নারী ক্ষমতায়নে শীর্ষ পর্যায়ে বাংলাদেশ

11
লাল সবুজের কথা- Lal Sobujer Kotha

ওসমান গনি শুভঃ একাবিংশ শতাব্দীতে যে শব্দটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে তার মধ্য অন্যতম শব্দটি হল “নারীর ক্ষমতায়ন”। রাষ্ট্র,সমাজ এবং পরিবারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া নারীর শিক্ষা প্রসার এবং দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার তাগিদ দিয়েছেন। নারী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী সুফিয়া কামালও নারীর বন্ধনমুক্তি ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

নারীর ক্ষমতায়নের অর্থই হলো,সমাজের প্রতিটি স্তরে এমন একটি সুস্থ পরিবেশ থাকবে যেখানে নারী আপন মহিমায় স্বাধীন ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে উঠবে এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে বস্তুগত, মানবিক ও জ্ঞান সম্পদের উপর। বর্তমানে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের উপর ব্যাপকভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহৎ দুইটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নারী। তাছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় প্রধানও একজন নারী। দেশের বর্তমান এবং প্রথম মহিলা স্পীকারও নারী।

নারীর ক্ষমতায়ন বলতে বোঝায় নারীর স্বাধীনতা এবং সকল ক্ষেত্রে অধিকার প্রতিষ্ঠা, বিশেষ করে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা। বিদ্যমান সমাজে পুরুষের দায়িত্বের পাশাপাশি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। সম অধিকার ও দায়িত্বের ভিত্তিতে পুরুষরা গৃহস্থালি ও সন্তান লালন-পালনে সমানভাবে অংশ নেবে। ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত কায়রো সম্মেলনে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ১৭৯ টি দেশের অংশগ্রহণে ১১৫ পৃষ্ঠার একটি প্রস্তাবনায় সাম্য,ন্যায়বিচার, সন্তান ধারণের প্রশ্নে নারীর ইচ্ছার প্রাধান্য, নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রভৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

দুই একজন নারী সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা মুক্তি হয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেই সমস্ত নারীর ক্ষমতায়ন হয় না। নারীর ক্ষমতায়ন দেশের জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ যে নারী তাদের সঠিক ক্ষমতায়নকে বোঝায়। সমাজে প্রচলিত মূল্যবোধ নারীকে পুরুষের অধস্তন করে রাখে। শিশুবয়স থেকেই নারী দেখে সমাজে পুরুষের প্রভাব। শিশুকাল থেকে সে আচার-আচারণ, পোশাক, চলাফেরা ও কথা বলার ধরন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিভিন্নধর্মী নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে যায়।

সর্বোপরি আর্থিক বা মানসিকভাবে তাকে পুরুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়।

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের উপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। ফ্রেডারিক এ্যাঙ্গেলস তাঁর “অরিজিন অব দ্য ফ্যামিলি ” গ্রন্থে বলেছেন,” নারী মুক্তি তখনই সম্ভব যখন নারীরা সমাজের প্রতিটি কর্মকান্ডে সমগুরুত্ব নিয়ে অংশগ্রহনের সু্যোগ পাবে।” নারীকে মুক্তির জন্য,নারীর উন্নয়নের জন্য, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটাতে হবে।লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়