আবু তারেক বাঁধন পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) :এ বছরের বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান নিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষকেরা পড়েছে বিপাকে । ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হতাশ। ১ বস্তা ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে না ১ কেজি গরুর মাংস।কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁও জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬২ হাজার ৩৬০ হেক্টর আর অর্জিত হয়েছে ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর।কৃষি বিভাগ বলছে, উৎপাদন গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত বছর প্রতি হেক্টরে চাল উৎপাদন হয়েছিল ৩.৮ টন আর এবার বৃদ্ধি পেয়ে ৪ টন। দাম কম থাকার কারণে অধিকাংশ কৃষক গত বছর ধান বিক্রি করেনি। তাই এসব কৃষকরা সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন।পীরগঞ্জ উপজেলার সেনুয়া,ভোমরাদহ, মিলন বাজার গ্রামের কৃষকরা জানান, আমরা এ বছর প্রতেকে ১০/১২ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি প্রায় ১২শত মণ ধান আমার উৎপাদন হয়েছে। আমাদের পরিবারে বছরে ২০ মণ করে ধান খাবার জন্য প্রয়োজন হয়।বাকি ধান আমরা বিক্রি করে ফেলি। বর্তমানে বাজারে ৬ শত টাকা করে ধানের বস্তা বিক্রি হয়। আমাদের প্রতি বস্তা ধান উৎপাদন করতে সাড়ে ৬ শ থেকে ৭ শত টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে যে ধানের দাম আছে সেই দামে ধান বিক্রি করলে প্রতিমণ ধান দেড় থেকে ২ শত টাকা লস হবে।
পীরগঞ্জ উপজেলার নাকাটি (বাজারদেহা) গ্রামের রায়হান ইসলাম জানান, শনিবার কাতিহার বাজার ও রবিবার স্থানীয় পীরগঞ্জ বাজারে গিয়ে ৬ শত টাকা ধানের বস্তা বিক্রি করেছি। বাড়িতে মেহমান থাকায় ৬০০ টাকা কেজি দরে করে গরুর মাংস কিনতে হয়েছে । বর্তমান বাজারে ১বস্তা ধান বিক্রি করলে ১ কেজি গরুর মাংস কিনতে পাওয়া যায় না। শুনেছি বর্তমান সরকার ১০৪০ টাকা করে ধান ক্রয় করবে। এই দামে ধান বিক্রি করতে পারলে আমরা লাভবান হব। ১নং ভোমরাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিটলার হক বলেন, ব্যক্তি জীবনে আমিও একজন কৃষক। আমি মনে করি আগামীতে কৃষকরা যদি রপ্তানিমুখী ধান চাষ করে তাহলে তারা অনেকটাই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
এ জন্য সরকারকে রপ্তানিমুখী ধান চাষে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন বলেন, ধান উৎপাদনের জন্য সব উপাদন সময় মতো পাওয়ায় ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষিদের ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বর্তমান বাজারে ধানের যে দাম তাতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এসব ধান শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে পরে লাভবান হতে পারে ।
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা বলেন, বর্তমানে পীরগঞ্জের হাট-বাজার গুলোতে প্রতি মণ ধান ৩০০-৩২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রতি মণ ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৬০০-৬৫০ টাকা। এভাবে ধানের দাম প্রতিবার কম পাওয়ায় আমরা লোকসানে পড়ি। বর্তমানে ৮ টাকা কেজি দরে ৩২০ টাকা ধানের মণ বিক্রি করতে হয় আমাদের। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আর ধান চাষ করব না। এ সময় কৃষকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ধানের নায্য মূল্য উৎপাদন খরচের থেকে কম হওয়ায় আমরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি ।