আজিজুর রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি: যশোর-৬ কেশবপুর আসনটি জেলার ভি আইপি আসন হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। কেশবপুর ৬ এই উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১১ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ইউনিয়ন গুলি হলো ত্রিমোহীনি, সাগড়দাড়ি, মজিদপুর, বিদ্যানন্দকাটি, মঙ্গলকোট, কেশবপুর সদর, পাঁজিয়া, সুফলাকাটি, গৌরিঘোনা, সাতবাড়িয়া ও হাসানপুর। এই উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নে সর্বশেষ ভোটার সংখ্যানুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ৫শ ৩৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৭ হাজার ১শ ১ জন, ও মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৯৬ হাজার ৪ শত ৩৩ জন।
এই হিসেবে মহিলা ভোটার অপেক্ষা পুরুষ ভোটার ৬৬৮ জন বেশী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য শুক্রবার থেকে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হওয়ায় মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা ঢাকায় ছুটেছিলেন। ফলে কেশবপুরে সর্বত্র এখন আলোচনার বিষয় কে কে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এবং কারা মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন। তবে শুক্র, শনিবার ও রবিবার ৩ দিনে যশোর-৬ কেশবপুর সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগের টিকিটে নির্বাচন করার লক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডি আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ১১ জন নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এবং পূরণ করে জমা দিয়েছেন।
নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার প্রত্যাশায় তারা এই মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বলে জানা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার পরেই আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ঢাকায় যেয়ে মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেন। মনোনয়ন ক্রয়কৃত সম্ভাব্য প্রার্থীরা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন বর্তমান সাংসদ ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, কেশবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিন, কেশবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন, কেশবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলার মির্জানগর গ্রামের কৃতি সন্তান রাজধানীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শেখ আব্দুর রফিক, যশোর জেলা আওয়ামীলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব কাজী রফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা, কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল, কেশবপুর কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলার বাউশলা গ্রামের কৃতি সন্তান রাজধানীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি আব্দুল মান্নান, খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক উপজের্লা কাবিলপুর গ্রামের ড. তাপস কুমার দাস, উপজেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. হোসাইন মোঃ ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর শেখ এবাদত সিদ্দিক বিপুল।
যশোর ৬ কেশবপুর আসন থেকে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত নৌকা প্রার্থী এএস এইচকে সাদেক শিক্ষামন্ত্রী হন এবং ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত নৌকা প্রার্থী হয়ে তিনি এমপি হন। অপরদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাব জাতীয় সংসদের হুইপ হয়েছিলেন। এরপর ২০১৪ সালে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর এএস এইচকে সাদেক এর সহধর্মিনী ইসমাত আরা সাদেক নৌকার প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি দেশের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীত্ব লাভ করে বর্তমান দায়িত্ব পালন করছেন।
যেকারনে যশোর জেলার ৬টি আসনের মধ্যে এই আসনটিকে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে আলোচিত হয়ে আসছে। পাকিস্তানের শেষ সময় ১৯৭০ সালে কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগর তিন থানা মিলে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত হন সুবোধ মিত্র, ১৯৭৩ সালেও নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হন পিযুষ কান্তি ভট্রাচার্য্য, ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হন গাজী এরশাদ আলী, ১৯৮৬ সালে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ওই সময়কার উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হালিম সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চাকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হন, ১৯৮৮ সালে লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে জাতীয় পার্টির এ্যাড.আব্দুল কাদের নির্বাচিত হন এবং তিনি যশোর জেলা চেযারম্যান হন।
১৯৯১ সালে দাঁড়িপাল্লা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হন জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন। যশোর-৬ কেশবপুর আসনটি থেকে নির্বাচনে নৌকার প্রত্যাশী ব্যক্তির সংখ্যাও প্রতিবারই বেশী হয়ে থাকে। এবার ও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বর্তমানে এ আসনের থেকে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত ডজন খানেক ব্যক্তি। তবে এখানে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্ধন্ধী আওয়ামী লীগ। প্রায় বছর তিনেক আওয়ামীলীগের মধ্যে দুটি পক্ষ থাকার কারণে যশোর ৬ আসনে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী বেশী।
তবে কেশবপুর আসন থেকে আওয়ামীলীগের হয়ে নির্বাচন করবেন বলে হৈ চৈ ফেলা দেওয়া চিত্রনায়িকা শাবানা সাদিক ও তার স্বামী চলচিত্র প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক নাগরিকত্ব জটিলতায় এবার কেউই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবেন না বলে তাদের পরিবার থেকে জানা গেছে। দলীয় সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে কয়েক দফা জরিপের ফলাফল বিশ্লেষন করে দলীয় মনোনয়ন ফরম পূরণ করে জমাকারীদের মধ্য থেকে আমলনামা দেখে জনপ্রিয়তা ও ক্লিন ইমেজের যে কাউকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেবেন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা জানার ও দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে নেতাকর্মীদের।