হিন্দু স্ত্রীর শেষকৃত্য করতে গিয়ে বিপাকে মুসলিম স্বামী! অতঃপর…….

93

ধর্ম বিশ্বাসে তিনি সবসময়েই ছিলেন একজন হিন্দু। তাই শেষ ইচ্ছেও ছিল, অন্তেষ্ট্যি এবং শেষকৃত্য যেন হিন্দু রীতি মেনেই হয়। স্ত্রী’র এই বিশ্বাসকে সবসময়ে সম্মান দিয়ে এসেছেন স্বামী। শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে গিয়েই এক অপ্রত্যাশিত বাধার মুখে পড়েছেন ইমতিয়াজুর রহমান।

হিন্দু নারী নিবেদিতা ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী যুবক ইমতিয়াজুর রহমানকে। কিন্তু তাদের কুড়ি বছরের দাম্পত্য জীবনে ধর্ম কখনই প্রাধান্য পায়নি।

রাজ্য সরকারের বাণিজ্যিক কর দফতরের সহকারি কমিশনার ইমতিয়াজু্র। দীর্ঘ অসুস্থতার পর দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার স্ত্রী নিবেদিতা ঘটক রহমানের সম্প্রতি মৃত্যু হয়। স্ত্রীর ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েই হিন্দু মতে দিল্লির নিগম বোধ ঘাটে দাহ করা হয় নিবাদিতার দেহ।

কিন্তু সমস্যা শুরু হয় তার ঘন্টাখানেক পর থেকে। ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমার মোবাইলে মন্দির কর্তৃপক্ষ হঠাৎই ফোন করেন। তারা বার বার আমার নাম জিজ্ঞাসা করেন। তখনই আমার সন্দেহ হয়।’

কৃত্তিকাও সেই সময় সামনেই ছিলেন। তিনি বলেন,’এর পর আবার ওরা ফোন করে জানতে চান, নিবেদিতা ঘটকের কে হয় জামাইবাবু? প্রথমে ওদের ধারণা ছিল, সম্পর্কটা শ্বাশুড়ি-জামাইয়ের। কিন্তু জামাইবাবু পরিষ্কার জানান যে, তার স্ত্রীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হবে। আর সেই কাজ করবে তাদের একমাত্র মেয়ে ইহিনি আমব্রিন।’

তারপরেই মন্দিরের অফিস থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে তারা ওই বুকিং দিতে পারবেন না। ইমতিয়াজুর বলেন,’ওরা সরাসরি কোনও কারণ দেখাননি। খালি বলেছিলেন, তাদের নাকি আগে থেকে কোনও বুকিং রয়েছে।

আর সেই কারণেই তারা বুকিং বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছেন। তখন আমি বলি, আমরা তো যখন গিয়েছিলাম, তখন তো আপনারা কোনও বুকিং নেই দেখেই আমাকে বুক করতে দিয়েছিলেন। তারপরেও কেন ক্যানসেল? প্রশ্ন করায় ফোনের ওপার থেকে জবাব আসে, আপনি যা বোঝার বুঝে নিন।’

রীতি মেনে ঠিক ১১ দিনের মাথায় শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের জন্য ইমতিয়াজুর বেছে নেন দক্ষিণ দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক কালী মন্দিরকে। আর সেখান থেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে বাধাটা আসে। নিবেদিতা অসুস্থ থাকাকালীন তার লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। সেই সময় নিবেদিতাকে নিজের লিভারের অংশ দিয়েছিলেন তাঁর বোন কৃত্তিকা। এখনও তার চিকিৎসা চলছে দিল্লিতে। গোটা ঘটনার সাক্ষী তিনি।

বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে কৃত্তিকা বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় জামাইবাবু সি আর পার্ক কালীমন্দিরে গিয়েছিলেন শ্রাদ্ধের জন্য জায়গা বুকিং করতে। মন্দির কর্তৃপক্ষ আগামী রবিবারের জন্য বুকিংও নেন। তার জন্য নির্দিষ্ট ১ হাজার ৩০০ টাকা নিয়ে তারা রশিদ দিয়েছিলেন।’

তিনি ইমতিয়াজুর আর তার দিদির প্রথম জীবন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘জামাইবাবু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্সি ভাষার ছাত্র। দিদি বাংলার। দিদি দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী স্কুলে পড়াতেন। আপাত অনেক পার্থক্য থাকলেও ওদের গড়িয়ার বাড়িতে সবসময়ে দেখেছি পরস্পরের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা। আর সেখানেই আঘাত আসায় জামাইবাবু ভেঙে পড়েছেন।

বৃহস্পতিবার ইমতিয়াজুরের কথায় কোনও বিদ্বেষ ছিল না। তিনি বলেন,’আমি কালীমন্দির কর্তৃপক্ষকে কোনও দোষ দিচ্ছি না। হতেই পারে তাদের রীতি অনুসারে, আমার ধর্মের কারণে তারা অনুমতি দিতে পারছেন না। কিন্তু সেটা তারা প্রথমেই করলেন না কেন? বুকিংয়ের সময়তেই তো তারা সবটাই জানতেন।’

চিত্তরঞ্জন পার্ক কালী মন্দির সোসাইটি ফেরালেও, শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এসেছেন সি আর পার্কেরই দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন মেমোরিয়াল সোসাইটি। কৃত্তিকা বলেন, ‘ওরা কথা দিয়েছেন। ওদের চিত্তরঞ্জন ভবনেই রবিবার দিদির শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হবে। ওরাই পুরোহিতের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন।’সূত্র: আনন্দ বাজার