সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় জীবন যুদ্ধে সফলতা অর্জনকারী পাঁচ জয়ীতা নারীর জীবনের গল্প

55

নিজস্ব প্রতিনিধি: দুঃখ্য কষ্ট, ব্যার্থ্যততাকে পিছনে ফেলে সফলতার মুখ দেখেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৫নারী। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’’ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় ৫টি ক্যাটাগরীতে সফল নারীদের খুঁজেবের করে সম্মাননা প্রদান করা হয়। আর এতে তৃণমূল থেকে উঠে আসা নারীদের জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত স্বীকৃতি তার নিজের এবং অন্যান্য নারীদের জন্য আত্মতৃপ্তির ও অনুস্মরনীয়। বিভিন্ন উপজেলায় এ কর্মসূচীর আওতায় জীবনযুদ্ধে নারীদের খুঁজে বের করে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করা হয়।

২০১৮ সালের ০৯ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবসের সম্মাননা পাওয়া এবং সাতক্ষীরা সদর উপজেলা হতে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ০৫ জন জয়িতা এবং জেলা পর্যায়ে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ ০৫ জন জয়িতার জীবন কাহিনী।

এর মধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জন করেছেন কাটিয়ার মৃত মোকছেদুর রহমানের স্ত্রী আম্বিয়া সুলতানা। স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর হতাশা আর অন্ধকার নেমে আসে তার জীবনে। এরপর সে সাতক্ষীরার নবজীবন পলিটেনিক ইন্সটিটিউট হতে দর্জি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কাজ শুরু করে। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে বাস্তব জীবনে কাজ শুরু করেন আম্বিয়া। আর দর্জি কাজের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চালিয়েও দুই ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বড় ছেলে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে এবং ছোট ছেলে সাতক্ষীরার দি অক্সফোর্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলে কেজি শ্রেনিতে পড়েন। তিনি চান প্রতিটি বাবা-মায়ের মতো তার সন্তানদের সমাজে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে। তিনি একজন দক্ষ দর্জি প্রশিক্ষক এবং বর্তমানে তিনি ০২ জন মহিলাকে বিনামূল্যে দর্জি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন শহর বানু। সে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত মতিয়ার রহমান ও আয়েশা খাতুনের কন্যা। তিনি একজন মহিলা ইউপি সদস্যা এবং তালাকপ্রাপ্ত নারী। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তৃণমূল পর্যায়ে জনগনের জন্য ভিজিডি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও সরকারের সকল অনুদান সঠিক ভাবে বিতরণ করে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ভুমিকা রাখছেন।
শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী মনিরা খাতুন। সে শিক্ষা ও চাকুরীর মাধ্যমে জীবনের সফলতা ফিরে পেয়েছে। সে সোনারডাঙ্গা গ্রামের জিয়ারুল মোড়লের স্ত্রী। মনিরা খাতুন সাতক্ষীরা দিবা নৈশ্য কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। অনেক বাঁধা বিপত্তির মধ্যে দিয়ে বি.এ পাশ করার পর বর্তমানে একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। একই সাথে খুলনা বি.এল কলেজে ভর্তি হয়ে এম.এ অধ্যায়নরত আছেন।

একজন সফল জননী জাহানারা খাতুন। তিনি কামার বায়সা গ্রামের চাঁদ আলীর স্ত্রী এবং তারাভান বিবির কন্যা। তার স্বামী একজন দিনমজুর। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে চেষ্টা করে দুইটি সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন তিনি। বর্তমানে বড় ছেলে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন এবং ছোট ছেলে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছেন।

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নব উদ্দ্যমে জীবন শুরু করেছেন সরিফা বেগম। সে তালতলা গ্রামের হাফিজুর রহমানের স্ত্রী এবং তানজিলা বেগমের কন্যা। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে যৌতুকের কারণে নানান নির্যাতনের শিকার হন সরিফা। একপর্যয়ে স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চলে আসেন বাপের বাড়ীতে। এরপর সে পুনরায় লেখাশুরু করে স্নাতক পাশ করে। পরে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ দুই বছরের জন্য ন্যাশনাল সার্ভিসে যোগদান করে।

এছাড়া ব্র্যাক থেকে ৫০,০০০ টাকা ঋণ নিয়ে ২টি গরু ক্রয় করে সেটি লালন-পালন করছেন। বর্তমানে তার গোয়ালে তিনটি গরু আছে। যার আনুমানিক ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকার মালিক সরিফা।

বর্তমানে উক্ত ৫ নারীরা জীবন যুদ্ধে হার না মেনে নিজেদের জীবনমান উন্নয়ন করে সমাজে অবদান রেখে চলেছে। এমনকিত তাদের দুঃখ, কষ্ট মুছে গিয়ে নতুন জীবনের সূচনা হয়েছে।