস্ত হয়ে যায়।

একজন ছাত্র যদি তার কাঙ্খিত পরীক্ষার ফলাফল একটু খারাপ করে ফেলে। আমরা তাকে নির্বোধ বলি।

আমরা কখনো ভাববার চেষ্টা করিনা সেই ছাত্রের বাড়িতে পাঠের পরিবেশ কেমন ছিল।তাকায়না তার ভিতর সৃজনশীল প্রতিভা রয়েছে।কি প্রতিভা আছে সেটাও জানতে চাইনা।শুধু তার পরীক্ষার ফলাফল নিয় চাপাচাপি করে থাকি। আমরা কি পারিনা তার চাপা পড়া প্রতিভাকে একটু স্বাগত জানাতে। আসলে শিক্ষিত হলেই যে জ্ঞাণী হবে সে কথা বলা মুশকিল। আমাদের জাতীয় কবি, বিশ্বকবি এরা কিন্তু একাডেমিক উচ্চ শিক্ষিত ছিলোনা।মরমি কবি লালন শাহ কোন স্কুলেই পড়েনি অথচ তাদের জ্ঞান কত উর্বর।

এখান থেকে আমাদের নিন্দুকদের শিক্ষা নিতে হবে যে আমরা নিন্দা করব ইতি বাচক, নিতিবাচক নয়।আমরা যদি যার যার অবস্থান থেকে একে অন্যের দিকে কাদা ছড়াছড়ি না করে।একে অন্যের পেষাকে শ্রদ্ধা করি।রাজনিতিকে দর্শন হিসাবে মানি, একে অন্যের প্রতিভাকে উৎসাহিত করি তাহলে আমাদের সামাজিক অবক্ষয় ঘটতনা।আমাদের মাঝে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের সূর্য উদিত হলেই একটি সুখি ও সমৃদ্ধি সমাজ বিনির্মান করা সম্ভাব।

লেখক: সাংবাদিক