মোঃ খলিলুর রহমান : সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে ভোমরা স্থলবন্দর সড়কের পাশেই অবস্থান গ্রামের নাম গাংনি। এখানেই আকষ্মিক আবির্ভাব সব রোগের এক বিশেষজ্ঞ ডা: মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের।
বাড়ির সামনে হোমিওপ্যাথিক কোসের একটি সাইনবোর্ড সেটে নিজেকে হোমিও ডাঃ হিসেবে পরিচয় দিলেও তিনি তার ব্যবস্থা পত্রে রয়েছে,ঝাঁড়-ফুঁক,পানি ও তেল পড়া।প্রতিদিন কাঁক ডাকা ভোর হতে শুরু করে মধ্যরাত অবধি কথিত ডাক্তারের বাড়িতে ভীঁড় জমাচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ের রোগী সাধারণ। তবে রোগীদের মধ্যে বেশীর ভাগই মহিলা।
স্থানীয়রা জানায়,এভাবে প্রতিদিন তেল পড়া,পানি পড়াসহ ঝাঁড়-ফুঁকে ডা: কামরুল কবিরাজ হাতিয়ে নিচ্ছেন ৪০/৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগে জেলা সদরের হাসপাতাল রেখে কি এমন চিকিৎসা দিচ্ছেন কামরুল যার কারণে সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন রোগী সাধারণ?এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সরেজমিনে উঠে আসে অজানা অনেক তথ্য।
গাংনির মোহাম্মদ কামরুজ্জামান নিজেকে পেশায় একজন বীমা কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। বর্তমান হোমিওপ্যাথিতে ডাক্তারী কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তাই নামের আগে বিশেষণ বাড়িয়ে হয়েছেন ডাক্তার। তবে ডাক্তারের লেবাস লাগিয়ে মোহাম্মদ মূলত ঝাঁড়-ফুঁক আর তেল পড়া পানি পড়াতেই সৃষ্টি করেছেন চমক।
গত ২৪ আগস্ট দুপুর ১ টায় তার গাংনির আস্তানায় গিয়ে দেখা যায়, শ’ শ’ রোগী সিরিয়াল দিয়ে বসে পড়েছেন চিকিৎসা সেবা নিতে। এসময় সিরিয়াল লিখতে ব্যস্ত মুহুরীর কাছে সিরিয়াল নং জানতে চাইলে উত্তর ১৪৪। বাস্তবেও তাই। ডাক্তারের সাথে একান্তে বলাটাও রীতিমত ১৪৪ ধারার মত। রোগীদের ভীঁড় এতটাই বেশি যে, তার আস্তানার আশে-পাশে রাতারাতি যেন বাজার বসেছে।
এসময় চিকিৎসা নিতে আসা ঘোনা গ্রামের মরিয়াম বেগম জানান, তিনি ডায়বেটিকসের রোগী। চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা শুনে তার কাছ থেকে তেল পড়া ও পানিপড়া নিয়ে এখন তার ডায়াবেটিকস নাকি নিয়ন্ত্রণে।
এসময় চিকিৎসা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সেবা নিতে আসা অন্যান্য রোগীরা জানান,তাদেরকে বলা হয়েছে,সমস্যা জটিল তাই আসতে হবে দীর্ঘ দিন। তবে নিরাশ হতে হবেনা। তার ঝাঁক-ফুঁকে কাজ হবেই। এমনটাই আশ্বস্থ করেছেন খোদ ডাক্তার নিজেই। আশ্বাসেই চিকিৎসা নিতে আসেন অনেকে। জানালেন,উপস্থিতিদের কেউ কেউ। তবে প্রতিবারই ফি-সহ, হোমিওপ্যাথিক মেডিসিনের সাথে তেল ও পানিপড়া নিতে তাকে দিতে হয়, ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা।
ব্যাপক ভীঁড়ের মধ্যেও কথা হয়,হোমিওপ্যাথির ঝাঁড়-ফুঁকের ডাক্তার কামরুজ্জামানের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদকের নিকট অকপটে স্বীকার করেন, হোমিওর পাশাপাশি তার দেয়া তেল ও পানিপড়ায় মানুষের নাকি উপকার হচ্ছে, তাই রীতিমতো ভীড় জমেছে।
এসময় নিজেকে ক্ষমতাধর প্রমাণ করতে সাংবাদিককে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আবু জাফর নামের এক কর্মকর্তার সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দেয়। ফোনে কথা বলা ব্যক্তি প্রথমে নিজেকে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা দাবী করে জড়সড়স্বরে এ প্রতিবেদককে ধমক দিয়ে উল্টো বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। তবে প্রতিবেদকের কৌশলী কথোপকথনে ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি কলারোয়ার সন্তান বলে কথা না বাড়িয়ে ফোনটি কেটে দেন। তবে এতেই রহস্য বেড়েছে। গুণী ডাক্তারের সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে তিনি কেন সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্তাকে ধরিয়ে দিলেন ফোনে? আসলে অপর প্রান্তের ব্যক্তি কি সরকারের কোন বড় কর্তা? আর যদি সত্য হয় তার কথা,তাহলে তার কিসের সম্পর্ক হাতুড়ে ডাক্তারের সাথে? ইতোপূর্বে কামরুল ডাক্তার কি কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন? যে কারণে আগে থেকেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন কর্তাদের সাথে? নাকি কর্তা পরিচয়ের ব্যক্তি অন্য কেউ? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকাবাসীর পাশাপাশি সংবাদ কর্মীদের মধ্যেও।
এসময় ডাক্তারের একান্ত সহকারী এ প্রতিবেদককে জানান,আগের দিন ২৩ আগস্ট ৪শ রোগী দেখেছেন তার স্যার। আসলেই কি কাজ হচ্ছে এ পানি পড়ায়? নাকি অন্তরালে অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তর মেলাতে এলাকাবাসী সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান ও উন্নত চিকিৎসার যুগে মান্দাতার আমলের তেলপড়া, পানিপড়া কবিরাজ কিভাবে এমন চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছে জানতে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ শাহিনুর রহমানের নিকট যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দ্রুতই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।