ডেঙ্গু সচেতনতায় উদাসীন নগরঘাটা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

27
Nagargata Uphc
Nagargata Uphc

নিজস্ব প্রতিনিধি : বর্তমানে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গু অভিযানে পরিচালনা করা হচ্ছে।কিন্তু তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির প্রবেশপথের পাশে নোংরা পরিবেশ। নগরঘাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আঙ্গিনায় দেখা যায় বিভিন্ন রকম ঘাস সহ আগাছায় ছেঁঁয়ে গেছে। আর ছোট ছোট গর্তে পানি জমাট বেঁধেছে। সকাল ১০টার পর অফিসে গিয়ে আবার ২টার আগে ভিতর থেকে তালা মেরে বাড়িতে চলে যান। বুধবার ৩টার সময় দেখা গেছে ভিতর থেকে তালাবদ্ধ আছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আশপাশের সকলেই বলছেন প্রতিদিন তিনি দুপুরের সাথে সাথে বাড়িতে চলে যান।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বাজারে অবস্থিত বলে বাজারের প্রায় লোক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দেওয়ালের পাশে প্রস্রাব-পায়খানা করে। । এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় উক্ত স্থানটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিণত হয়েছে এবং সব সময় দুর্গন্ধ থাকে।

ডেঙ্গু বর্তমানে একটি আতঙ্কের নাম। যদিও সারা দেশের তুলনায় সাতক্ষীরাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে তথাপি সাতক্ষীরাকে সর্বপ্রথম ডেঙ্গুমুক্ত জেলা ঘোষণায় জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল বদ্ধ পরিকর। এজন্য তিনি দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ডেঙ্গুতে আতঙ্কিত না হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের মধ্যে সাতক্ষীরাকে সর্বপ্রথম ডেঙ্গুমুক্ত ঘোষণা করা সম্ভব। নিজ নিজ উদ্যোগে বাড়ির আঙিনাসহ অফিস আদালত এবং সকল প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেই সাথে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে কাজ করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে তিনি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে বলেছেন।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তাদের নির্দেশনায় বলেছে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেবাদান কেন্দ্রে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতামূলক তথ্য প্রদর্শন করতে হবে, উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার কর্তৃক স্কুল স্যাটালাইটে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু এই নির্দেশনার কোনটি সম্পর্কে জানেন না নগরঘাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিধান চন্দ্র দাস।

তিনি বলেছেন তাদের কাছে নাকি কোনো দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়নি।শুধুমাত্র উপজেলা মাসিক মিটিং-এ নাকি ডেঙ্গু সম্পর্কে কিছু কথা শুনেছেন।এমনকি ৩০/০৭/২০১৯ ইংরেজি তারিখে প্রকাশিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা থেকে ডেঙ্গু সচেতনতা বিষয়ক পরিপত্রের বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না

স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ, নগরঘাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কোন ডাক্তারই সময়মত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসেন না। নগরঘাটা ইউনিয়নে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সম্পর্কেও জানেন না উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিধান চন্দ্র দাস।

এ বিষয়ে নগরঘাটা ইনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিধান চন্দ্র দাস বলেন, আমি একজনকে দিয়ে গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বড় বড় ঝোপঝাড় যা ছিলো সেগুলো পরিষ্কার করিয়েছি। আর বাকি গুলা আমি আবারও পরিষ্কার করাবো শিঘ্রই।আর স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বাজারে অবস্থান করায় এখানে প্রতিদিন বিকালে প্রচুর লোক আসা-যাওয়া করে।পাশে চায়ের দোকান আমি বারবার নিষেধ করার সত্ত্বেও তারা এখানে এসে প্রস্রাব করে স্থানটি নোংরা করছে। ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতামূলক তথ্য প্রদর্শণ করার জন্য আমাদের কোন বাজেট নেই, যার জন্য আমরা এটা করতে পারিনি।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সময়মত উপস্থিতির ব্যাপারে তিনি বলেন,সপ্তাহে দুই দিন করে স্কুল প্রোগ্রাম থাকে।সেজন্য হয়তো সেসময় রোগিরা আসলে আমাকে পাইনা। এসময় তার কাছে এ সপ্তাহে কোনো স্কুল প্রোগ্রামে গেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,না এ সপ্তাহে কোনো স্কুল প্রোগ্রামে যায়নি। মঙ্গলবার তালায় অফিসের কাজ ছিলো বলে যাওয়া হয়নি। কিন্তু ৫ দিনের মধ্যে একদিন না হয় তালায় ছিলেন।বাদবাকি দিন যাননি কেনো এমন প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর তিনি দিতে পারেন নি।

নিয়মিত ও সময়মত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে না যাওয়ায় এলাকার মানুষজন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এজন্য উক্ত এলাকার লোকজন ডেঙ্গু সম্পর্কে কিছু জানতে পারছেন না স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে।

এ সম্পর্কে তালা উপজেলা মেডিকেল অফিসার মেরিনা আক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরটি উপজেলা মেডিকেল অফিসারে আওতায় না থাকায় এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব হচ্ছেনা।তবে তিনি বলেন লিখিত অভিযোগ দিলে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলেন আশ্বস্থ করেন তিনি।