মাহবুবুজ্জামান সেতু, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দা উপজেলার কাঁশোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ তলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের মান খারাপ এবং নির্মাণ কাজেও করা হচ্ছে অনিয়ম এমন অভিযোগ সচেতন এলাকাবাসীর। নিয়ম অনুযায়ী কার্যস্থলে নির্মাণ কাজের বিবরণ সম্বলিত সাইনবোর্ড দৃশ্যমান থাকার কথা থাকলেও তা টানানো হয়নি। ফলে এই কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কাঁশোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। নওগাঁর একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ স্কুলের ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। ২০১৯ সালের ৪ঠা জুলাই নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনের সাংসদ মুহা:ইমাজ উদ্দীন প্রামানিক এ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ পর্যন্ত কাজের শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিম্নমানের ইট, খোয়া ও জংধরা রড (মরচে পড়া) দিয়ে নির্মাণ কাজ চলছে। স্কুলের অভ্যন্তরীণ ওয়াল নির্মাণ এবং ছাদ ঢালাই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে দুই- তিন নম্বর ও নম্বরবিহীন নিম্নমানের ইট এবং ইটের খোয়া । পা দিয়ে একটু জোরে পাড়া দিলেই গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে ইটগুলো। ওয়ালে ব্যবহৃত সেই ইটগুলো চুলার মাটির চেয়েও নরম।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতা আর নিরব ভূমিকার কারনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নোংরা,নিম্নমান ও নম্বরবিহীন এসব ইট ব্যবহার করে তাদের ইচ্ছামতো কাজ করে যাচ্ছেন। নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন কর্মকর্তা-প্রকৌশলীকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, সিডিউলে উন্নতমানের ইট, পাথর ও রড,সিমেন্ট দিয়ে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির সাথে আঁতাৎ করে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যাক্তির সঙ্গে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিম্নমানের ইট, পাথর, সমদূরত্বে রড না দেয়া এবং পরিমাণে কম সিমেন্ট ও অতিরিক্ত পরিমানে বালি ব্যবহার করে নামমাত্র নির্মাণ কাজ করছে। কাজে অনিয়ম হলেও দেখার কেউ নেই। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, দ্রুত তদন্ত করে শিডিউল অনুসারে উপকরণ দিয়ে যেন স্কুলের ভবন ও অভ্যন্তরীণ ওয়াল নির্মানের কাজ হয়। এ ব্যাপারে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
নওগাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা রেজভী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, ‘কাঁশোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মান কাজে লক্ষাধিক ইটের প্রয়োজন। সেখানে ইটভাটা কর্তৃপক্ষ ভুলক্রমে নিম্ন মানের ইট পাঠিয়ে দেন। আমরা সেসব ইটগুলো নির্মাণ কাজে ব্যাবহারের জন্য নিষেধ করেছি। খুব শীঘ্রই ইটগুলো সরিয়ে নেয়া হবে।
কাঁশোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকছেদ আলীর সাথে মোবাইল ফোনে স্কুল ভবন নির্মাণ কাজের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইট বাছাই করে ভালো ইটগুলো কাজে লাগানো হচ্ছে। নি¤œ মানের ইট ব্যাবহারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সাক্ষাতে এসব কথা বলতে চান এবং তিনি আরো বলেন যে, আপনারা যদি মনে করেন যে কাজের মান খারাপ হচ্ছে; তাহলে তাই! বলে ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নয় । তবে নির্মাণ কাজে অনিয়ম হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।