শিশু নির্যাতন ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

73

মোঃ জাবের হোসেন:
এগিয়ে চলেছে তথ্যপ্রযুক্তি, এগিয়ে চলছে বিশ্ব।প্রত্যাহ নিত্য-নতুন অাবিষ্কার চমক সৃষ্টি করছে মানুষকে।কম্পিউটার যুগ পার করে অামরা এখন প্রযুক্তির যুগে এসেছি।প্রযুক্তির উৎকর্ষে মুহুর্ত্যের মধ্যেই অামরা বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের সংবাদ নিতে পারছি অতি সহজেই। পৃথীবির কোথায় কি ঘটছে সেটা অামরা অাজ ঘরে বসেই জানতে পারছি। হোক সেটা ছবি অথবা ভিডিওর মাধ্যমে।

যন্ত্রের এই যুগে মানুষও যেনো যন্ত্রের মত হয়ে গেছে।মানুষ অার প্রানহীন যন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য যেনো খুব কমই মনে হয় । কারোর বিপদে এখন অার অাগের মত সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে অাসেনা।প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে অধিকাংশ মানুষের হাতে এখন অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন।যেটা দিয়ে কোনো কিছু অতি সহজেই ভিডিও অথবা ছবি তোলা সম্ভব।অাগেরকার দিনে কেউ বিপদে পড়লে তার হাত ধরে উপরে টেনে তোলা হতো। অার এখন হাত দিয়ে টেনা তোলার পরিবর্তে মোবাইল দিয়ে ছবি তোলা অথবা ভিডিও করা হয়।পরবর্তীতে সেটা ইন্টারনেট দুনিয়ায় স্থান পায়।বিশ্বের লক্ষ কোটি মানুষ সেটা দেখতে পায়।নেট দুনিয়ায় অনেক সময় অপরাধের বিরুদ্ধে ঝড় ওঠে, প্রতিবাদ হয়।

কেউ কেউ সমবেদনা জানাই। অাবার কেউ কেউ ধন্যবাদ জানাই উক্ত ছবি অথবা ভিডিওটি করার জন্য।কিন্তু অামরা একবারও ভাবিনা, যিনি ছবি তুলছেন অথবা ভিডিওটি করছেন তিনি ছবি অথবা ভিডিও না করে অপরাধ অথবা উক্ত নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারতেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত কিছু শিশু নির্যাতনের ভিডিও প্রচার হচ্ছে।ভিডিও গুলো কে বা কারা করছেন তা জানার বাইরে। অামি বেশ কিছু ভিডিও দেখেছি যেখানে দেখা যাচ্ছে অল্প বয়সী শিশুর প্রতি ব্যাপক প্রহর করা হচ্ছে।কোনো কোনো সময় বাঁশের লাঠি,বেত অথবা হাতে তুলে মাটিতে অাছাড় মারা,সামাজিক রীতি মেনে নির্যাতন সহ অারো অনেক নির্যাতন করা হচ্ছে। অধিকাংশ ঘটনাগুলো জনগনের মধ্যেই হচ্ছে।অর্থ্যাৎ যখন ঘটনাগুলো ঘটছে তখন তার চারপাশে মানুষ ভিড় করে দেখছে।অথচ কেউ এগিয়ে অাসছেনা। এটা কি মানবতার অবক্ষয়?

মানবতা অাজ কোথায়?

কিশোর অপরাধ কাকে বলে পড়েছিলাম অনার্সের অপরাধ বিজ্ঞান বইয়ে।সেখানে কিশোর অপরাধ বলতে বুঝানো হতো ১৮ বছরের কম বয়সী কিশোর কর্তৃক অপরাধই কিশোর অপরাধ।অর্থাৎ একজন কিশোর যখন সে নিজের ভালো-মন্দ না বুঝেই অপরাধ করে তখন তাকে কিশোর অপরাধ বলে। তার জন্য অাইনে শাস্তির বিধান অাছে।সেই অাইন ততটা কঠিন নয়, যতটা কঠিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।অথবা অামরা তার শাস্তিস্বরুপ যে প্রহর করি,নির্যাতন করি।

একজন কিশোর কতটা ভয়ানক অপরাধ করতে পারে? সে কি গুরুতর কোনো অপরাধ করতে পারে? মেনে নিলাম করতে পারে। তাই বলে কি তাকে হাতে তুলে অাছাড় মারতে হবে? তাই বলে কি তাকে মারতে মারতে মেরে ফেলতে হবে? এটাই কি মানবতা? উত্তর অাসবে অবশ্যই না। তাহলে কেনো এই নির্মমতা,কেনো এই বর্বরতা? প্রশাসন অাছে কেনো তাহলে? প্রশাসনের কাজই বা কি?

অনেক ক্ষেত্রে সামান্য অপরাধে কিশোর নির্যাতন করা হয়।যেমন বোতল চুরি,টাকা চুরি,খাবার চুরি,গাছের ফল চুরি সহ অন্যান্য প্রাথমিক অপরাধ।

যেখানে বড় বড় অপরাধ লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকছে।তাদের কোনো বিচার হচ্ছেনা সেখানে কেনো সামান্য অপরাধের জন্য এত বড় নির্যাতন? অামি অপরাধের পক্ষে নয়,অপরাধের বিপক্ষে।অামি বলছিনা তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হোক।বলছিনা তাদের বিচার করা যাবেনা।অামি বলছি সামান্য অপরাধের দায়ে কেনো জীবন দিতে হবে? কেনো তাদের মেয়ে অর্ধমরা করতে হবে? কেনো বেদম প্রহর করা হবে? তাকে অাইনের অাওতায় এনে সঠিক অাইনগত ভাবে বিচার করা হোক।কেনোইবা তাকে জীবন দিতে হবে? দেশে তো বড় বড় দুর্নীতি হয়। তাদের বিচার কয়জন করেন? না কি তারা প্রভাবশালী বলে কেউ কথা বলেনা? অার এরা নিরীহ বলেই কি এই নির্যাতন?

অামরা তো মানুষ তাহলে কীভাবে অামরা ছোট্র এই শিশুদের প্রতি এত নির্মম নির্যাতন করি? অনেক সময় অামরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল অথবা ফেসবুকে বিভিন্ন কিশোর নির্যাতনের ভিডিও দেখি।সেখানে দেখা যায় মারতে মারতে মেরে ফেলা হচ্ছে।কেউ এগিয়ে অাসছেনা।পরে মামলা হচ্ছে,জেলে যাচ্ছে অাবার কিছুদিন পরে জামিনে মুক্তি পাচ্ছে।অাস্তে অাস্তে বিচারকার্য স্থগিত হয়ে যাচ্ছে।থমকে যাচ্ছে বিচার।এভাবেই শেষ হচ্ছে একেকটি মামলা।অনেক ক্ষেত্রে বিচার হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক বিচার হচ্ছেনা।

একার পক্ষে সমাজে কখনো উন্নতি বা অন্যায় নির্মূল করা যায়না।সবার ঐক্যান্তিক প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে সমাজ,দেশ ও রাষ্ট্রের সফলতা অর্জন খুব সহজ।কিন্তু সেটা যদি হয় একার তাহলে হয়তো কখনো উন্নতি সম্ভব নয়।তাই অামাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে,অন্যকেও সচেতন করতে হবে।সমাজ,দেশ ও রাষ্ট্রের নাগরিকে জন্য কাজ করতে হবে।একটি সুখি,সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় হোক সবার,উন্নীত হোক মানবতা,সকল অন্যায়-অবিচার বন্ধ হোক।

লেখক: সাংবাদিক ও সমাজ উন্নয়নকর্মী