ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা : জিবীত মানুষকে গুজব রটিয়ে মারা গেছে বলে খবর ছড়ালে ৩ দিন সেই গুজবে মেরে ফেলা মৌয়াল সিরাজুল অবশেষে সুন্দরবনে নিদিষ্ট সময়ে মধু সংগ্রহ শেষে সুস্থ শরীরে বাড়ি ফেরেন। তার বাড়ি ফেরার মধ্যদিয়ে সকল জল্পনা-কল্পনা আর গুজবের অবসান ঘটে।
গুজবে মেরে ফেলা সিরাজুল খুলনার কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের বাসিন্দা। গত ১ এপ্রিল সুন্দরবেন মধু সংগ্রহের জন্য বৈধ পাশ পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে যান তিনিসহ তার সঙ্গী ৮ জন । গত রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে বাঘের আক্রমনে তার নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে মঙ্গলবার কয়েকটি একাধিক আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকায় বাঘের আক্রমনে মৌয়াল সিরাজুল নিহত হয়েছেন এমন খবর প্রকাশিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতি দ্রুত ভাইরাল হয়৷ কেউ কেউ তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। কেউ কেউ তার পরিবারকে স্বান্থনা দেন।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেরে ফেলা সিরাজুল বুধবার স্বশরীরে ফিরে এসেছেন। মৌয়াল সিরাজুল সরদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি জানতাম না আমার মৃত্যুর খবর পেপারে ছাপা হয়েছে। মেয়াদ শেষে ফরেষ্ট স্টেশনে পাশ সমর্পন করতি আসলি তারা আমাকে দেখে কানাঘুষা শুরু করে। পরে তাদের মাধ্যমে আসল ঘটনা জানতি পারি। এখানকার আনুসাঙ্গিক কাজ সেরে বাড়িতে ফিরবো। এদিকে মৌয়াল সিরাজ সরদার ফিরে এসেছেন শুনে তার কাছের ও দুরের আত্মীয় স্বজনরাও ভীড় জমিয়েছেন বাড়িতে। গ্রামের মানুষ ছাড়াও আশপাশের মানুষও কৌতুহল মেটাতে দল বেঁধে উপস্থিত হচ্ছেন ওই বাড়িতে।
সিরাজ সরদারের বড় মেয়ে সেলিনা খাতুন জানান,জুগবে মেরে ফেলা আমার মৃত বাবাকে জিবীত দেখতে আমরা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাই এ 2 দিন আমাদের যেমন কষ্ট হয়েছে এমন যেনো কখনও কারও জিবিত পিতাকে মেরে ফেলা না হয়। তিনি আরও জানান,অনেক বার তারা খবর পান তাদের বাবার নৌকায় বাঘের হামলা হয়েছে। খালেক নামে গ্রামের এক ব্যাক্তি এ খবর ছড়ায়। খালেকের বাবাও মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে গেছে। যে কারনে খবরটির গুরুত্ব দেয় স্থানীয় মানুষ।
এ খবর বন বিভাগকে জানালে তারা সেখানে উদ্ধারকারি দল পাঠায়। এদিকে গ্রাম থেকে একটি দল সুন্দরবনে চলে যায় খবর নিতে। এর মধ্যে সোমবার দুপুরের পর ফেসবুকে তার বাবার মৃতদেহ উদ্ধার করে বাড়ি আনার খবর ছড়িয়ে পড়ে।
অথচ এ বিষয়ে মৌয়াল সিরাজুল ও তার সঙ্গীরা কিছুই জানেন না। স্থানীয় ইউপি সদস্য আঃ গফ্ফার ঢালী বলেন, মানুষ গুজব ছড়িয়ে একটি পরিবারকে কোথায় নিতে পারে তার বাস্তব উদারণ সিরাজ সরদারের পরিবারটি। গত কয়েকদিন ধরে তার স্ত্রী ছেলে মেয়েদের কান্নাকাটিতে এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। বাবার মৃতের খবর শুনে তার লাশটি উদ্ধারের জন্য মানুষের কাছে ধর্না দিয়েছিল তারা। গত দু’দিনে না খেয়ে শুকিয়ে গেছে তার স্ত্রী ও সন্তানরা।
তিনি গুজব রটনাকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। সুন্দরবনের কোবাদক ফরেষ্ট স্টেশন কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন বলেন, বাঘের হামলায় মৌয়াল সিরাজ সরদারের মৃত্যুর খবরে সংবাদপত্রে আমার উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। যা আদৌ সঠিক নয়। তবে এ কয়েকদিনের গুজবে অনেককেই হয়রানি হতে হয়েছে। এ ধরনের গুজব রটানাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।