যশোর-৬ কেশবপুর আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও চেয়ারম্যান আবু বকর আবু অপহরণের ৫দিন পর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে লাশ উদ্ধার

150

আজিজুর রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি: যশোর-৬ কেশবপুর আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী যশোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কেশবপুরের মজিদপুর ইউনিয়নের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু বকর আবু ঢাকা থেকে অপহরণের ৫ দিন পর ঢাকার কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার মৃত্যুতে শোকে কেশবপুরের বাতাস ভারী হয়ে উঠাসহ তার বাড়িতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। শুক্রবার সকালে লাশবাহি গাড়িতে করে তার লাশ কেশবপুরের মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কিছু সময় রাখা হয়।

সেখান থেকে তাকে নিজবাড়ি বাগদাহ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। আবু বকর আবুর লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌছানো মাত্রই সমবেদনা জানাতে তার বাড়িতে ছুটে যান বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক অধ্যাপিকা নার্গিস ইসলাম। আবুর কফিনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর জেলা বিএনপির পক্ষে সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যশোর নগর বিএনপির পক্ষে সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম, থানা বিএনপির পক্ষে আলহাজ্ব আবুল হোসেন আজাদ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর মশিউর রহমান, পৌর বিএনপির পক্ষে সাবেক মেয়র আল্হাজ্ব আব্দুস সামাদ বিশ্বাস ও চেয়ারম্যান প্রভাষক আলা উদ্দীন আলা, কুতুবুদ্দিন বিশ্বাস, জেলা যুবদলের পক্ষে আনারুল ইসলাম রানা, থানা যুবদলের পক্ষে আলমগীর সিদ্দিক, থানা ছাত্রদলের পক্ষে বাবুল রানা বাবুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অপরদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জেলা পরিষদের সদস্য হাসান সাদেক, সোহরাব হোসেন, কেশবপুর থানার পক্ষে অফিসার ইনর্চাজ মোহম্মদ শাহিন মরহুমের কফিনে পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন।

এদিকে তার মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলসহ সাংবাদিকবৃন্দরা শোক প্রকাশ করেছে। কেশবপুর উপজেলা পাবলিক মাঠে বিকাল ৩ টায় তার নামাজের জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। তার নামাজের জানাজায় রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। কেশবপুরসহ এলাকা জুড়ে কান্নার রোল পড়েছে। তার অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেনা কেশবপুরবাসী।

তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত, যশোর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ্যাডঃ সাবুরুল ইসলাম সাবু, বিএনপির নির্বাহি কমিটির সদস্য ও কেশবপুর থানা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর মশিউর রহমান, পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন আলাসহ বিএনপির সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ। অপরদিকে নামাজের জানাজায় অংশগ্রহণ করেন যশোর জেলা পরিষদের সদস্য হাসান সাদেক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানূর রহমান, সোহরাব হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কাউন্সিলর ইবাদত সিদ্দিকী বিপুল, যশোর জজকোর্টের পিপি এ্যাডঃ রফিকুল ইসলাম পিটু, কেশবপুর নিউজ ক্লাবের সভাপতি আশরাফ্জ্জুামান, নির্বাহী সদস্য আজিজুর রহমান, সদস্য আবু বক্কারসহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ।

আবু বকর আবু কেশবপুর উপজেলা বিএনপির ২২ বছর ধরে সভাপতির দ্বায়ীত্ব পালন করেছিলেন। বর্তমানে আবু বকর আবু যশোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কেশবপুরের মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দ্বায়ীত্ব পালন করছিলেন। চেয়ারম্যান আবু বকর আবুর অপহরণের ঘটনায় তার ভাগ্নে মেহেদী হাসান জাহিদ বাদী হয়ে ২০ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এবং চেয়ারম্যানের ভাতিজা হুমায়ন কবীর বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। উপজেলার বাগদহ গ্রামের মৃত বদরুদ্দীন সরদারের ছেলে আবু বকর আবুর পরিবার সূত্রে জানাগেছে, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু বকর আবু আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ কেশবপুর আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনতে গত ১২ নভেম্বর সোমবার সকালে হানিফ পরিবহনে কেশবপুর থেকে ঢাকায় যান। সেখানে পল্টন এলাকার মেট্রোপলিটন (আবাসিক) হোটেলের ৪১৩ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেছিলেন।

তিনি বিএনপির দলীয় অফিস থেকে মনোনয়ন ফরম কিনে যথাসময়ে জমা দেন। মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাতকারের তারিখ ছিলো ১৯ নভেম্বর দুপুর ২ টার পর। কিন্তু হঠাৎ করে গত ১৮ নভেম্বর রাত ৮ টার পর তিনি ওই হোটেল থেকে অপহরণ হন। তারা আরো জানান আবুকে মুক্তির জন্য পরিবার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেয়া হলেও গত ৪ দিনেও তার কোন মুক্তি বা হদিস মেলেনি। ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে তার সঙ্গী ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ঔষধ কিনতে যান।

ঔষধ কেনার পর ফিরে এসে তাকে আর হোটেল রুমে দেখতে পান না। এর পরপরই রাত সাড়ে ৮ টার দিকে তার ব্যবহৃত সেল ফোন থেকে তার কেশবপুরস্থ ভাগ্নের সেলফোনে কয়েকটি মিসকল আসে। প্রত্যেকবার এ নম্বরটিতে ব্যাক দিলে হ্যালো হ্যালো ছাড়া কোন কথা হয়নি। এরপর এরপর ০৯৬৩৮৮৮৮২০২ নম্বরের মোবাইল থেকে ওই ভাগ্নের কাছে ফোন দিয়ে তার মামার জন্য দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ জন্য ওই রাতে কয়েকটি বিকাশ নম্বরও সরবরাহ করেন অপহরণকারীরা।

কিন্তু রাত ১২ টার পর বিকাশের ট্রানজিট বন্ধ থাকায় সোমবার সকালে অপহরণকারীরা ০১৭৪৮১১০৫৭৭ নম্বর মোবাইল থেকে পুনরায় যোগাযোগ করলে তাদের দেওয়া বিভিন্ন নম্বরে দেড় লাখ টাকা বিকাশ করা হয়। পরবর্তীতে সকাল ৯টার দিকে অপহরণকারীরা দেড় লাখ টাকার প্রাপ্তি স্বীকার করে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। বহু অনুরোধের পর অপহরণকারীরা ২০ হাজার টাকা বিকাশ করার জন্য ২টি নম্বর সরবরাহ করে বলেন, ওই টাকা পাওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে আবু বকর আবুকে ওই হোটেলের সামনে ছেড়ে আসা হবে। সাড়ে ১০টার দিকে ২০ হাজার টাকা বিকাশ করার পরও তাকে ছাড়া হয়নি এবং তারা আর মোবাইল রিসিভ করেনি।

দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে অপহরণকারীদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। আবু বকর আবু’র মোবাইল ফোনটি বন্ধ ছিল এবং তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। অবিবাহিত ৭০ বছর বয়সী আবু বকর আবু’র ছোট বোন আঞ্জুমানারা বলেন, আমার ভাই কেশবপুরের বিএনপি নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ফেসবুক পেজে ভাইয়ের লাশের ছবি দেখে শনাক্ত করেছি।