
মো. জাবের হোসেন : পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী হত্যার অভিযোগ উঠেছে। পরকীয়া প্রেমিক এবং নিজে মিলে নিজ স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ঘটনাটি পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা ইউনিয়নের বুধবার (২ মার্চ) রাতের।
পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদের ভাই এবং মোহাম্মদ আলী মোড়লের পুত্র গোলাম হোসেন মোড়ল (৪০) কে মঙ্গলবার (১মার্চ) রাতে তার স্ত্রী মোছা. রেহেনা খাতুন (৩৫) গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোঁধ করে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত গোলাম হোসেন মোড়ল একই এলাকার ত্রিশ মাইলে অবস্থিত রায়হান অটো রাইচ মিলে কাজ করতো।

বুধবার ভোরের দিকে রেহেনা খাতুন এলাকায় ঘোষণা দেন তার স্বামী স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তবে স্থানীয়রা এসে দেখেন মরদেহের গলায় ফাঁস লাগানো চিহ্ন রয়েছে। হাতের বাহুতেও জখমের চিহ্ন। এ চিহ্ন দেখে তারা পুলিশকে খবর দেন।
ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামের হান্নান আলী মোড়লের মেয়ে মোছা. রেহেনা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাদের সংসারে দুই পুত্র নিয়ে সংসার করছিলেন তারা। বড় ছেলে নাজিম হাসান সাগর (২১) সাতক্ষীরা পলিটেকনিক স্কুল এবং কলেজে পড়েন। ছোট ছেলে মো. সাব্বির হোসেন পড়েন নগরঘাটার বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক স্কুলে।
নিহতের ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার ভাই গোলাম হোসেন মোড়লের বাড়ি থেকে আমার বাড়ি একশ থেকে দেড়শ গজ দূরে। মঙ্গলবার (১মার্চ) রাতে আমার ভাইয়ের ছেলে সাগর আমার বাড়িতে গিয়ে আমার আম্মাকে ডেকে বলে বাবার শরীর খারাপ। তখন আমি শুনতে পেয়ে এগিয়ে যেয়ে বলি শরীর খারাপ মানে? তখন ভাইপো বলে বাবার বুকের মধ্যে ব্যাথা করতেছে। আমি বললাম ডাক্তার ডাকো, এ কথা বলে আমি তক্ষুণি ওই বাড়ি চলে যায়। যেয়ে দেখি ভাই মারা গেছেন।
তিনি আরো বলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে গলায় এবং হাতে কেনো দাগ থাকবে? গোলামের গলায় দাগ রয়েছে, এছাড়া হাতের বাহুতে দাগ রয়েছে। আমার ধারণা গোলামের স্ত্রী তাকে শ্বাসরোঁধ করে হত্যা করেছে।
স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পাটকেলঘাটা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কৃঞ্চপদ সামাদ্দার টিম সহ বুধবার সকালেই ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে লাশ উদ্ধার করেন। বুধবার (২ মার্চ) দুপুর ১২ টা দিকে মুঠোফোনে জানান, লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু লাশের গলায় সন্দেহজনক দাগ রয়েছে সেহেতু হয়তো তাকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করছি। তবে সঠিক তথ্যের জন্য লাশের ময়না তদন্তের রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত সঠিক ঘটনাটি বলা সম্ভব হচ্ছেনা। বুধবার দিনব্যাপী ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং সুরতহাল করেন এসআই কৃঞ্চপদ সামাদ্দার।
বুধবার বিকালে ঘটনার সঠিক তদন্তের জন্য নিহত গোলাম হোসেন মোড়লের স্ত্রী মোছা. রেহেনা খাতুন (৩৫), বড় ছেলে নাজিম হাসান সাগর (২১) এবং পরকীয়া প্রেমিক গোলাম রাব্বি (৩০) সহ তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে পাটকেলঘাটা থানা পুলিশ।
এদিকে হত্যার ঘটনায় বুধবার সকাল থেকে এলাকায় লোকমুখে বলাবলি হতে থাকে রেহেনার পরকীয়ার কথা। এক পর্যায়ে ঘটনার প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় লোকমুখে। বুধবার দুপুরেই পরকীয়া সম্পর্কের জেরে হত্যা করে হয়েছে বলে জানা যায়। রেহেনা খাতুন স্বামী গোলাম হোসেন মোড়লকে যে রশি দিয়ে শ্বাসরোঁধ করে হত্যা করেছেন সেটি পুলিশ উদ্ধার করেছে।
আরো জানা গেছে, রেহেনা খাতুনের সাথে গোলাম রাব্বি (৩০)-র দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। গোলাম রাব্বির বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। সে নগরঘাটা ত্রিশ মাইলে অবস্থিত রাকিব অটো রাইচমিলে কাজ করতো। মাসিক ৩ হাজার টাকায় নিহত গোলাম হোসেন মোড়লের বাড়িতে থাকতো-খেতো। নিহত গোলাম হোসেন মোড়লের বউ রেহেনা খাতুন তাকে রান্না করে দিতো আর তার বাড়িতেই গোলাম রাব্বি তিন বেলা ভাত খেতো। সে-সুবাদে পরকীয়ার জড়িয়ে পড়ে রেহেনা এবং গোলাম রাব্বি। কয়েকবার নাকি তাদের অনৈতিক সম্পর্ক এলাকাবাসী ধরার পরেও তারা সংশোধন হয়নি।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১ মার্চ) রেহেনা খাতুন এবং গোলাম রাব্বি রাতের কোনো এক সময় অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় রেহেনার স্বামী গোলাম হোসেন মোড়ল দেখে ফেলে। আর তাতেই বাঁধে সমস্যা। এক পর্যায়ে রেহেনা তার পরকীয়া প্রেমিক গোলাম রাব্বিকে সাথে নিয়ে স্বামী গোলাম হোসেন মোড়লকে রশি দিয়ে শ্বাসরোঁধ করে হত্যা করে। পরে রেহেনা সকলের নিকট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে স্বামী গোলাম হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন বলে প্রচার দিতে থাকে।
পাটকেলঘাটা থানার তদন্ত কর্মকর্তা বাবলুর রহমান খাঁন জানিয়েছেন, ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা দায়ের হওয়ার পর বিস্তারিত জানানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে সুরতহালের সময় লাশের গলায় মারাত্মক দাগ এবং বাহুতে দাগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন।
বুধবার বিকালে ময়না তদন্ত শেষে পারিবারিক কবরস্থানে নিহত গোলাম হোসেন মোড়লের দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
