কেশবপুরে গৌরীঘোনায় এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ!! ইজ্জতের মূল্য দেড় লাখ টাকা জরিমানার অর্ধেকের বেশী শালিসকারীদের পকেটে

55
কেশবপুর
কেশবপুর

আজিজুর রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি:  কেশবপুরে গৌরীঘোনা ইউনিয়নে (১৫) বছরের এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষিতার বাবা-মা এলাকার শালিসকারীদের জানালে তারা বিষয়টি গ্রাম্যভাবে মীমাংসা করে দেবেন বলে থানায় অভিযোগ করতে দেয়নি। অভিযুক্তকে বাঁচাতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মীমাংসার নামে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের হুমকির মুখে ঘটনা চেপে রাখতে বাধ্য হয় ওই কিশোরীর পরিবার। বুধবার কেশবপুর উপজেলার গৌরীঘোনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।অভিযুক্ত ইউনুস ফকির (৫০) ওই গ্রামের বাসিন্দা গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

কিশোরীর পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে মায়ের সাথে মাঠে যায় ওই কিশোরী। সেখান থেকে একা বাড়িতে আসার পথে মিষ্টি কিনে দেয়ার কথা বলে গৌরীঘোনা বাজারের নিজের রাইচ মিলঘরে ডেকে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে ইউনুস ফকির। ওই সময় বৃষ্টি এলে কুলসুম নামে এক নারী মিলঘরে আশ্রয় নিতে যেয়ে ধর্ষণের ঘটনা দেখে ফেলে। বিষয়টি তিনি বাড়িতে যেয়ে মেয়ের পরিবারকে জানায়। পরে পরিবারের কাছে ধর্ষণের বিস্তারিত ঘটনা জানায় ওই প্রতিবন্ধী কিশোরী। এ ব্যাপারে মেয়ের পরিবার স্থানীয় সাবেক এক চেয়ারম্যানের কাছে জানায়। তিনি গৌরীঘোনা বাজারে মিতালী সংঘ নামে একটি ক্লাবে এবিষয়ে অভিযোগ করতে বলেন। অভিযোগের পর ওই ক্লাবে বসেই ঘটনাটি মিমাংসা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সময় ওই চেয়ারম্যানের ভাইপো শফিকুল ইসলাম ধর্ষকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া হয়। রবিবার রাতে সালিশের নামে এলাকার মাতব্বররা গোপনে মোটা অংকের টাকা নেয় ইউনুস ফকিরের কাছ থেকে। পরে ভুক্তভোগী গরিব প্রতিবন্ধী কিশোরীর পরিবারকে নামমাত্র টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন ধর্ষিতার পরিবার। জরিমানার অর্ধেকের বেশী টাকা মাতবারদের পকেটে গেছে বলে জানা গেছে। তারা বলেন, এলাকার মাতব্বর শফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদসহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি বিভিন্ন ভাবে আমাদেরকে চাপ প্রয়োগ করে থানায় অভিযোগ দিতে দেয়নি এবং রবিবার রাতে সালিশ করে ধর্ষক ইউনুস ফকিরকে জরিমানা করেন।

কিশোরীর স্বজন ও একাধিক এলাকাবাসীর অভিযোগ, ধর্ষক ইউনুস ফকিরকে বাঁচাতে আপোস-মীমাংসার জন্য চাপ দেয় স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন। এরপর থেকে বিভিন্ন হুমকি আর ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন ধর্ষকের স্বজন ও প্রভাবশালীরা। এক পর্যায়ে ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। অব্যাহত হুমকির মুখে মামলা না করে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় কিশোরীটির পরিবার। গৌরীঘোনা ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এব্যাপারে গৌরীঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ঘটনা সত্য, তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে আমার কাছে অভিযোগ না করায় আইনগত কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি। শুনেছি মিতালী সমাজ সেবা সংঘ নামে একটি ক্লাবে বসেই সালিশের নামে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। তারপরও আমি ঘটনা জানতে পেরে ভেরচী পুলিশ ক্যাম্পের আইসিকে জানিয়েছি। তিনি আরও জানান, এলাকার বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে ওই ক্লাবে সালিশ বিচার করা হয়। সেখানে জুয়ার আসরও বসানো হয় বলে শুনেছি। সাবেক এক চেয়ারম্যানের অনুসারীরা যা নিয়ন্ত্রণ করে।

ধর্ষণের সালিশের সাথে জড়িত শফিকুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় কিশোরীর পরিবার থেকে ক্লাবে অভিযোগ করা হয়েছিল। বিষয়টির সত্যতা যাচাই ও মিমাংসার জন্য ক্লাবে বসা হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্ত ইউনুস ফকির হাজির না হওয়ায় কোন কিছু করা যায়নি।

এব্যাপারে বিএনপি নেতা ইউনুস ফকির জানান, ঘটনা মিথ্যা, পাওনা টাকা না দেয়ার জন্য ওই পরিবার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।

ভেরচী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক তারিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শুনেছি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আব্দুল্লাহ জানান, তিনি আজ (মঙ্গলবার) ঘটনাটি জানতে পেরেছেন। জানার পর তাৎক্ষনিক ভেরচী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী কিশোরীর পিতামাতাকে নিরাপত্তা দিয়ে থানায় নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ধর্ষণের কোন ঘটনা সালিশ যোগ্য নয়। এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।