সাতক্ষীরা ইনকাম ট্যাক্সের অফিস সহায়ক মাহমুদুলের নামে,বে-নামে ১২ কোটি টাকার সম্পদ

316
মাহমুদুলের নামে, বে-নামে ১২ কোটি টাকার সম্পদ

খলিলুর রহমান : জিরো থেকে হিরো, পিয়ন থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া এক যাদুকরী গল্প জন্ম দিয়েছে সাতক্ষীরা আয়কর অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী অফিস সহায়ক শেখ মাহমুদুল ইসলাম। এক সময়ের তালা উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের দিনমজুর মৃত শেখ তমেজউদ্দীনের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মাহমুদুল ইসলাম। অন্য ২ ভাই এখনও অন্যের ক্ষেতে দিনমজুর খেটে জীবন জীবিকা নির্বাহ করলেও পিয়ন মাহমুদ পাটকেলঘাটা বাজারে নামে বেনামে অঢেল সম্পদ সহ থাইগ্লাসের আলিশান বাড়ি গড়ে তুলেছে। বর্তমান তার অবৈধ অর্থের দাপটে যশ, খ্যাতি তার পায়ে লুটিত।

এ সংক্রান্তে ২০১৬ সালে সাতক্ষীরার একটি দৈনিক পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যসম্বলিত একটি সংবাদ প্রকাশ পেলে মাহমুদ নিজের অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ রক্ষা করতে নিজেই চাকরী থেকে অব্যহতি নেয়। কিছুদিন আইনের মারপ্যাচ আর সম্পদ রক্ষায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে এখন তৈরী হয়েছে চোরাচালানের অন্যতম গডফাদার। যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সরকারের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রয়েছে বলে সূত্র জানায়। তার বিরুদ্ধে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘ ১ যুগের বেশী ইনকাম ট্যাক্স সাতক্ষীরা অফিসে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী (পিয়ন) পদে কর্মরত থেকে উপরতলার কর্তা ব্যক্তিদের সাথে যোগসাজসে সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত চোরাচালানী রুট ও চোরাচালানীদের অবৈধ অর্থের বৈধতা দিতে নিজেই কামিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

যে টাকায় তার স্ত্রী নাছিমা বেগমের নামে পাটকেলঘাটা বাজারের সবচেয়ে উচ্চমূল্যের রাজেন্দ্রপুর মৌজার ১৪৯ দাগে ১৭ শতক, ১৫০ দাগে ৮.৫ শতক, ১৪৭ দাগে ৯ শতক। পাটকেলঘাটা চৌরাস্তা মোড়ে ৮১ দাগে ১ শতক জমি ক্রয় করেছেন। ১৭ শতকের সুইমিং পুল, সাথে ৪৭ দাগের ৯ শতক জমিতে ৩ তলা আলিশা বাড়ি। অন্য ৯ শতকে রয়েছে দোকান ও ফ্লাট বাড়ি। একই মৌজার সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কে পল্লী বিদ্যুৎ সদরদপ্তর অফিসের পশ্চিম পাশে ১১ শতক জমি মাহমুদুল নিজের নামে ক্রয় করে। এখন সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। ক্ষমতা আর অর্থের দাপটে সাধারণের মধ্যে নিজেকে সাহেব বানিয়ে দম্ভের সাথে বলে আমি এখন টুইন টাওয়ার তৈরী করছি। যেখানে লেগে আছে রক্তের দাগ। দরিদ্র পরিবারে পরিশ্রমী বিন্দু বিন্দু ঐ সম্পত্তির সামনেই প্রায় ৫ শতক সম্পত্তিতে সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে স্থানীয় আবুল হাশেম ও তার স্ত্রী সন্তানরা ৩ যুগেরও অধিক ধরে বাসাবাড়ি নির্মাণপূর্বক জীবিকা নির্বাহ করত। তাদেরকে টাকার জোরে স্থানীয় প্রশাসন আর রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে দিনের আলোয় তছনছ করে ভেঙে দেয়া হয় তাদের কুঠির।

রাতারাতি নির্মাণ শুরু হয় বহুতল ভবন। যা এখন চলমান। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, তার কন্যা উর্মীর নামে পাটকেলঘাটার ৫ রাস্তা মোড় সংলগ্ন উর্মী এন্টার প্রাইজ গড়ে তোলেন। যেখানে চোরাচালানীর সমুদয় হিসাব করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াপাড়ায় পৈত্রিক সম্পত্তি বলতে ভিটাবাড়ি ছাড়া কিছুই ছিল না। কিন্তু স্থানীয় সিদ্দিক মল্লিকের নিকট থেকে ৪ বিঘা জমি ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে মাহমুদুল নিজের নামে ক্রয় করেছে। ব্যবহার করেন এক্সকোল্ডার নেভিব্লু কালারের প্রাইভেটকার। যার নং- সাতক্ষীরা-গ-১১-০০০৮। তার নিজের নামে পাটকেলঘাটা পোষ্ট অফিসে ৪০ লক্ষ টাকা এফডিআর রয়েছে। নিজের নামে, সন্তান, স্ত্রীর নামে-বেনামে প্রায় ১২ কোটি টাকার সম্পদ তার বর্তমানে রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিন সাতক্ষীরার ইনকাম ট্যাক্স অফিসে চাকুরীর সুবাদে আইকর ফাইল খোলার নামে কোটি কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য করেছে মাহমুদুল। সবসময় চলাফেরা শিল্পপতিদের সাথে, নিজেকে শিল্পপতি সাজাতে কখনো প্রাইভেট কারে কখনো অত্যাধুনিক মোটরসাইকেলে চলাফেরা করে।

২ কন্যা সন্তানের মধ্যে বড় কন্যা সন্তান উর্মিকে ৪ বছর খানেক পূর্বে ঢাকঢোল পিটিয়ে কোটি টাকার উপঢৌকন দিয়ে একই এলাকার মাসুদ বিশ্বাসের পুত্র শুভ বিশ্বাসের সাথে বিয়ে দেয়। উল্লেখ্য মাসুদ বিশ্বাস বালিয়াদহ গ্রামের ঢনাঢ্য অতীত ঐতিহ্যবাহী পরিবারে বংশধর হলেও একসময়ের দিনমজুর পিতার পুত্র মাহমুদুলের সম্পদের কাছে সন্তানকে সমার্পণ করেছে। এখন মাহমুদুলের অবৈধ সম্পদ বৈধতা দিতে উভয় পরিবার একাট্টা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশীদের দাবী সরকারী অফিসের একজন ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী পাটকেলঘাটা বাজারের উপর ১ কোটি টাকা মূল্যের জমিতে কোটি টাকার আলিশান বাড়ি ও কোটি টাকার গার্মেন্টস ব্যবসা কিভাবে করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান তৈরী করলেও মাহমুদুল ইসলাম দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়। তার বিরুদ্ধে সচিত্র প্রতিবেদন সাংবাদপত্রে প্রকাশ পেলে সে নিজেকে রক্ষা করতে চাকরী থেকে অব্যাহতি নেয়।