নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আশাশুনি সদর ইউনিয়নের কোদন্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুঃখী রাম ঢালীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। একইসাথে মেসেঞ্জারে করা ছাত্রীর সাথে প্রধান শিক্ষকের আপত্তিজনক চ্যাট ফাঁস হয়েছে।
ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে কয়েকজন। প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে ছাত্রীর পরিবারকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে ধামাচাপা দিতে জোর তদবির চালাচ্ছেন বলে স্থানীয়ভাবে সর্বশেষ জানা গেছে। ওই ছাত্রী কোদন্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি শংকর বাইনের বোনের মেয়ে, বর্তমানে কোদন্ডা তার মামা শংকরের বাড়িতে থেকে লেখা-পড়া করে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, কালিগঞ্জ উপজেলার মঠবাড়ি গ্রামের দশম শ্রেণির কোদন্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী কোদন্ডায় তার মামার বাড়িতে থেকে লেখা-পড়া করার সুযোগে ওই বিদ্যালয়ের লম্পট প্রধান শিক্ষক দুঃখী রাম ঢালী কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছেন গত কয়েকদিন ধরে।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজে জানিয়েছেন, কোদন্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুঃখী রাম ঢালীর কাছে সে প্রাইভেট পড়তো। প্রথমে শিক্ষক ওই ছাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার নেয়। এরপর শিক্ষক ওই ছাত্রীর কাছে প্রায় মোবাইল করে পড়া-লেখার খবর নিতেন। পরে তার ফেসবুক আইডি নিয়ে ওই ছাত্রীকে তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে একসেপ্ট করতে বলেন। ছাত্রীও একসেপ্ট করেন। তারপর থেকে শুরু হয় বিভিন্ন আপত্তিজনক কথা-বার্তা। এমনকি ভিডিও কলে শিক্ষক ছাত্রীর নগ্ন ছবি দেখতে চাইতেন, চ্যাটে নগ্ন ছবি পাঠাতে বলতেন এবং কাপড় সরিয়ে ছবি দিতে বলতেন।
তবে ওই ছাত্রী যখন নাকচ করতেন তখন লম্পট প্রধান শিক্ষক ওই ছাত্রীকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। এমনকি প্রাইভেট পড়ার সময়ে ওই ছাত্রীকে সবার আগে যেতে বলতেন, কিছু কিছু সময় সবার পরে যেতে বলতেন, আবার ব্যক্তিগত কিছু কাজ দিয়ে ছাত্রীকে একা পেতে সুযোগ খুঁজতেন ওই প্রধান শিক্ষক। যখন ওই ছাত্রী একা থাকতো তখন প্রধান শিক্ষক ছাত্রীর ওড়না ধরে টানাটানি করতেন, জড়িয়ে ধরা, অশ্লীল কাজ-বাজ করতে চাওয়া, গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করতেন। বিভিন্নভাবে ছাত্রীকে যৌন হেনস্তার স্বীকার করতেন। তবে ওই ছাত্রী বলছেন সেগুলো আমি কখনোই শয্য করতাম না।
তবে ভয়ে ওই ছাত্রী প্রথমে কাউকে জানায়নি। কিন্তু যখন ওই ছাত্রীর ধোর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে তখন তার সহপাঠীদেরকে জানিয়েছেন। সহপাঠীরাই তাকে প্রতিবাদ করতে বলেছে।
এদিকে ওই ছাত্রীর সাথে প্রধান শিক্ষক দুঃখী রাম ঢালীর মেসেঞ্জারের আপত্তিজনক চ্যাটটি ফাঁশ হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে শিক্ষক দুঃখী রাম ঢালী ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে যৌন প্রস্তাব দিয়েছেন।
লম্পট প্রধান শিক্ষক দুঃখী রাম ঢালী বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য। ইতিপূর্বে এই প্রধান শিক্ষক সাতক্ষীরা সদরের আগরদাড়ী রহিমিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক, কুন্দড়িয়া পি.এন হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাসানুজ্জামান বলেছেন, বিষয়টা আমি শুনেছি। তবে কারোর পক্ষ থেকে লিখিতভাবে কিছু জানানো হয়নি। লিখিতভাবে ওই ছাত্রী বা ছাত্রীর পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত করে যথাযত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন তিনি বিষয়টা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। তদন্তে সত্য প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।