সিংগাইরের জায়গীর বাজারে প্রতিদিন বসছে দিনমজুরের হাট

168
সিংগাইরের জায়গীর বাজারে প্রতিদিন বসছে দিনমজুরের হাট

মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম খান, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিংগাইরের জায়গীর বাজারে প্রতিদিন বসছে দিনমজুরের হাট। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত শত শত দিনমজুর প্রতিদিনই ভীড় জমাচ্ছে এখানে। ভীড় জমাচ্ছে বিভিন্ন এলাকা হতে দিনমজুরের সন্ধানে ছুটে আসা কৃষকেরা। আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে এমন একটি হাট পেয়ে কৃষক-দিনমজুর সকলেই মহাখুশি।

মানিকগঞ্জ জালার সিংগাইর উপজেলাধীন ধল্লা ইউনিয়নের সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা, ছায়া-সুনিবিড় একটি গ্রাম জায়গীর। হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের হেমায়েতপুর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে, আর সিংগাইর থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্বে এই জায়গীর গ্রামের অবস্থান। এই গ্রামে এই আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে প্রতিদিন সকালে বসে জাগীর বাজার। বিকালে মিলে হাট। এর সাথে পাল্লা দিয়ে এখানেই, আঠালিয়া-জায়গীর সংযোগ সড়কের আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন ব্রীজে জমে উঠে দিনমজুরের হাট। আর এই দিনমজুরদের নেওয়ার জন্য প্রতিদিন এখানে ভীড় জমায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসা শত শত গৃহস্থ-কৃষক। তারা তাদের কৃষি খামারে কাজ করার জন্য কিনে নিয়ে যায় দিনমজুরদের।

রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, চাপাই নবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মানুষ এখানে এসে জমায়েত হয় এ এলাকার কৃষি খামারে দিনমজুর খাটার জন্য। কারো হাতে কাস্তে-মাথাল। কারো হাতে বাঁশের বাহুক। কারো হাতে বিছানাপত্র। কারো হাতে পরনের জামা-কাপড়ের ব্যাগ। আবার কারো হাতে মশারী। কেউ কেউ আবার এসেছে ৪/৫ জন, ৫/৭ জনের দল বেঁধে মাটি কাটার উদ্দেশ্যে। তাদের মতে মাটি কাটা কাজের মজুরী বেশী। এতে বেশী লাভবান হওয়া যায়। তাই তারা মাঠের কাজের পরিবর্তে মাটি কাটতে বেশী আগ্রহী। মাটি কাটে ঠিকাদার হিসাবে, ঠিকা ভাউতে। মাটি কাটার স্থান আর ভরাটের স্থানের দূরত্বের পার্থক্য ভেদে এক এক স্থানের মজুরী এক এক রকম।

ফসলের মাঠে – কৃষি কাজে খাটা দিনমজুরের মজুরী সকাল থেকে সন্ধ্যা ( মাগরিবের আযান) পর্যন্ত ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। আবার পানি-কাঁদার মধ্যে বা বোঝা বহনের কাজ হলে মজুরী একটু বেশী, ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত । তবে এই দর বছরের বিভিন্ন সময়ে চাহিদা অনুপাতে উঠা নামা করে। এই তো ১৫/২০ দিন আগে ইরিধান কাটার মৌসুমে এ দর ছিলো ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এরা কাজ করে এখানে থেকে। সারাদিন কাজ করার পর তারা গৃহস্থের বাড়ী, বাজারে দোকানের বারান্দায়, অথবা ঘর ভাড়া করে রাত্রি যাপন করে। আবার সকালে চলে যায় কাজে। গৃহস্থ বা কৃষকের সাথে চুক্তিপত্র হয় সাধারণত সন্ধ্যায় – আসরের সময় থেকে এশার আযান পর্যন্ত।

যারা রাতে চুক্তিবদ্ধ হতে না পারে, তারা চুক্তিবদ্ধ হয় ফজরের নামাজের পর-সকালে। এখানে এসে যে কেউ তাদের সাথে কথা বলে যত দিন পর্যন্ত কাজ শেষ না হয় তাদেরকে আপনার বাড়ীতে রেখে কাজ করিয়ে নিতে পারেন। এরা সাধারণত ২০/৩০ দিন এখানে থাকে। ঘরে ফিরে কাজ করে, পকেটে টাকা নিয়ে। কেউ যায়। আবার কেউ আসে। এ ভাবেই চক্রাকারে সারা বছর জমতে থাকে এ দিনমজুরের হাট। দেশের যে কোন স্থান হতে যে কেউ বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি, মটর সাইকেল অথবা যে কোন বাহনে করে এখানে আসতে পারেন খুব সহজেই….!