পাটকেলঘাটার খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক

17

মাহেন্দ্রের কারণেই বছরে প্রাণহানির সংখ্যা সর্বাধিক, রাজস্ব থেকে বঞ্চিত সরকার

এস.এম মফিদুল ইসলাম, পাটকেলঘাটা ॥
পাটকেলঘাটার জনগুরুত্বপুর্ণ খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক জুড়ে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষের লাশের মিছিল ঘটলেও প্রতিকার পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি আজও। বরং প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা কেন ঘটছে, কি জন্য ঘটছে, কিভাবে ঘটছে আর এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো পন্থা আদৌ আছে কিনা তা নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেন কোনো মাথা ব্যাথা নেই।

চলতি ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করায় সপ্তাহ খানেক পরবর্তীতে সময় আরও ৩ দিন বৃদ্ধি করলেও খোদ প্রশাসনের নাকের ডগায় মাহেন্দ্র, থ্রিহুইলার, লেগুনা, দানব যন্ত্র টলি, ইঞ্জিন ভ্যানের মতো অবৈধ মরণ গাড়ি হরহামেশাই চললেও কোনো ভুমিকা চোখে পড়েনি। উল্টো মাসোয়ারার নিমিত্তে সেগুলো দেদারছে ব্যবহার করে আসতে দেখা যায় দেখভালের দায়িত্বরত কর্তাব্যক্তিদের। অথচ দেশজুড়ে ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালীন সময়ে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে রোড পারমিট, ফিটনেস বিহীন, কাগজপত্র ছাড়া মাহেন্দ্র, লেগুনার মতো ৩ চাকার গাড়ি, অদক্ষ ড্রাইভার সবই যাচাই বাছাই চলছে। শুধুমাত্র মটরযানের বিরুদ্ধে কড়াকড় আরোপ প্রশাসনের কার্যক্রম দৃশ্যত। যার কারণে সরকার একদিকে যেমন বড় অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপরদিকে প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা সহ যানজট যেন ছাড়ছেই না। গত ৬ মাসে তালার নওয়াপাড়া থেকে পাটকেলঘাটার ত্রিশ মাইল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা প্রায় ২০/২৫। যার ভেতর অবৈধ যান মাহেন্দ্রের কারণেই দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বেশি। কারণ হিসেবে দেখা যায়, প্রশাসনিক অদৃশ্য শক্তিকে পুজি করে এসকল যানের চালকগণ নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া গতিতে যাতায়াত করতে। শুধুমাত্র এখানেই ক্ষান্ত হয়নি এসকল মাহেন্দ্রের চালকগণ।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সমিতির অধীনে চলার কারণে সিরিয়াল মেইনটেন করতে হয় এসকল চালকদের। ফলে সারাদিন পর পাটকেলঘাটা ওভার ব্রীজ থেকে সাতক্ষীরাগামী দিনে ২/৩ টি টিপ দিতে পারেন। ফলে বেশি টিপের আশায় আগেভাগে সাতক্ষীরায় পৌছাতে পারলেই সেখানে সিরিয়াল দিতে পারবেন। এ আশায় অতিদ্রুত চালাতে কিংবা পাশ কাটিয়ে উপরে উঠতে বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হন। অথচ এদের গতিসীমা ৩০/৪০ এর ভেতর রাখার নিয়ম এমনকি ৪/৫ জন যাত্রীর বেশি নিয়ে চলাচল করা যাবে না বলে মাহেন্দ্র চালক তালার তরিকুল, রিয়াজুল, মিন্টু জানান। তারা আরও জানান, প্রতিনিয়ত এসকল মাহেন্দ্রের নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র, নেই আমাদের মতো ড্রাইভারদের কোনো কাগজপাতি কিংবা সনদ। শুধুমাত্র মাসোয়ারা স্বরুপ স্থানীয় থানায় প্রতিদিন একটি করে গাড়ি দিলেই সব মাফ হয়ে যায়। দেখা যায়, এসকল অনিয়ম আর ই”্ছা শক্তির কাছেই সাধারণ যাত্রী সাধারণ জিম্মি হয়ে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। বাড়ি থেকে বের হলে আর ফিরতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে সন্ধিহান। মাহেন্দ্র যাত্রী থানার কুমিরা গ্রামের আব্দুস সালামের পুত্র শহিদুল ইসলাম, সেনপুর গ্রামের ইমদাদুল ইসলাম, মেলেকবাড়ির তৌহিদুজ্জামান জানান, অবৈধ যানবাহনের কাছে আমরা যেন সকলেই জিম্মি। প্রয়োজনের তাগিদে আমাদের সকলকে তো যাতায়াত করতেই হয়। যদি এসকল যানবাহনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেন তবেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশাবাদী। তাই সরকার যাতে বড় অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত না হয়, প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা ও যানজট যাতে হ্রাস পায় এবং সকল যান চালকগণ বৈধ কাগজপাতি নিয়ে দক্ষ ড্রাইভারদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এসকল বিষয়ের প্রতি নজর দিতে প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন পাটকেলঘাটার সচেতন মহল।