মাহবুবুজ্জামান সেতু, নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে ফসলি জমির মাটি কেটে নতুন নতুন পুকুর খনন করা হচ্ছে। মান্দা উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় গত কয়েক বছরে অসংখ্য কৃষি জমি পুকুরে পরিণত হয়েছে। অবাধে ফসলি জমির শ্রেণী (প্রকৃতি)পরিবর্তন করে পুকুর খনন করায় খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
‘জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না’ এমন সরকারি নীতিমালা থাকলেও দেশের উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর মান্দা উপজেলায় ৩ ফসলি কৃষি জমিগুলোকে পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। এতে করে উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ।
ফসল উৎপাদনে বেশি শ্রম ব্যয় করেও কাক্ষিত লাভ না হওয়ায় ঝামেলাবিহীনভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য কৃষকরা পুকুর খনন করছেন। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মৎস্য চাষিদের কাছে লিজ দিচ্ছেন। উপজেলার বিষ্ণুপুর, কসব, কাঁশোপাড়া, কালিকাপুর, নুরুল্যাবাদ,তেঁতুলিয়া, ভাঁরশো এবং ভালাইন ইউপি’র বিভিন্ন গ্রামের ফসলের মাঠে পুকুর খননের প্রবনতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের উদাসীনতা আর অবহেলার কারণে এই পুকুর খননের প্রবণতা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এক শ্রেণীর পুকুর ব্যবসায়ীরা কৃষকদের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে দিনরাত বিরতিহীন পুকুর খনন করে সেই মাটি গুলো উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করছেন। কৃষকরা না বুঝে হারাচ্ছেন তাদের উর্বর ফসলি জমি, অন্যদিকে পুকুর ব্যবসায়ীরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন।
জানা গেছে, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। শ্রেণী ভেদে প্রায় সকল জমিতেই সারা বছর কোন না কোন ধরণের ফসল আবাদ হয়। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত ধানের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা প্রতি বিঘা জমি ১২-১৪ হাজার টাকায় ৫-৭ বছর মেয়াদে চুক্তিনামা করে পুকুর খননের জন্য ব্যবসায়ীদের লিজ দিচ্ছেন। সে সব জমিতে খননযন্ত্র (স্কেবেটর) বসিয়ে চারদিকে বাঁধ বা দিয়ে ৮-১০ ফুট গভীর করে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। সেই জমির মাটি আবার প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) ৩-৫ শত টাকায় বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রয় করছেন পুকুর ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, মান্দা- আত্রাই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বিষ্ণুপুর ইউপি’র অন্তর্গত শহরবাড়ি গ্রামের জোঁকাহাট-বান্দাইখাড়া যাওয়ার রাস্তা অর্থাৎ আত্রাই নদীর দক্ষিণ বাঁধের রাস্তা সংলগ্ন কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তণ করে গত কয়েকদিন যাবৎ স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি প্রায় ৯বিঘা জমিতে খননযন্ত্র (স্কেবেটর) বসিয়ে চারদিকে বাঁধ বা দিয়ে ৮-১০ ফুট গভীর করে পুকুর খনন করছেন। এরপর মাটিগুলো টাকার বিনিময়ে ট্রাক্টর গাড়ি দিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন তারা।
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আইন বহির্র্ভূতভাবে শ্রেণী পরিবর্তন করে পুকুর খননের ব্যাপারে জানতে চাইলে পুকুর খননকারীদের মধ্যে লিটিল এবং বায়েজিদসহ আরো অনেকেই জানান যে জমিটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে। জমিটিতে প্রায় ৩০-৪০ বছর যাবৎ তেমন কোন ফসল হয় না। আর তাই আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই স্থানীয় ১০ জন মিলে জমিটিতে পুকুর খনন করতেছি।
জেলা প্রশাসক হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া কোন জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ‘যে সব জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে তা প্রায় সবই উর্বর ফসলি জমি। এ সব জমিতে বোরো, আমনসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ হয়ে থাকে। পুকুর খননের ফলে মাছ চাষ বৃদ্ধি পেলেও ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। এতে ফসলের উৎপাদন কমবে।’ আর এজন্য তা প্রতিহত করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।