মোঃ মোজাফফার হোসেনঃ লেখা-লেখিতে খুব একটা অভ্যস্ত নয়,এমন কি সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে পারি না।তবে যেটুকু পেরেছি, পাঠক সমাজ ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
২৮শে নভেম্বর , ২০১৮ আমার জীবনের সবচেয়ে একটা স্মরণীয় দিন। কারণ এই দিনে আমি দ্বিতীয় বাবা হলাম। বাবা হওয়ার অনুভূতিটা আসলে লিখে ব্যক্ত করার মত নয়। এটা একটা অদ্ভূত স্বর্গীয় অনুভূতি। তারপরও এই অনুভূতিগুলো সবার সাথে শেয়ার করারও একটা আনন্দ আছে, সেই ইচ্ছা থেকেই এই লেখার অবতারণা।
এপ্রিলের প্রথম দিকে যখন ডাক্তারের কাছ থেকে নিশ্চিত হলাম যে আমি দ্বিতীয় বার বাবা হতে যাচ্ছি, তখন প্রচন্ড রকম এক উত্তেজনা কাজ করছিল মনের মধ্যে। তার পর থেকেই আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমি আমার স্ত্রীর দিকে খেয়াল রাখতাম যেন গর্ভাবস্থায় তার যত্নের কোনো ত্রুটি না হয়, একজন স্বামী হিসেবে সবারই এমন করা উচিৎ, কারণ এই সময়টায় মেয়েরা সবচেয়ে বেশী ফিল করে তার স্বামীর সাহচর্য। স্বামীর সঙ্গ মেয়েদের এই সময়টায় তার এবং তার গর্ভের সন্তানের মানসিক বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে।
যাই হোক, এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। ডাক্তারের পরীক্ষামতে আমাদের দ্বিতীয় সন্তান পৃথিবীতে আসার সময় ছিল ১৪ ই ডিসেম্বর , যা ঠিক শীতের মাঝামাঝি সময়। আমি আমার স্ত্রীকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক (কেয়ার) ভর্তি করাই, ২৮ তারিখ দুপরের দিকে ডাক্তার রোকেয়া গুলশানারা’র কাছে গেলে আমার স্ত্রীকে পরীক্ষা করে মত দিলেন যে তাকে এই মুহুর্তেই সিজার করাতে হবে। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার, আমার মা ভাই-বোন ও আমার শ্বশুড়-শাশুড়ী কাওকে না জানিয়ে ডাক্তারের নিকট নিয়ে আসি। ডাঃ আল্টাস্নোনো করার পর আমাকে বলল,পানি শুকিয়ে গেছে এই মহুর্তে সিজার করতে হবে।সেই মুহুর্তে আমি ভর্তি করালাম এবং সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে একটি ঔষধের চার্ট হাতে ধরিয়ে দিল।আমি তক্ষনাৎ সাতক্ষীরা নাহিদ ফার্মেসি থেকে ৪৯২৬ টাকার ঔষধ নিয়ে আসি।আসার সঙ্গে সঙ্গে আমার স্ত্রীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাই।আমি একটু অপেক্ষা করতে বলি, কারণ ততক্ষণ বাড়ী থেকে কেউ আসেনি।আমার কথা নার্সরা রাখলো না।ঠিক দুপুর ২.৩৫ টায় আমার ছোট মেয়ে কেঁদে উঠল, তখন আনন্দের আতিশয্যে আমার দু’চোখ দিয়ে ঝরঝর করে অশ্রু ঝরছিলো। এটা একটা অসাধারণ অনুভূতি যা শুধু ঐ ব্যক্তির পক্ষেই বোঝা সম্ভব যিনি নিজে এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যান, লিখে বা মুখে বর্ণনা করে এই অভিজ্ঞতা কাউকে বোঝানো সম্ভব না, তখন অনেকের সাথেই আমি কান্নার কারণে ঠিকমত কথা বলতে পারিনি।তারপর মেয়েকে নিয়ে শিশু ডাক্তার খান গোলাম মোস্তফাকে দেখালাম।ডাক্তার কিছু পরামার্শ দিলেন।সেই মতো অদ্যাবধি চলছে।
এর পর মেয়ের আকিকা দেওয়া,নাম রাখা।
আমার সন্তান হওয়ার এই অল্প কিছুদিনের মধ্যে যে ধকলটা গেল আমার এবং আমার স্ত্রীর ওপর দিয়ে, তাতে করে আমরা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি মা-বাবা হওয়া কতটা কষ্ট, কতটা চ্যালেঞ্জিং! মায়ের কষ্টের কাছে বাবার কষ্ট টা কিছু না, তারপরও বিভিন্ন প্রয়োজনে বাবাকে এই সময় যতটা ছোটাছুটি করতে হয়, সেটাও একেবারে ফেলনা নয়। এখন তো মাত্র মেয়েটা জন্ম নিল, সামনে আরো কত চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে আমাদের দু’জনের জন্য! সবাই আমার মেয়ে, আমার স্ত্রী এবং আমাদের পুরো পরিবারটির জন্য দোয়া করবেন যেন আমরা সব চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করতে পারি।
লেখক : শিক্ষক ও সাংবাদিক