বছর যায় বছর আসে উপকূলবাসী টেকসই বেড়িবাঁধ আর পায়না কেন

65
সাংবাদিক মোঃ জাবের হোসেন। ছবি- ফাইল ফটো

মো. জাবের হোসেন ।। টেকসই বেড়িবাঁধ উপকূলকবাসীর প্রাণের দাবী দীর্ঘকালের। সময় আর বরাদ্ধ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় শুধু হয়না টেকসই বেড়িবাঁধ। “ত্রাণ চাইনা, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই ” এটি দীর্ঘদিনের দাবী!

বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে টেকসই বেড়ীবাঁধ চাই বলে মানববন্ধন আমরা প্রতি বছর দেখে থাকি। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, এসব দাবীর অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়না। যদিও হয় তাহলে মৌসুম পার হবে সেরকম যতসামান্য কিছু কার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সাতক্ষীরা উপকূলবর্তী অঞ্চল। সুন্দরবন একেবারেই নিকটে। পরিবেশ বিদেরা বলছে ভূপৃষ্ঠে তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বের কিছু নিম্ন-অঞ্চল সাগরের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ইউনিসেফের হিসাব মতে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বসবাস উপকূলবর্তী অঞ্চলে। এ এলাকাগুলো প্রতি বছর ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় অন্য এলাকার তুলনায়। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের তিন জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও ভোলায় এর প্রভাবে প্রতি বছর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে। এর সাথে রয়েছে পানির লবণাক্ততা।

বর্ষা মৌসুম আসলেই শুরু হয় নদীর পানি বৃদ্ধি।এছাড়া অপরিকল্পিত মৎস্য ঘেরের কারনেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। উপকূল অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের থাকলেও কার্যত স্থায়ী কোনো সমাধান আজ অবধী হয়নি। কবে হবে সেটা কেউ’ই জানেনা। আশ্বাস আসে বিভিন্ন পর্যায় থেকে অথচ সেই আশ্বাস আজ পর্যন্ত কতটুকু কার্যকর হয়েছে সেটি সবার জানা আছে। প্রতি বছর বরাদ্ধ হয়, বরাদ্ধের কাজও করা হয়। অথচ বর্ষা মৌসুম আসলেই হাহাকার শুরু হয় উপকূলে।

বেঁচে থাকতে হলে প্রয়োজন মানুষের নিরাপদ আশ্রয়। অথচ এসব এলাকায় মানুষের নিরাপদ আশ্রয় বলতে অধিকাংশ নেই। তবুও নতুন আশায় বুক বেঁধে বেঁচে থাকে তারা। কিন্তু সে আশাও প্রতি বছর বর্ষার মৌসুম আসলেই ভয় কাজ করে। কমবেশি প্রতি বছর এসব এলাকায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। বিলীন হয়ে যায় নদীগর্ভে। শেষ আশ্রয়টুকু চলে যায় নদীর পানির সাথে। তবুও তারা আশা ছাড়েনা।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর কম -বেশী বাজেট বরাদ্ধ হয়। কত বাজেট যে এলো আর গেলো কিন্তু টেকসই বেড়িবাঁধ আর হলোনা। আদৌতেও হবে কিনা সেটা জানা নেই! তবুও কি পাউবোর ঘুম ভাঙবেনা? আর কত যুগ গেলে তাদের ঘুম ভাঙবে? নাকি রাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের দোষ এটার জন্য? আসলে সবাই দায় এড়িয়ে যায়। শুধু হয়না টেকসই বেড়িবাঁধ। সঠিক পদক্ষেপে এসব অঞ্চলে অর্থনৈতিক এবং জীবনের ক্ষতি কামানো সম্ভব হবে। কিন্তু যতদিন না সেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে ততদিন এ সমস্যা রয়েই যাবে। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উপকূলবাসী।

লেখক : মো. জাবের হোসেন, সম্পাদক ও প্রকাশক, লাল সবুজের কথা।