বাঙালির শোকের মাস শুরু

170

ন্যাশনাল ডেস্ক:

আজ ১ আগস্ট। শুরু হলো বাঙালির শোকের মাস। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে নেতৃত্বশূন্য করা হয়েছিল বাঙালি জাতিকে। রুদ্ধ করা হয়েছিল তার ঘাতকদের বিচারের পথও।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরও থেমে থাকেনি পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে স্বাধীনতার স্থপতিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ভোরে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। থমকে যায় বাংলাদেশ।

এদিন সেনাবাহিনীর একদল চক্রান্তকারী ও উচ্চাভিলাষী সদস্যের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আরো প্রাণ হারান তার প্রিয় সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল এবং নবপরিণিতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। প্রবাসে থাকায় জীবন রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। নির্মম সেই হত্যাযজ্ঞে আরো নিহত হন বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা-কর্মচারী। জাতি শোকের মাসে গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে এ শহীদদেরও।

শুধু তাই নয়, ইতিহাসের নির্মম সেই হত্যাকান্ডের বিচারের পথ বন্ধ করতে ইনডেমনিটি বিলও পাস করা হয় সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে। চলে ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র। বাবা নিহত হওয়ার ছয় বছর পর বাংলাদেশে ফিরে এসে দলের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। বাবার মতো তাকেও হত্যার ষড়যন্ত্র হতে থাকে। কিন্তু থেমে যাননি বঙ্গবন্ধু কন্যা। তারই নেতৃত্বে প্রাণ পেয়েছে গণতন্ত্র। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কলঙ্কিত সেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল ও জাতির পিতা হত্যার বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া ও নানা ক‚টকৌশলের জাল ছিন্ন করে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের চ‚ড়ান্ত রায় এবং পাঁচ ঘাতকের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়েছে। তবে পুরো জাতি এখনো প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে বঙ্গবন্ধুর বাকি ছয় পলাতক খুনির ফাঁসি কার্যকরের মাহেন্দ্রক্ষণের। বিদেশে পালিয়ে থাকা এই খুনিদের অনুসন্ধান করে ফিরিয়ে এনে দন্ড কার্যকর এখনো সম্ভব হয়নি।আগস্ট মাসটি আওয়ামী লীগের জন্য ঘটনাবহুল, বিয়োগান্তক। এই আগস্টেই ঘটে জাতির ইতিহাসের আরো একটি বিয়োগান্তক ঘটনা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয় ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো ওই গ্রেনেড হামলা থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও ঝরে যায় মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ ২৪টি তাজা প্রাণ।

মাসজুড়ে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ঘৃণা জানাবে জাতি। আজ বুধবার বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ কৃষক লীগের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্তদান কর্মসূচি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এ ছাড়া সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, চিত্র প্রদর্শনীসহ বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে পালন করা হবে নানা কর্মসূচি।