শিরীন সুলতানা ।।
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।সে মেরুদন্ডের ভিত্তিস্তর প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে।আমরা যদি প্রাথমিক শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন করি তবে সে ভিত্তি মজবুত হওয়াতো দূরের কথা অচিরেই দেয়াল থুবড়ে পড়বে।এছাড়া গত দশ বছরেও হয়নি প্রধান শিক্ষক পদে কোন সরাসরি নিয়োগ।নেই সহকারী শিক্ষা অফিসার কিংবা শিক্ষা অফিসার পদে যাবার কিংবা কোন প্রোমোশনের সুযোগ।বিভিন্ন চাকুরীর ক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্টাল পোস্ট থাকলেও একই পদে ত্রিশ বছর চাকুরী করা ও প্রাথমিক শিক্ষক কোন বিভাগীয় সুযোগ না থাকায় অনেক শিক্ষকও ব্যক্তিগত মানোন্নয়নের ও চেষ্টা করছে না। যা শিক্ষা ক্ষেত্রে নেমে আসছে অশনী সংকেত। কারণ, একজন শিক্ষক যিনি নিজেকে সব সময় নতুন কিছু শিখা ও ব্যক্তিগত মানোন্নয়নের মধ্যে রাখবে এবং শিক্ষার্থীদেরকে অর্জিত জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করবেন।যদি তাদেরকে সব সময় চাপে রেখে কাজ করানো হয়,তাদের কাজের মূল্যায়ন করানো না হয়,পদন্নোতির সুযোগ না দেওয়া হয়, কাজের স্বীকৃতি না দেওয়া হয় তবে প্রাথমিক শিক্ষার মান অবনতি হতে বাধ্য।
এছাড়াও এতে রয়েছে বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামো।মাননীয় প্রাওগণশি প্রতিমন্ত্রী মহোদয় বলেছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা ৩৬০০০টাকা বেতন পান। এটা মোটেও সঠিক নয়। একজন সহকারী শিক্ষক প্রথমে মোট বেতন পান ১৬৫০০টাকা। গত ২০ বছর যাবৎ চাকুরি করছেন এমন একজন শিক্ষক বেতন পান সর্বোচ্চ ৩২০০০ টাকা।বাংলাদেশের প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকদের ৭৫ ভাগ শিক্ষক গড়ে বেতন পান ২৩০০০ টাকা।অতএব ভুল তথ্য দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করছেন তিনি যা জনসাধারণের কাছে প্রাথমিক শিক্ষকদেরকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকদের বেতন তেরোতম গ্রেড যা একজন দিনমজুরের মাসিক উপার্জনের চেয়েও অনেক কম।শিক্ষকদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে অচিরেই দশম গ্রেডের করা হোক। আমরা চাই মাননীয় প্রতিমন্ত্রীতো আর মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত করতে পারেন না।তিনি যথার্থই বলেছেন এবং এ সম্মান আমরাও চাই।উল্লেখ্য বর্তমানে সমাজে বিভিন্ন পেশাজীবীদেরকে টাকার অঙ্কে মূল্যায়ন করা হয়।শিক্ষকদেরকে যেরূপ একসময় মূল্যায়ন করা হতো এখন তার উল্টো,সমাজের প্রতিপত্তিদের কাছে শিক্ষকরা মূল্যহীন এবং শিক্ষকদের করতে হয় মানবেতর জীবন।
সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন,
মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বেতন বলতে কি বুঝিয়েছেন জানিনা। বেতন হচ্ছে প্রারম্ভিক বেতন স্কেল। পরে হিসেব করা হয় বেসিক বা মূল বেতন। ভাতা কখনো বেতন হয় না। তাই সাকুল্যে প্রাপ্তিকে কখনো বেতন বলা যাবে না। তেরোতম গ্রেডের প্রারম্ভিক স্কেলই (১১০০০/-) বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকরা পায়।
নাসিমা জহির বলেছেন, “আমি একজন প্রধান শিক্ষক। আমার চাকরির বয়স ২৮ বছর। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেলাম মার্চে ১৪ বছর হবে। আমি বেতন পাচ্ছি ৩৪০০০ হাজার টাকা। অথচ আমার ৫ বছর জুনিয়র সহকারী শিক্ষকগন আমার সমান বেতন পাচ্ছেন । প্রধান শিক্ষক পদে কিছুই পাইনি ।শুধু মাথায় রাজ্যের চাপ নিয়ে কষ্ট করে যাচ্ছি। বেসরকারি নতুন জাতীয়করন বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন নাকি সরাসরি প্রধান শিক্ষক।তাদের বেতন ৪৫০০০ ও আছে। এক ডিপার্টমেন্টে দুই নিয়ম। আমাদেরকে নিয়োগ দিয়েছে আর সরাসরিদেরকে কে নিয়োগ দিয়েছে?
২৮বছর চাকরি করেও তার বেতন কি প্রধান শিক্ষক পদে যথোপযুক্ত কিনা এ ব্যাপারে যথযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন।
শিরীন সুলতানা
সহকারী শিক্ষক
হোমনা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়