সরকারী প্রকল্পের ১৪ লক্ষ টাকার মালামাল টেন্ডার ছাড়াই বিক্রয়ের অভিযোগ

156

হাসানউল্লাহ: পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ) সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষণাকৃত ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছানোর অঙ্গীকার এর প্রকল্পের প্রায় ১৪ লক্ষাধিক টাকার পুরাতন বাট্যারী ও অনন্যে মালামাল কোন প্রকার টেন্ডার ও কোটেশন ছাড়াই ঢাকার একটি কোম্পানির কাছে গোপনে বিক্রয়ের খবর জানতে পেরে ১৯ মার্চ মঙ্গলবার বেলা ১১টার সময় দৈনিক কালের চিত্র’র প্রতিবেদক (শহরের পলাশপোল এলাকায় আব্দুল জলিলের তৃতীয় তলা বাড়ীর নিচতলা পিডিবিএফ এর সংরক্ষিত মালামাল সংরক্ষণাগার) এ সরেজমিন গিয়ে দেখতে পান, পিডিবিএফ এর সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র এ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর আবুল হাসান উক্ত স্টোর রুমের সামনে একটি খাতা ও কলম নিয়ে মালের হিসাব লিখছিলেন ও পিডিবিএফ এর কয়েকজন কর্মচারী মাথায় করে স্টোর রুম থেকে মালামাল বাহির করে যশোর ট ১১-৩৫৪৫ নং ট্রাকে তুলছিলো।

এসময় সেখানে ঢাকা থেকে আগত একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এমএনএস কর্পোরেশনের একজন কর্মচারী নাম আকাশ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তিনিই এসেছেন ঢাকা থেকে উক্ত মালামাল গুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং উক্ত ট্রাকটিও তিনিই ভাড়া করেন।

এসময় সেখানে উপস্থিত পিডিবিএফ এর কর্মকর্তা আবুল হোসেনের নিকট মালামাল বিক্রয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সকালে অফিসে গেলেই ডিডি ম্যাডাম আমাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন আপনি স্টোর রুম খুলে চারজন কর্মচারী নিয়ে সৌর শক্তির অব্যাবহারিত মালামাল গুলো ঢাকা থেকে আগত এমএনএস কর্পোরেশন এর কর্মকর্তা আকাশ আহমেদকে বুঝিয়ে দিতে।

আমি যথারীতি ডিডি ম্যাডামের নির্দেশে মালামাল গুলো বুঝিয়ে দিচ্ছি। এসময় উক্ত কর্মকর্তা বলেন, এসকল মালামাল অবশ্যই টেন্ডার আহবান করেই বিক্রয় করার কথা কিন্তুু টেন্ডারের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। তিনি টেন্ডারের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পিডিবিএফ এর সাতক্ষীরা চৌধুরীপাড়ায় সিআইডি অফিসের দ্বিতীয়তলায় অবস্থিত আঞ্চলিক অফিসে গিয়ে ডিডি ম্যাডামের কাছে জানলে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

কর্মকর্তা আবুল হাসানের কথা মতো শহরের চৌধুরী পাড়ায় মিন্টু সাহেবের ভবনের অর্থাৎ সিআইডি অফিসের দ্বিতীয় তলায় পিডিবিএফের সাতক্ষীরা আঞ্চলিক অফিসে যান প্রতিবেদক। সেখানে অফিসে মাত্র দুইজন কর্মকর্তা ছাড়া আর কেউ ছিলেননা। দুইজন কর্মকর্তার মধ্যে একজন পুরুষ কর্মকর্তা উপ সহকারী পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন ও একজন মহিলা কর্মকর্তা সাতক্ষীরা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক (ডিডি) বেগম ছাবিলা খাতুন। ডিডি বেগম ছাবিলা খাতুনের নিকট প্রথমেই নাম বলে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জানতে চাওয়া হয় অফিসের বাকি স্টাফরা কোথায়? তখন তিনি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলেন সবাই বাহিরে কাজে ব্যাস্ত আছে। ডিডি ম্যাডাম তখন জানতেননা যে প্রতিবেদক মালামাল সংরক্ষণাগার থেকে সকল তথ্য নিয়ে তারপর ডিডি অফিসে গিয়েছেন।

তারপর ডিডি ম্যাডাম ছাবিলা খাতুনের নিকট সরকারের সৌরশক্তি প্রকল্পের মালামাল বিক্রয়ের ব্যাপারে ঢাকা হেড অফিসের নির্দেশনা ও টেন্ডার আহবানের কাগজপত্রাদি ও পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবই আছে তবে আমার অফিসের এ্যাকাউন্টেন বাবু শিবপদ দাস আজ ছুটিতে থাকায় তার আলমারিতে সব কাগজ পত্র আটকা পড়ে গিয়েছে।

এর কিছুক্ষনের মধ্যেই ডিডি ম্যাডামের মোবাইলে একটি কল আসে ডিডি ম্যাডাম কলটি রিসিভ করে কথা বলতে শোনা যায় যে, স্যার আমার সামনে সাংবাদিক বসে আছে আমি কোন কাগজ পত্র দেখাতে পারছিনা আপনি তাড়াতাড়ি ঐ কাগজগুলো ইমেইল করে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করেন একথা বলেই ডিডি ম্যাডাম ফোন রেখে দেন। তখন আর কিছুই বুঝতে বাকি থাকেনা।

তারপর আবারও প্রতিবেদক চলে যান সেই আব্দুল জলিলের ভাড়া বাড়িতে যেখানে মালামাল সংরক্ষণাগার। সেখানে গিয়ে ঢাকা থেকে আগত এমএনএস কর্পোরেশনের কর্মকর্তা আকাশ আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হয় সরকারী মালামাল ক্রয়ের কোন কাগজপত্র আছে কিনা? তখন তিনি তার প্রতিষ্ঠান এমএনএস এর কিছু ভাউচার ছাড়া আর কোন কাগজ দেখাতে পারেননি। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পিডিবিএফ এর আরেকজন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) উক্ত কর্মকর্তা বলেন, আমি যতদুর জানি কোন প্রকার টেন্ডার বা কোটেশন এর নিয়মকানুন ফলো করা হয়নি।

নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে আঞ্চলিক অফিস পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোটেশন আহবান করে সর্বোচ্চ দরদাতা যে প্রতিষ্ঠান হবে সেই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে ঢাকা হেড অফিসকে জানাতে হয়,তারপর ঢাকা হেড অফিস লিখিত অর্ডার দিলে সরকারী মালামাল বিক্রয় কমিটির সম্মুখে বিক্রয় করার নিয়ম।

কিন্তুু ঢাকা হেড অফিসের সরকারী শৌরশক্তি প্রকল্পের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা আঞ্চলিক অফিসের উপ পরিচালক (ডিডি) বেগম ছাবিলা খাতুন এসব কোন প্রকার নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই এভাবে গোপনে ঢাকা থেকে পাঠানো এমএনএস কর্পোরেশনের নিকট আজ বিক্রয় করছেন। এব্যাপারে ঢাকা হেড অফিসের প্রকল্প পরিচালক মো. রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে (০১৭১৪-০৯৬২৩৪) জানতে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় শোনার পর মিটিং এ ব্যাস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।