ইসলামিক ডেস্ক: পবিত্র নগরী মদিনায় উৎপন্ন হওয়া বিশেষ প্রজাতির খেজুর ‘আজওয়া’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম নিজ হাতে এ খেজুর গাছ রোপন করেছিলেন। এ খেজুর গাছ রোপন ও জন্মের পেছনে রয়েছে বিশেষ কারণ। যার ফলে এ খেজুরের রয়েছে বিশেষ বরকত ও ফজিলত। যা তুলে ধরা হলো-
চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য মতে আজওয়ায় খেজুরে আছে
‘আমিষ, শর্করা, প্রয়োজনীয় খাদ্য আঁশ ও স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট। এছাড়া ভিটামিন এ, বি সিক্স, সি এবং কে দ্বারা ভরপুর। ভিটামিন ‘এ’-এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘ক্যারোটিন’ও রয়েছে এতে। ক্যারোটিন চোখের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী। আরও রয়েছে স্বাস্থ্যকর উপাদান ফলেট, নিয়াসিন, থিয়ামিন ও রিবোফ্লেভিন।
বরকতময় খেজুর আজওয়া
এ খেজুরটি সারা দুনিয়ার মানুষের বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে এ খেজুর রোপন করেছিলেন। আর তা রোপনের পেছনে ছিল আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর ঘটনা। আর তাহলো-
ইসলাম গ্রহণের আগে হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন একজন ইয়াহুদির অধীনে ক্রীতদাস। তিনি যখন তার কাছ থেকে মুক্তি চাইলেন, তখন ইয়াহুতি তাকে মুক্তি দিতে আপত্তি জানায়। বারবার বলার পর ওই ইয়াহুদি বাস্তবে অসম্ভব একটি শর্তসহ দুইটি শর্ত জুড়ে দেয়। যা স্বাভাবিকভাবে সম্ভব নয়। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মুক্তি দেবে না।
ইয়াহুদির শর্ত
- অল্প দিনের মধ্যে ৬০০ দিরহাম দেয়া।
- ৩০টি খেজুর গাছ রোপন করে তা পরিচর্যা করে অল্প দিনে খেজুর উৎপন্ন করে পাকিয়ে দেয়া। এ শর্তটি ছিল স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একেবারেই অসম্ভব।
কঠিন শর্ত দেয়ার কারণ
ইয়াহুদি জানতো যে, সালমান ফারসি কোনোভাবে ৬০০ দিরহাম সংগ্রহ করতে পারলেও অল্প সময়ে খেজুর গাছ রোপন এবং তা থেকে অল্প সময়ে খেজুর ফলানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর তার মুক্তি পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। কেননা খেজুর রোপন থেকে ফল উৎপন্ন হওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার।
বিশ্বনবির দরবারে সালমান ফারসি
কোনো উপায় না দেখে হজরত সালমান ফারসি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে ইয়াহুদির দেয়া শর্ত বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৬০০ দিনারের ব্যবস্থা করলেন। তারপর ইয়াহুদির দেয়া এক কাঁদি খেজুর চারা রোপন করতে হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সাথে নিয়ে গেলেন বিশ্বনবি। তিনি দেখলেন খেজুরের বীজগুলো কলো, আগুনে পেড়ানো। ইয়াহুদি এগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে যাতে তা থেকে চারা না গজায়।
বিশ্বনবির নিজ হাত বীজ রোপন
বিশ্বনবি এ বীজগুলো রোপনের উদ্দেশ্যে হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন গর্ত করার জন্য। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে গর্তে বীজ রোপন করলেন। আর সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন বীজ রোপন করা গর্তে পানি দেয়ার জন্য।
সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বিশ্বনবির নির্দেশ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এ দির্দেশ দিলেন যে, বাগানের শেষ প্রান্তে না যাওয়া পর্যন্ত পেছনে ফিরে তাকানো যাবে না। সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু পেছনে না তাকিয়ে পানি দিতে লাগলেন।
বিশ্বনবির অন্যতম মুজিজা
সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বাগানের শেষ প্রান্তে যাওয়ার পর তিনি পেছনে তাকিয়ে দেখলেন যে প্রতিটি গাছ চারা গাছে খেজুরে পরিপূর্ণ। পোড়া খেজুর থেকে গজানো চারা ও খেজুরগুলো পেকে কালো বর্ণ হয়ে গেলো। কারণ এই খেজুরের বীজগুলো ছিলো আগুনে পোড়া কয়লার মতো কালো। তাই এর স্বাদও অনেকটা পোড়া পোড়া গন্ধ। যার নাম আজওয়া।
দুনিয়ার সেরা খেজুর
বিশ্বনবিরে নিজ হাতে পোড়া বীজ লাগানো খেজুরই আজওয়া। যা দুনিয়ার সবচেয়ে দামি ও উন্নতমানের সুস্বাদু খেজুর। এ খেজুরের গুণ, বরকত ও ফজিলত বর্ণনা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে কয়েকটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেই দিন ও রাত পর্যন্ত কোনো বিষ ও যাদু তার কোনো ক্ষতি করবে না। অন্য বর্ণনায়, সাতটি খেজুর খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। (বুখারি) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফজিলত ও বরকতময় আজওয়া খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্যসহ যাবতীয় ক্ষতিকর বিষক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।