মো. মামুন হাসান বিদ্যুৎ : বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। ৫০ বছরের পথপরিক্রমায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অস্টিন রবিনসন বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে “ম্যালথাসিয়ান স্ট্যাগনেশনের” সঙ্গে তুলনা করে দূর্ভিক্ষ ও মৃত্যুর পরিণতি বরণের পূর্বাভাস প্রদান এবং মার্কিন কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ” তলাবিহীন ঝুড়ি ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। সেই বাংলাদেশ এখন বদলে গেছে, বদলে যাচ্ছে।
১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। জিডিপি ২০২২-২৩ (সাময়িক) স্থীর মূল্যে ৩২ লক্ষ ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মানে, ৫০ বছরের ব্যবধানে দেশের অর্থনীতির ক্ষমতা বেড়েছে ৭৫০ গুন।১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক গড় মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৮০ টাকা, যা তখনকার ৯৪ মার্কিন ডলারের সমান।১৯৭৫ সালে মাথাপিছু আয় ২৬০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০০৯ সালে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ দাড়ায় ৬৩০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ২৭৬৫ মার্কিন ডলার (২ লক্ষ ৭০ হাজার ৪১৪ টাকা)।
স্বাধীনতার পর মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ৪৬৬ গুণ,এর মধ্যে বিগত ১৩-১৪ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮০%।পুরো সত্তরের দশকে গড়ে ৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়। ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যায় (৬.৪৬%)।২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির প্রবদ্ধি হয় ৭.১০ শতাংশ ।
২০১৬ -২১ বাংলাদেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৪ শতাংশ যা ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনের তুলনায় অনেক ভালো। এই প্রবৃদ্ধির হার নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। বিশ্ব প্রবৃদ্ধির গড় হারের (২.৯%) তুলনায় অনেক বেশি।গত ছয় বছরে দেশের গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (৬ দশমিক ৪ শতাংশ) সেটি যদি ৫ শতাংশেও নামে, তাতেও ২০৪০ সালের মধ্যেই এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির মাইলফলক স্পর্শ করবে বাংলাদেশ। আর প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হলে ২০৩০ সালেই সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। চলতি মূল্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির আকার ছাড়িয়েছে ৪১০ বিলিয়ন ডলার।
আগামী অর্থ-বছরে জিডিপির আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।চলতি মূল্যের ভিত্তিতে জিডিপির আকারে ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬০তম। এখন ৩৫তম অবস্থানে এসেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের গবেষণার তথ্য বলছে, ২০৩৬ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ১০০ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করতে স্বাধীনতার প্রথম ৩৮ বছর সময় লেগেছিল। তার বিপরীতে মাত্র ১২ বছরে অর্থনীতির আকার চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪১০ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করেছে। বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হিসেবে বাংলাদেশ আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে যাবে এবং নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে।নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায়।দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন ও স্বীকৃতি এটি। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য অবশ্যই একটি বড় অর্জন ও মাইলফলকও বটে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বিশ্বের বিস্ময়।২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে সামিল করার লক্ষ্য সামনে রেখে রূপকল্প ২০৪১ এর রূপরেখা অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯.৯ শতাংশ, গড় মাথাপিছু আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৯৪ মার্কিন ডলার, প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল ৮০ বছর। এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৪৬.৯ শতাংশ এবং রাজস্ব আদায়ের হার দাঁড়াবে ২৪.১শতাংশ।
নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট পাস হয়েছে এবার। এ বাজেটে ভর করে সমৃদ্ধির পথ ধরে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে এখন বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
লেখক: মো. মামুন হাসান বিদ্যুৎ, সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।