লাল সবুজের কথাঃ সারা দেশে এক সময়কার জনপ্রিয় শ্রবনের বাদ্যযন্ত্র গণমাধ্যম রেডিও। গণমাধ্যম রেডিওটি অবশ্য গ্রামাঞ্চলে বেশি জনপ্রিয় ছিল। সেই গ্রামাঞ্চলের জনপ্রিয় গণমাধ্যম বাদ্যযন্ত্র আজ হয়তোবা কিছু অজোপাড়াগায় আংশিক থাকলেও অনেকেই ধারণা করছেন আনুমানিক ৯৮%সম্পুর্ন বিলুপ্ত।যেটা ছিল গণমাধ্যমের অন্যতম প্রভাবশালী মাধ্যম সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে। কালের পরিক্রমায় নতুন নতুন প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর প্রভাবে রেডিও আজ বিলুপ্তির পথে। নব প্রজন্মের কাছে রেডিও আজ অচেনা অজানা যন্ত্রে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
একসময়ে সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, সংস্কৃতি, আবহাওয়াসহ চলমান বিভিন্ন তথ্যবহুল সংবাদ জানার ও বিনোদন মুলক বিভিন্ন গান শোনার একমাত্র মাধ্যম ছিল রেডিও।
আজ যেমন প্রায় প্রতিটি মানুষের হাতে মোবাইল সেট, একসময় তেমনি প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ছিল ছোট বড় রেডিও। এক কথায় বলতে গেলে তথ্য জানা ও ঘরে বসে চিত্ত বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল রেডিও।
পুস্তকের বরাতে জানা যায়, ইতালির বিজ্ঞানী গুইলিইমো মার্কনী ১৮৯৮ সালে রেডিও আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর বিনা তারে বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণের সূত্র ধরেই বিজ্ঞানী মার্কোনী রেডিও আবিষ্কার করেন বলে অনেকের ধারণা। তবে ১৮৯৮ সালে রেডিও আবিস্কার হলেও বাংলাদেশে রেডিও’র সম্প্রসার শুরু হয় ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বিজ্ঞ্য ব্যক্তিদের ধারণা।পরে রেডিও পাকিস্তান ঢাকার কয়েকজন সাহসী কর্মকর্তা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ রেডিওতে প্রচার করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে যানা যায় ।
১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বেতারের ভূমিকা ছিল অন্যান্য।১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ বেতার ঢাকার পরিবর্তে রেডিও বাংলাদেশ নামকরণ করা হয় বলে জানান কতিপয় শিক্ষক ।তারা বলেন, ১৯৮৩ সালের ৩০ জুলাই শেরে বাংলা নগরস্থ বাংলাদেশ বেতার ঢাকা কেন্দ্রের কার্যালয় স্থানান্তরিত করে শাহবাগে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে এ ভবনটি বাংলাদেশ বেতারের সদর দপ্তর হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তথ্য আদান প্রদানের অন্যতম প্রভাবশালী মাধ্যম ছিল এই রেডিও। ওই সময় রেডিওতে সংবাদ শোনার জন্য লোকজন উদগ্রিব ছিল। টেলিভিশন, ডিস সংযোগ, উন্নত প্রযুক্তির মোবাইল ও ইন্টারনেট এর প্রভাবে বিলুপ্তির পথে আজ রেডিও।বর্তমান প্রজন্মের কাছে রেডিও একটি অচেনা অজানা যন্ত্রে পরিণত। গ্রামাঞ্চলে রেডিও’র দেখা পাওয়া কঠিন। কারণ তৃণমূল পর্যায়ে ডিস সংযোগের ফলে রেডিও’র জায়গা দখল করে নিয়েছে রঙ্গিন টিভি। মাঝে মধ্যে দুই একজনের কাছে দেখা যায়।তবে ব্যবহারহীন, যরাজীর্ণ, অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকলেও রেডিও এখনো জন প্রিয়তা হারাইনি বলেই দেখা যায় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়ার খোরদো গ্রামের দীর্ঘ বছর ধরে বিবিসি সংবাদ ও অন্যান্য বিনোদন শোনার পাগলমনা অতিপরিচিত ব্যক্তি জনৈক নওশের আলী গাজীর স্বযত্নে রাখা চায়ের দোকানে,একই বাজার ব্যবসায়ী জনৈক মোঃ নিছার আলী সরদার এর দোকান ঘরে (আড়ৎ) ও অপরদিকে জনৈক মোঃ মনিরুজ্জামান মনির মুদি দোকানে এখনো মাঝে মধ্যে ব্যবহার করতে দেখা যায় ।
আবার অনেকেই ব্যবহার না করলেও পুরাতন স্মৃতি ধারনে রাখা থাকে বলে জানা যায় অতি পরিচিত গণমাধ্যম রেডিও গুলো ।
এদিকে ব্যবহারের দিক থেকে বিলুপ্তির পথে রেডিওকে পুনরায় জনপ্রিয় গণমাধ্যমে পরিনত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।