আজিজুর রহমান, কেশবপুর প্রতিনিধি: কেশবপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দলিত শিক্ষার্থীদের সাথে অমর্যাদাকর ও বৈষম্যমুলক আচরনের প্রতিবাদে বালিয়াডাঙ্গা ঋষিপল্লীর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা রবিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান ঘটনার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুরে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ঋষিপাড়ার প্রায় ৩৫ শিক্ষার্থী বালিয়াডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা তাদের অভিযোগে উল্লেখ করেন দীর্ঘদিন ধরে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকরা তাদের সাথে চরম অমর্যাদাকর ও অসম্মানজনক আচরন আচরন করে আসছে।
শিক্ষকরা দলিত শিক্ষার্থীদের বলেন ‘‘তোরা মুচির সন্তান তোদের লেখাপড়া করে কী হবে। তোরা এখনই কোন গ্যারেজে কাজ করগে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম ঋষি পল্লীর ৩০/৩৫ জন শিক্ষার্থীর সাথে প্রায়শই অমর্যাদা ও অবজ্ঞামুলক আচরন করে থাকে। ঋষি পল্লীর শিক্ষার্থীদের দিয়ে “বাথরুম পরিষ্কার করানো, মাঠের ময়লা পরিস্কার করানো, বিদ্যুৎ বিল দেওয়া, প্রধান শিক্ষকের সন্তানের প্রসাব করানো কাপড় চোপড় ঋষি পল্লীর শিশুদেরদেরকে দিয়ে ধোয়ানো ও নাড়তে বলে এমনকি প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম বলেন মুচি পাড়ার ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া শিখে কি লাভ? তোরা স্কুলে আসিস ক্যান, সময় থাকতে গ্যারেজে ভর্তি হ ” ইত্যাদি অসংবেদনশীল বাক্যালাপ পূর্বক চরমভাবে লাঞ্চিত করে। বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণীর ছাত্রী মৃণ¥য় দাস বাথরুমে যেতে চাইলে তাকে বাথরুম ব্যবহার করতে না দিয়ে তার উপর উল্টো প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম বকাবকি করে মুচির ছেলে মেয়েরা এখানে বাথরুম ব্যবহার করতে পারবে না তোরা বাড়ি যেতে পারিস না , বাড়ি চলে যা, তখন মৃন্ময় বাধ্য হয়ে বাড়ি চলে আসতে মাঝপথে জামা কাপড়ে বাথরুম করে দেয়।
১ম শ্রেণীর ছাত্র অর্কোজিৎ দাস ১ম ও ২য় সাময়িক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলেও মুচির ছেলে হওয়ার কারণে বার্ষিক পরীক্ষায় তার ফলাফল আশানুরুপ হয়নি এমনকি স্কুলে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তাদের খাতা কেড়ে নেয়। অত্র স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র জয়ন্ত দাসকে প্রাথমিক সমাপণী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে দেয়নি। ২য় শ্রেণীর (মুসলিম) ছাত্রী মিথিলা খাতুনকে স্কুলের শিক্ষক খাদিজা বেগম বলেন তুই মুচি পাড়ার পাশে বসবাস করিম তুইও মুচি হয়ে গেছিস, তুইতো মুচি, তোর লেখা পড়া শিখে কি লাভ ? তুই যদি পরীক্ষায় পাশও করিস তারপরেও আমরা তোরে ক্লাসে তুলবো না, এমনকি তারই প্রেক্ষিতে মিথিলা খাতুনকে ক্লাসে উঠানো হয়নি। এছাড়া প্রধান শিক্ষক মিথিলাকে ব্যঙ্গ করে মুসলিম হওয়ার পরেও তাকে মিথিলা দাস বলে ডাকেন।
শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাদুর ধোয়ানো, বড় কলসিতে জল আনানোর মত অমানবিক কাজও করায়। অত্র ক্লাসের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বাড়িতে ফিরে তাদের প্রতি শিক্ষক দ্বারা চরম লাঞ্চনার কথা কান্নাজড়িত কন্ঠে অভিভাবকদের সামনে তুলে ধরে। লাঞ্চনা ও বঞ্চনা এখানেই শেষ নয়, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম ঋষি শিশুদের অভিভাবকদের সাথেও খারাপ আচরন করে। উল্লেখিত ঘটনাগুলি উক্ত প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম, দিপ্তী ম্যাডাম এবং মুনমুন দ্বারা প্রতিনিয়তই ঘটে থাকে। দলিত শিক্ষার্থীদের সাথে অমর্যাদাকর ও বৈষম্যমুলক আচরনের প্রতিবাদে বালিয়াডাঙ্গা ঋষিপল্লীর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগমের সাথে তাঁর মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি এবং অন্যান্য শিক্ষকরা দলিত শিক্ষার্থীদের সাথে কোন প্রকার অমর্যাদাকর ও বৈষম্যমুলক কোন আচরণ করেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।