দেবহাটায় ইউএনও সাজিয়া আফরীনের অভিযানে ৯ ভুয়া পরীক্ষার্থী সনাক্ত, ১ শিক্ষক আটক

14

কে.এম রেজাউল করিম, দেবহাটা ব্যুরো:দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীনের সফল অভিযানে নয় ভুয়া এবতেদায়ী পরীক্ষার্থী সনাক্ত হয়েছে। এ ঘটনায় সখিপুর আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রের হলের পরিদর্শক নুরুল ইসলাম আটক হয়েছে। ইউএনওর অভিযানের খবর পেয়ে দুই দালাল পলাতক হয়ে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন চলমান ২০১৯ সালের ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সখিপুর আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে এবতেদায়ী পরীক্ষা আকর্ষিক পরিদর্শনে আসেন। পরীক্ষা পরিদর্শনকালে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্রে ভিন্ন সিল দেখতে পেয়ে প্রথমে একজনকে শনাক্ত করেন। পরে তিনি একে একে নয় জন শিক্ষার্থীকে সনাক্ত করেন। এসময় আরো একজন শিক্ষার্থী পালিয়ে যায়। পরে দেবহাটা থানা পুলিশে খবর দিলে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার সাহা সহ সঙ্গীয় ফোর্স এসে উত্তর পারুলিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সুপার উত্তর পারুলিয়া গ্রামের মৃত তাজউদ্দীন মৃধার পুত্র নুরুল ইসলাম (৪৮) কে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেন। এছাড়া তদন্তে বেরিয়ে আসে এ ঘটনার সাথে জড়িত ঘোনাপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবুল বাশার ও সহকারী শিক্ষক মোর্শেদ রহমান নামের দুই দালালের নাম।

এ সময় মোর্শেদ দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, নলতা আহছানিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী ও উপজেলার বেজোরাটি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের কন্যা জাকিয়া পারভীন (১২), ঘোনাপাড়া মাদ্রাসার ঘোনাপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের কন্যা তাছলিমা খাতুন (১২), একই মাদ্রাসার নাংলা গ্রামের রবিউল ইসলামের কন্যা রুবি আক্তার (১২), নলতা মাদ্রাসার নলতা গ্রামের সাইফুল ইসলামের কন্যা আমেনা খাতুন (১০), বেজোআটি গ্রামের সফিকুল ইসলামের পুত্র সাব্বির হোসেন (১৩), পারুলিয়া মৃধাপাড়া গ্রামের মতিউল্লাহর পুত্র ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র রবিউল বাশার (১০), নলতা মাদ্রাসার বেজোআটি গ্রামের আজহারুল ইসলামের পুত্র আশিকুর রহমান (১২), উত্তর পারুলিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার বিল্লাল মোল্যার পুত্র আব্দুর রহমান (১৩) এবং দক্ষিণ নাংলা গ্রামের আব্দুল করিমের পুত্র তরিকুল ইসলাম (১১) নামের ছাত্র-ছাত্রীরা দালাল মোর্শেদের সহযোগীতায় উত্তর পারুলিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিতে আসে।

এ ঘটনায় শিক্ষক নুরুল ইসলাম আটক হলেও উক্ত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে লিখিত মুচলেকা দিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় দেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রনব কুমার মল্লিককে আদেশ দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৯ সালের ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় সখিপুর দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৩০৮জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করার কথা। প্রথম দিনের পরীক্ষায় ১৭জন সহ ৫ম দিন পর্যন্ত সর্বমোট ১৮জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। ৫ম দিন বৃহস্পতিবার ছিল কুরআন মজীদ ও আকাইদ শিক্ষা পরীক্ষা। এই কেন্দ্রের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন সখিপুর দাখিল মাদ্রসার ভারপ্রাপ্ত সুপার তবিবুর রহমান, হল সুপারের দায়িত্বে ছিলেন পারুলিয়া আহছানিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আমিনুর রহমান এবং ট্যাগ অফিসার ছিলেন উপজেলা তথ্য অফিসার শামছুন্নাহার।

এখন জনমনে প্রশ্ন, এতগুলো কর্মকর্তা হলের দায়িত্বে থাকার পরেও চলমান ৪ দিনের পরীক্ষা শেষ হলেও কিভাবে এসকল ভূয়া পরীক্ষার্থীরা অংশগ্রহন করলো। তাই এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন সচেতনমহল। এব্যাপারে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার সাহা জানান, ঘটনা শুনেই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এর সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন জানান, চলমান ২০১৯ সালের ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার একমাত্র ইবতেদায়ী পরীক্ষা কেন্দ্র সখিপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৯জন পরীক্ষার্থী সহ একজন দালালকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এঘটনায় ১ম শ্রেনীর গেজেটেড কর্মকর্তার নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে ইউএনও জানান।