প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক আটক

106

মাহবুবুজ্জামান সেতু,নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁর মান্দায় এক   প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের পর মাত্র ৮ হাজার টাকার মাধ্যমে  ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মাতবরদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত   কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের বড় চকচম্পক গ্রামের সদর উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম  ওরফে শুটকা (৩৫) কে  আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার  (১৮ জানুয়ারি ) রাতে অভিযান চালিয়ে তার নিজ বাড়ি থেকে  তাকে আটক করা হয়।

স্থানীয়রা জানান,গত ৬ জানুয়ারি বেলা  ১১ টার দিকে উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের খালের পাড়ে একটি সরিষা ক্ষেতে এ ঘটনা ঘটে। ওইদিন  মাছ ধরার কথা বলে খালের পাড়ের একটি সরিষার খেতে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করেন আশরাফুল ইসলাম ওরফে সুটকা (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। সম্পর্কে তিনি ওই শিশুটির দাদু হন।

ভিকটিম শিশুটির মা জানান, তাঁর মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার্থীটিকে কোন হাসপাতালে না নিয়ে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে  বিষয়টি ধামচাপা দিতে আট হাজার টাকায় নিষ্পত্তি করে দেন স্থানীয় মাতবরেরা। ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে পড়লে এলাকাবাসির মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এরপর মূল ঘটনাটি সম্পর্কে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।  পরবর্তীতে মান্দা থানার ওসি শাহিনুর রহমানের নির্দেশনায় অভিযুক্তকে আটক করা হয়।

ভিকটিম শিশুটির মা আরোন জানান যে , গত ৬ জানুয়ারি বেলা ১১ টার দিকে বাড়ির অদুরে নিজেদের রোপনকৃত আলু খেত দেখতে যায়। সেখানে থেকে মাছ ধরার কথা বলে তার মামা শ্বশুর সুটকা মেয়েকে খালের পাড়ে নিয়ে যায়। এরপর পাশের একটি সরিষা খেতে নিয়ে মেয়েটিকে পাশবিক নির্যাতন করেন তার মামা শ্বশুর।

তিনি আরও বলেন, ‘পরে অসুস্থ মেয়েকে বাড়ি পৌঁছে দেন মামা শ্বশুর পরিবারের লোকজন। এসময় আমার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। রাতে বাড়ি ফিরলে ঘটনার বিষয়ে তাঁকে অবহিত করি। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলা হয়েছে।’  ভিকটিমের দাদা নেকবর আলী মোল্লা বলেন, নাতনিকে ধর্ষণের ঘটনায় গত ৯ জানুয়ারি রাতে প্রতিবেশী আনোয়ারা বিবির নেতৃত্বে তাঁর বাড়িতে সালিসের আয়োজন করা হয়।

বৈঠকে এলেঙ্গা গ্রামের নাসির উদ্দিন, স্থানীয় কামাল হোসেন, সৈয়দ আলী সরদার, দীনু কবিরাজ, আব্দুল জলিল, বাবুল হোসেন লেদু, জিন্নাতুন নেছাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, সালিসে ধর্ষণের কথা স্বীকার করায় তাঁকে জুতা পেটা করেন মাতবরেরা। পরে শিশুটির চিকিৎসার জন্য আট হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সালিসের আয়োজক আনোয়ারা বিবি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘বিষয়টি নিজেদের মধ্যে হওয়ায় নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা সালিসে নিষ্পত্তি করে দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা গ্রামের মানুষ আইন বিষয়ে এতকিছু জানিনা।’

এব্যাপারে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, ‘ প্রথমে এ ধরণের কোনো ঘটনা আমার  জানা ছিলো না বা  কেউ অভিযোগও করেননি। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। বুধবার সকালে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে  বলে জানান  এ কর্মকর্তা।