খেলবে ৩২টি দেশ, জয়ী হবে একটি।
কিন্তু এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ১৫ই জুলাই কোন দলটি জয়ী হবে সেটি কি আমরা এখনই অনুমান করতে পারি?
পরিসংখ্যান, ট্রেন্ড, অতীত টুর্নামেন্টের ধরন এসব বিশ্লেষণ করে বিবিসি স্পোর্টস ধাপে ধাপে ৩১টি দেশকে বাদ দিয়ে একটি দেশকে বেছে নিয়েছে শেষ পর্যন্ত যারা চ্যাম্পিয়ন হতে পারে।
তাদের হিসেবে ২০১৮ বিশ্বকাপ ফুটবল জিততে হলে বিজয়ী দলকে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে:
থাকতে হবে সেরা দলগুলোর তালিকায়
১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে যখন ৩২টি দেশ খেলতে শুরু করে তখন থেকে পরবর্তী সবকটি টুর্নামেন্টে এমন দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, যেটি সেরা দলের তালিকাতেই ছিল।
এই তালিকার বাইরে থেকে যে দলটি সবশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেটি ছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ সালে। আর্জেন্টিনাকে শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল দিয়েগো ম্যারাডোনা আর তার ‘ঈশ্বরের হাত দিয়ে’ করা গোল। এই একটি মাত্র বিবেচনা থেকে শুরুতেই ২৪টি দেশকে সম্ভাবনার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো। রইলো বাকি আট।
স্বাগতিক দেশ হওয়া যাবে না
গত ৪৪ বছর ধরে এমন দেশেই বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেগুলো সেরা দলের তালিকায় রয়েছে। একারণে বাড়তি সুবিধা পেয়ে গেল রাশিয়া। বিশ্ব ফুটবলে তাদের র্যাংকিং ৬৬, তাই তারা সেরা আটের ভেতরে থাকতো না, যদি তারা স্বাগতিক দেশ না হতো।
একটা সময় ছিল যখন স্বাগতিক দেশগুলোই চ্যাম্পিয়ন হতো। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর ১৯৩০ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত প্রথম ১১টির পাঁচটিতেই স্বাগতিক দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে গত নয়টি টুর্নামেন্টে স্বাগতিক দেশ মাত্র একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেটি ১৯৯৮ সালে। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স। তার অর্থ হলো স্বাগতিক দেশ হওয়া এখন আর সাফল্যে পৌঁছানোর রাস্তা বা চাবিকাঠি নয়।
যেমন চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া অথবা দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯০ সালে স্বাগতিক দেশ হয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ইতালি, ২০০৬ সালে স্বাগতিক দেশ ছিল জার্মানি, কিন্তু সেবারেও শিরোপা তাদের ঘরে উঠেনি। চার বছর আগে বিশ্বকাপ হয়েছিল ব্রাজিলে, সেবারও দেশটি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।
ফলে রাশিয়া বাদ পড়ে গেল। এখন বাকি রইলো সাতটি দেশ।
কম গোল খেতে হবে
যখন থেকে ৩২টি দল নিয়ে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট শুরু হয়, তারপর থেকে যে পাঁচটি দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা কেউই তাদের সাতটি ম্যাচে চারটির বেশি গোল খায়নি।
বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনার তালিকায় যে সাতটি দেশ রয়ে গেছে, বাছাই পর্বের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল রক্ষণভাগ পোল্যান্ডের। প্রতি ম্যাচেই তারা ১ দশমিক ৪টি করে গোল হজম করেছে।
জার্মানি ও পর্তুগাল খেয়েছে প্রতি ম্যাচে শূন্য দশমিক ৪ গোল, বেলজিয়াম ও ফ্রান্স শূন্য দশমিক ৬, ব্রাজিল শূন্য দশমিক ৬১ এবং আর্জেন্টিনা শূন্য দশমিক ৮৮ গোল।
ফলে পোল্যান্ড বাদ। বাকি রইলো ছ’টি দেশ।
হতে হবে ইউরোপের
বিশ্বকাপ বিজয়ীরা শুরু থেকেই হয় ইউরোপের কিম্বা দক্ষিণ আমেরিকার। খুব বেশি দিন আগেও ইউরোপের দেশগুলো বিশ্বকাপে বিজয়ী হতে পারেনি কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাতে স্পেনের সাফল্য এবং ব্রাজিলে জার্মানির জয় গতিপথ বদলে দিয়েছে।
ইউরোপে আয়োজিত টুর্নামেন্টগুলোতে বেশিরভাগ সময়েই ইউরোপের দেশগুলোই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এরকম ১০টি বিশ্বকাপে মাত্র একবার ইউরোপের বাইরের কোন দেশ শিরোপা জিতেছিল। কিন্তু সেজন্যে আপনাকে ফিরে যেতে হবে দূর অতীতে- ১৯৫৮ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল।
ফলে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বাদ দিলে বাকি রইলো চারটি দেশ- ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি এবং পর্তুগাল।
থাকতে হবে সেরা গোলরক্ষক
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে গোলদাতারাই বিশ্বকাপ জিতিয়ে দেয়। কিন্তু ১৯৮২ সালের পর থেকে মাত্র দু’বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দলের কোন খেলোয়াড় সেরা গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট পেয়েছেন- ২০০২ সালে ব্রাজিলের রোনাল্ডো এবং ২০১০ সালে স্পেনের ডাভিড ভিয়া।
দেখা গেছে, বিশ্বকাপে জয়ী হওয়াটা অনেক বেশি নির্ভর করে গোলরক্ষকের পারফর্মেন্সের উপর। গত পাঁচটি টুর্নামেন্টের চারটিতেই সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভ পেয়েছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়া দল থেকেই।
এখন যে চারটি দেশ বাকি আছে তাদের মধ্যে বর্তমানের সেরা গোলরক্ষকরা হচ্ছেন জার্মানির মানুয়েল নয়ার, ফ্রান্সের উগো লরিস এবং বেলজিয়ামের থিবাত কোর্তোয়া। এই হিসেবে বাদ পড়ে যাচ্ছে পর্তুগাল।
এখন ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানি- এই তিনটি দেশ বাকি রইলো।
অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
যেবার থেকে বিশ্বকাপে ৩২টি দেশ খেলতে শুরু করে সেই ১৯৯৮ সালের পর থেকে দেখা গেছে, সাফল্যের পেছনে একটা বড়ো ভূমিকা রাখে অভিজ্ঞতা। সেবছর চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স। তখন ফরাসী দলের প্রত্যেকটি খেলোয়াড়ের অভিজ্ঞতা ছিল গড়ে ২২.৭৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার। চার বছর আগে জার্মানি যখন চ্যাম্পিয়ন হলো তখন তাদের খেলোয়াড়দের প্রত্যেকের গড়ে ৪২.২১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল।
২০০২ সালে ব্রাজিলের ফুটবলারদের এই গড় ছিল ২৮.০৪। ইটালির ২০০৬ সালে ছিল ৩২.৯১ এবং ২০১০ সালে স্পেনের এই হার ছিল ৩৮.৩০।
এখনও যে তিনটি দেশ রয়ে গেছে তার মধ্যে ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে কম। তাদের একেকজন ফুটবলার গড়ে ২৪.৫৬টি করে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। জার্মানির ৪৩.২৬ এবং সবচেয়ে বেশি বেলজিয়ামের- ৪৫.১৩।
ফলে ফাইনাল হচ্ছে বেলজিয়াম ও জার্মানির।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হওয়া যাবে না
বিশ্বকাপে জয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা খুব কঠিন। একমাত্র ব্রাজিলই ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে পরপর দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছে।
গত চারটি টুর্নামেন্টের তিনটিতেই আগের বারের চ্যাম্পিয়ন গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে গেছে।
সাম্প্রতিক বিশ্বকাপগুলোতে জার্মানির পারফরমেন্স দারুণ। গত ন’টি টুর্নামেন্টে (পশ্চিম জার্মানি তিনবারসহ) তারা দু’বার জিতেছে। আরো তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। এবং আরো দুটো বিশ্বকাপে হয়েছে তৃতীয়।
তবে, যখন রাশিয়াতে আবার বিশ্বকাপ জয়ের প্রসঙ্গ আসে তখন ইতিহাস জার্মানির বিপক্ষে।
ফলে, বুঝতেই পারছেন কারা চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে ২০১৮ বিশ্বকাপ ফুটবলে- বেলজিয়াম।
যদি না অন্য কেউ শিরোপা ছিনিয়ে না নেয়।
সূত্র:বিবিসি বাংলা