নির্বাচন আসলে জনসম্পৃক্ততা বাড়ে!

14
জাবের হোসেন
জাবের হোসেন

মো. জাবের হোসেন

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতায় যাওয়ার বৈধ পন্থা নির্বাচন।নির্বাচনের মাধ্যমে জনগন নির্বাচিত করেন তাদের জনপ্রতিনিধি।অার জনপ্রতিনিধিরা একটি নিদৃষ্ট সময়ের জন্য এলাকার বা দেশের জনগনের প্রতিনিধিত্ব করেন।মেয়াদ শেষ হলেই অাবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

জনগনের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের বেশি বেশি সাক্ষাত হয় নির্বাচনকালীন সময়ে। নির্বাচনের সময় নেতারা এলাকার প্রতিটি চা স্টল,রাস্তা,মোড় সহ জনগনের দোয়ারে দোয়ারে ঘুরে বেড়ায়।কিন্তু নির্বাচনের পর অাগের মত ভাব অার থাকেনা।

যিনি জয়ী হন তিনি অার অাগের মত জনসম্পৃক্ততা বজায় রেখে চলেনা।অার যিনি পরাজিত হন তিনিও অাগের মত সূসম্পর্ক বজায় রাখেনা।তখন নেতাদের প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়।

একজন এমপি বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি চাইলে সারাজীবন তার পদে বহাল থাকতে পারে।তার জন্য শুধু প্রয়োজন নিজের সদিচ্ছা।তার অর্থ হলো,একজন এমপি বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর যদি সে চাই সে সারাজীবন উক্ত পদে বহাল থাকবে, তাহলে সে থাকতে পারবে। তার জন্য অর্থের প্রয়োজন নেই,তার জন্য জনগনের দোয়ারে দোয়ারে যেয়ে ভোট ভিক্ষা চাইতে হবেনা।শুধু নিজের একটু সদিচ্ছাই পারে তাকে সারাজীবন পদে বহাল রাখতে।নিজেকে নিজের মত করে না ভেবে জনগনের মত করে ভাবতে হবে।জনপ্রতিনিধিরা যদি নির্বাচিত হওয়ার পরে জনগনের সাথে সূসম্পর্ক বজায় রেখে চলে,যদি জনগনের সাথে সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারে তাহলে পরবর্তী ভোটে তাকে জনগনের কাছে যাওয়া লাগবেনা।জনগনই তাকে ডেকে ভোট দিবে।

কিন্তু অামাদের দেশে অামরা ভিন্ন রকম দেখি।সব দেশে কম-বেশি অাছেই।তথাপি নেতারা নেতাদের কৃতকর্মের জন্যই জনগনের কাছে গেলে অনেকক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। যার জন্য পাঁচ বছর পর পর নেতাদের জনগনের কাছে যেয়ে কবিরাজি ঔষধ বিক্রি করা মত বক্তব্য দিতে হয়।

কবিরাজ সম্পর্কে অামাদের ধারণার একটু বিভ্রাট রয়েছে।কেউ কেউ বিশ্বাস করে,অাবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেনা। অধিকাংশ জনগন মনে করে তাদের ঔষধে কাজ হয়না।তারা মিষ্টি কথা বলে পাবলিককে ঠকিয়ে পকেটের টাকা নিয়ে চলে যায়।

যারা বলেন, তারা জনগনকে ধোকা দিয়ে অর্থ উপার্জন করেন।তারা কি জানেনা যে, তারা অর্থ দিয়ে কবিরাজের কাছ থেকে ধোকার ঔষধ কিনছেন? যদি জেনেই থাকে তাহলে কেনো জনগন তাদের কাছ থেকে ঔষধ কেনেন? যদি কাজ না হয় তাহলে কেনো জনগন তাদের কাছ থেকে ঔষধ ক্রয় করবেন? একটা জিনিস খেয়াল করবেন। দেখবেন যারা ঐই সমস্ত ঔষধ বিক্রি করা তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌন উত্তেজক জাতীয় ঔষধ বিক্রি করে।তারা কিন্তু ব্যবসায় সফল।কারন তারা জানে পাবলিকের কাছে কোন টোপ দিলে পাবলিক গ্রহণ করবে।তারা জানা কীভাবে কথা বললে পাবলিক তাদের কাছে থেকে ঔষধ নিবে।তাহলে তারা কিন্তু কৌশলে জয়ী হয়।

অপরদিকে অামাদের দেশের রাজনীতিও সেই কবিরাজের ঔষধের মত হয়ে গেছে।নির্বাচনের সময় হলে তারা জনগনের কাছে যায়।অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জনগন অমুককে ভোট দিবেনা,তমুক খুব খারাপ লোক।সে এলাকার কোনো কাজ করেনি।দুর্নীতি করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।কিন্তু নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক কৌশলে নেতারা ওই ঔষধ বিক্রির মত লেকচার দিয়ে ভোট অর্জন করে নেয়।অপরদিকে নির্বাচনের পরে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় নেতারা।নেতারা তাদের প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যায়। ভুলে যায় জনগরের জন্যই তারা ক্ষমতাবান।ভুলে যায় জনগনের স্বার্থের কথা।

সেজন্যই বুঝি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর নির্বাচনের সময় নেতারা জনগনের কাছে কাছে গিয়ে কুশল বিনিময় করেন।কিন্তু একজন নেতা চাইলে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পূর্ব থেকে পরবর্তী পর্যন্ত জনসম্পৃক্ততা ঠিক রেখে পূনরায় নির্বাচিত হতে পারে।

সত্যি কথা বলতে অামরা একটু ভালো জায়গায় গেলেই ধরাকে সরা জ্ঞান করি।ভাবটা পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন অার উঁচু-নিচু কিছু দেখতে পায়না অামরা।সেজন্যই কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,সাত কোটি কম্বলের মধ্যে অামার (বঙ্গবন্ধু) কম্বল কই?

সাত সাগর তের নদী পার হয়ে যেমন অনেকেই ভালোবাসা অর্জন করে। তেমনি অামরাও রক্তের নদী পার হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি।কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন করাটা যতটা না কষ্টের, তার থেকে বেশি কষ্টের সেই অর্জিত স্বাধীনতা ধরে রাখা।একজন মানুষ ইচ্ছা করলেই নেতা হতে পারে।কিন্তু নেতার নেতামী ধরে রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। নেতা হলেই নেতামী অর্জন হয়না।তার জন্য অারো বেশি সাধনার প্রয়োজন।নিজের ভিতর যদি জবাবদিতিহা না থাকে তাহলে পূর্ণাঙ্গতা লাভ করা যায়না।

জনগন এবং রাজনৈতিক নেতাদের এমন সূসম্পর্ক হওয়া উচিত যেমন কলমের সাথে কালির সম্পর্ক।যতদিন না এমন পরিবেশ তৈরি হবে,যতদিন না ব্যক্তিস্বার্থ দূর হবে ততদিন প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবেনা।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, লাল সবুজের কথা ডট কম