সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার বিষয়ে কর্মসূচি দিল ৩৫ আন্দোলনকারীরা

16

মোঃ সদরুল কাদির (শাওন) : ফের আন্দোলনের নামার ঘোষণা দিয়েছে ৩৫ প্রত্যাশীরা। আগামী শুক্রবার (১২ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণজামায়েতের ডাক দেয় আন্দোলনরত চাকরি প্রত্যাশীরা। ওইদিন বিকাল ৩টায় থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হবে। এদিকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাথেও এ বিষয়ে বৈঠকে বসার কথা জানিয়েছেন তারা।

সোমবার (৮জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৫ প্রত্যাশীদের আন্দোলন সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু বলেননি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে তিনি বলেছেন, ৩৫ দাবিতে আন্দোলন করলে করুক, সমস্যা নেই। আন্দোলন যে কেউ করতেই পারে, আন্দোলন করলে তো আমি বাঁধা দিতে পারব না। তাছাড়া আন্দোলন করলে অন্তত রাজনীতিটা শিখবে। কিন্তু কারো প্ররোচনায় পড়ে যদি আন্দোলন করে, তবেই বুঝতেই পাচ্ছেন, অবস্থাটা কী হবে? এছাড়া তিনি বিগত পিএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে উপস্থাপন করেন। আর দেশবাসীকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দেন। ৩৫ প্রত্যাশীরা আশা করছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক মন্তব্য করবেন। তাদের এই আশাভঙ্গ হওয়ায় নতুন করে আন্দোলনের ডাক দেয়।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের মুখপাত্র ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে তাদের সাথে আমাদের বৈঠকও হয়েছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা তুলে ধরতে চাই।

তিনি আরও বলেন, আগামী শুক্রবার (১২জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমরা ফের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। ওইদিন আমরা বৃহৎ গণজামায়েতের চেষ্টা করছি। সেইদিন প্রধানমন্ত্রীর যৌক্তির জবাব দিবো।

গত ৬ জুলাই অনেক দিন ধরে টানা প্রস্তুতি শেষে মাঠে নামে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অবস্থান করে সারাদিন প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে।

টানা কয়েক বছর ধরে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। তবে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়েছে ৩৫-এর সব চাওয়া-পাওয়া। তারপরও আন্দোলন থেকে সরে আসেননি আন্দোলনকারীরা। সাংগঠনিকভাবে কিছুটা গুছিয়ে উঠে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এ প্রক্রিয়ায় রয়েছেন আন্দোলনকারীদের সংগঠক ফেরদৌস জিন্নাহ লেলিন, সঞ্জয় দাসসহ আরও অনেকে।

জানা গেছে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন সফলতার মুখ দেখলেও এখনো চলছে ‘৩৫ চাই’ আন্দোলন। চলতি বছরে এসেও কয়েক দফা কর্মসূচি পালন ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে গ্রেফতারের ঘটনাও। এরইমধ্যে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় আন্দোলন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিলো।

তবে সেই দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন ৩৫ চাই আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তবে সংসদে নাকচ হয়ে যাওয়ায় নতুন কর্মসূচিতে সরকারের বাঁধা আসতে পারে বলে আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অনেকে মনে করছেন। তবে এতে তারা বিচলিত নন বলেও জানিয়েছেন।

ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘আসলে আন্দোলন করতে গেলে বাঁধা আসবেই। তাছাড়া, সরকার চাচ্ছে আমরা আন্দোলন করে দাবি আদায় করি। সে লক্ষেই আমরা এবার বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এছাড়া দুদিন আগেই আমরা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরে সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি দাবি মানার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন আর আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে আর কোন গ্রুপ নেই। বিচ্ছিন্ন আন্দোলন করেও আসলে কোনো লাভ হবে না। সে কারণে সবাই মিলে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

গত ২৫ এপ্রিল চাকরি প্রত্যাশীদের বহুল কাঙ্ক্ষিত চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার প্রস্তাব জাতীয় সংসদে ওঠে। তবে তা নাকচ করে দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, পড়াশোনা শেষ করার পর একজন ছাত্র অন্তত সাত বছর সময় পেয়েছে। এটা অনেক সময়। তাছাড়া এর আগে চাকরির বয়স ২৫ বছর ছিল, সেখান থেকে ২৭ ও পরবর্তীতে ৩০ বছর করা হয়। সে হিসেবে এখন বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই।

এ সময় তিনি প্রস্তাব উত্থাপনকারী সংসদ সদস্যকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আহবান জানান এবং প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কিন্তু বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলু সেটি প্রত্যাহারে রাজি না হলে কণ্ঠভোটের আয়োজন করা হয়। কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। মূলত প্রস্তাবটি পাস না হওয়াতেই তীব্র হতাশ হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।