প্রধানমন্ত্রীর বিশাল বাসভবনে থাকতে চান না তিনি

21

অনলাইন ডেস্ক:
বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে নিজেকে বিজয়ী দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইমরান। দিয়েছেন ব্যাপক সংস্কারের আভাস। তিনি আরও বলেছেন, ভারতের সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। ছবি: রয়টার্সপাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের পুরো ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে যতটুকু ফলাফল পাওয়া গেছে, তাতে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে আছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে নিজেকে বিজয়ী দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইমরান। দেশের বিভিন্ন খাতে দিয়েছেন ব্যাপক সংস্কারের আভাস। তিনি আরও বলেছেন, ভারতের সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় আধা ঘণ্টা। পিটিআই চেয়ারম্যান জানান, ২২ বছর আগে যে কর্মপরিকল্পনা নিয়েছিলেন, এবার তা বাস্তবায়নের সুযোগ পাচ্ছেন। সাধারণ নাগরিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

ইমরান বলেন, ‘কেন আমি রাজনীতিতে এসেছি, তা স্পষ্ট করতে চাই। রাজনীতি আমাকে কিছু দেয়নি। আমি চেয়েছিলাম, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ যেমন পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলেন, এই দেশটি তেমন হোক। মদিনায় যেমন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তেমন পাকিস্তানের স্বপ্ন আমি দেখি—যেখানে বিধবা ও দরিদ্রদের খেয়াল রাখা হবে। আজ এই রাষ্ট্র বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। আমাদের সব নীতির লক্ষ্য কম সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের সাহায্য করা।’

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থা দেখেই একটি দেশকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় জানিয়ে ইমরান খান বলেন, ‘ধনীদের দ্বীপ ও গরিব মানুষের সমুদ্র নিয়ে থাকা কোনো দেশ উন্নতি করতে পারে না।’

প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত বিশাল বাসভবনে থাকতে চান না ইমরান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এমন বিশাল বাড়িতে থাকতে আমি লজ্জা পাব। এই বাড়িকে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্য কিছুতে রূপান্তর করা হবে।’

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ১২০টি আসনে এগিয়ে আছে পিটিআই। দেশটির নির্বাচন কমিশন এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত ৪৯ শতাংশ ভোটকেন্দ্রের ভোট গণনা শেষ হয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটি ৬০ লাখ। প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। তবে পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন বলেছে, অনেক এলাকায় নারীদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। পিএমএল-এন, পিপিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

ইমরান খান অবশ্য নির্বাচন নিয়ে সব সংশয় উড়িয়ে দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, এটি পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম স্বচ্ছ নির্বাচন। তবে বিরোধীদের যেকোনো অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার এবং তাতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন ইমরান।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খান বলেন, ‘আমি সত্যিই আমাদের মৈত্রীর সম্পর্কটি ঠিক করতে চাই। ভারত যদি এক পা এগোয়, তবে আমরা দুই পা এগোব।’ এর আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্টিও ঝরেছে ৬৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিকের কণ্ঠে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তাঁকে ‘বলিউডের ভিলেন’ হিসেবে চিত্রিত করেছে।

ইমরান বলেন, ‘ক্রিকেটের কারণে আমি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই আমি।’ সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্ক ও এ নিয়ে নিজের পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য দেন এই সাবেক ক্রিকেটার। ভারতের প্রসঙ্গ আসে সবার শেষে। এর আগে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার কথা বলেন তিনি। আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথাও জানান ইমরান। সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিত্রতা জোরদারের কথাও বলেছেন পিটিআইয়ের এই নেতা।

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মোট ৩৪২ আসনের মধ্যে ২৭২ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। বাকি ৭০টি আসন নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত। কোনো দলকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে ২৭২ আসনের মধ্যে ১৩৭ আসনে জিততে হবে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি ইমরানের দল পিটিআই।

গতকাল বুধবার পাকিস্তানজুড়ে সাধারণ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। জাতীয় পরিষদের সঙ্গে দেশটির চারটি প্রাদেশিক পরিষদেও নির্বাচন হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল আটটায় থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ।