সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

409
সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ  সাতক্ষীরায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে আনন্দঘন পরিবেশে রং বেরংয়ের বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে উদযাপিত হলো সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার আট বছর পূর্তি ও নবম বছরে পদার্পন দিবস। শনিবার শিশু কিশোরদের কলকাকলিতে উৎসবমূখর হয়ে ওঠা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন অতিথিবর্গ, অভিভাবক, শিক্ষকবৃন্দ ও পরিচালনা পরিষদের সদস্যগন।

মধ্য অগ্রহায়নের মৃদু শীতের আবহে মিষ্টি রোদের মধ্যে ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষকরা সাইকেল র‌্যালি বের করে জন্মদিনের ভালবাসা ছড়িয়ে দেয়। শহরের আমতলা স্কুল প্রাঙ্গন থেকে মুন্সিপাড়া ঘুরে সুলতানপুর হয়ে সদর থানা মোড় পেরিয়ে ফিরতে থাকা সাইকেল র‌্যালিতে অংশ নেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান। বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পৌছাতেই তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এর আগে বিদ্যালয় মঞ্চে অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকা খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. কামরুল ইসলাম ও খ্যাতনামা গ্রাফিক্স শিল্পী নুরুজ্জামান ফিরোজ সাইকেল র‌্যালির উদ্বোধন করেন।

নৃত্যগীতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরুতেই কেক কেটে অতিথিরা জন্ম দিনের আনন্দ শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। এ সময় পুস্প বেলুনে নতুন করে শোভিত হয়ে ওঠে সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গন।
স্কুলের পরিচালক আলাউদ্দিন ফারুকি প্রিন্স তার সূচনা বক্তব্যে অতিথিদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তিনি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কৃতিত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন আমরা শিশু কিশোরদের মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার কারিগরের দায়িত্ব পালন করছি।

বিশিষ্ট সাংবাদিক সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য সুভাষ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তুতায় সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান বলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আর এই ডিসেম্বরের প্রথম দিনেই বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু করার মধ্য দিয়ে শহীদ ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করা হয়েছে। এই ডিসেম্বর যেমন ছিল আমাদের বিজয়ের মাস তেমনি এই ডিসেম্বরে জন্মলাভ করা বিদ্যালয়টি জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার লাভ করে সকল বিষয়ে বিজয়ী হয়ে উঠেছে। আগামিতে আরও বিজয় এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিনিয়ে আনতে পারবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন তাদের লেখাপড়ায় আরও মনোযোগী হতে হবে ।

তাদেরকে সুনাগরিক হয়ে উঠতে হবে। কেবলমাত্র পরিক্ষায় ভাল ফলাফল করাটাই জরুরি নয় , জরুরি হলো সাথে সাথে একজন সুনাগরিক হয়ে ওঠা। তিনি বলেন এই বিদ্যালয় একদিন বাংলাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের পর্যায়ে উঠে যাবে এমন প্রত্যাশা আমার। তিনি জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই বিদ্যালয়ে শিশু কিশোরদের নিয়ে আরও একটি শিক্ষামূলক আনন্দঘন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগ্রহী বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তার হাতে তুলে দেওয়া হয় বিদ্যালয়ের স্মারক ক্রেস্ট।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কামরুল ইসলাম বলেন বিদ্যালয়টির জন্মদিনে আমি শিশু কিশোরদের সাথে খেলতে এসেছি। অতীতের সোনালী দিনগুলি আমরা হারিয়ে ফেলতে চাইনা উল্লেখ করে তিনি বলেন এ ধরনের মজাদার খেলার সাথে শিশুদের মন জড়িয়ে রয়েছে। এজন্য লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে তাদের নিয়ে খেলতে হবে। তাদের খেলাতে হবে। এর সাথে সাথে তাদের দেহে ও মনে সুস্থতা ধরে রাখা যাবে। শুধু পড়া নয় শুধু খেলা নয় তাদেরকে পড়ালেখা দুইই করতে হবে উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন তাদেরকে দেশের সুনাগরিক হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। এজন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের কাজ করতে হবে। তিনি শিশুদের নিয়ে চকোলেট খেলা খেলে তাদের মধ্যে আনন্দ ও শিক্ষা দুইই পৌঁছে দেন। তিনি বলেন ত্যাগ ও সবকিছুকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মধ্যে আনন্দ আছ্ ে। তিনি তাদের পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক শিক্ষা দিয়ে শিশুদের উজ্জীবিত করে তোলেন। এর আগে বিদ্যালয়ের পরিচালক তার হাতে তুলে দেন বিদ্যালয়ের স্মারক ক্রেস্ট ।

অনুষ্ঠানের সভাপতি সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী বলেন ছাত্র ছাত্রীদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। শুধু জিপিএ ৫ কিংবা গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়াটাই যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন পড়ার সাথে মনের ও স্বাস্থ্যের গভীর সম্পর্ক আছে। মনকে যদি ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে সুস্থ রাখা না যায় তাহলে লেখাপড়া ও মেধা বিকাশ পূর্নাঙ্গতা পায় না। তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুশৃংখল করে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আরও বলেন তাদেরকে দেশপ্রেমিক হয়ে উঠতে হবে। তাদেরকে সমাজের অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে হবে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু , অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইলতুৎমিশ ,যশোর জেলা তথ্য অফিসার জাহারুল ইসলাম, বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী সুফিউল্লাহ ফারুকি আবু কাজী, গ্রাফিক্স ডিজাইনার মো. নুরুজ্জামান ফিরোজ, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ সদস্য উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম, সদস্য মো. শাহিন ইসলাম প্রমূখ।
প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিরা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে যেয়ে নতুন করে কেক কাটেন। তারা পরিদর্শন করেন ইংলিশ কর্ণার। সেখানে রক্ষিত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ , সুন্দরবন এবং ইতহাস ও ঐতিহ্য ইঙরাজী ভাষায় তুলে ধরা দেখে তারা মুগ্ধ হন।