গত দু’দিন পিরোজপুরের বিভিন্ন নদ-নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পিরোজপুরের কচাঁ, বলেশ্বর, কালীগঙ্গা, সন্ধ্যা, বেলুয়া ও পোনাসহ বিভিন্ন নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী গুচ্ছগ্রাম, আবাসন প্রকল্পসহ জেলার মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানী, কাউখালী ও ভান্ডারিয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এছাড়া নাজিরপুর ও স্বরূপকাঠি উপজেলার বিলাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব চর ও বিলাঞ্চলের নিচু ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে কচাঁ নদীর চরখালী, বেকুটিয়া ও কাউখালীর আমড়াঝুড়ি ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে ডুবে গিয়ে যানবাহনসহ সাধারণ যাত্রীদের ফেরিতে ওঠানামায় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
বলেশ্বর নদীর পানি বৃদ্ধিতে পিরোজপুর পৌর শহরের মধ্যে থাকা দামোদর খালসহ বিভিন্ন খালে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে শহরের মধ্যে অবস্থিত সুইপার কলোনীর বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া সিআইপাড়া, খুমুরিয়াসহ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
গতকাল সোমবার জোয়ারের পানি কঁচা নদীতে ৬ সে.মি ও বলেশ্বর নদীতে ১৮ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলে সমকালকে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহম্মেদ। এসম তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার কঁচা ও বলেশ্বর নদী ছাড়াও কালীগঙ্গা, সন্ধ্যা, বেলুয়া ও পোনাসহ বিভিন্ন নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে জোয়ারের পানি ৬ ঘন্টা পরে নেমে গেলেও লবনাক্ততার কারণে ফসলীজমির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইন্দুরকানী উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী চাড়াখালী গুচ্ছগ্রাম, কচাঁ নদীর তীরবর্তী সাঊদখালী আবাসন প্রকল্প ও পাড়েরহাট আবাসন প্রকল্প, টগড়া, খোলপটুয়া, কলারণ, চর বলেশ্বর, চন্ডিপুর, ইন্দুরকানী, কালাইয়া, উমেদপুর, ভান্ডারিয়া উপজেলার নদমুলা, চরখালীর জেলেপাড়া, বোতলা, তেলিখালী, জুনিয়া, ভিটাবাড়ীয়া, কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠী গ্রামের নিম্নাঞ্চলসহ আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নদীর তীর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে, যা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। এসব এলাকার অধিকাংশ স্থানে বেড়িবাধ না থাকায় জেয়ারের পানিতে গ্রামগুলো ডুবে যাচ্ছে। ফলে জোয়ারের সময় এলাকাবাসীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। এছাড়া জোয়ারের পানিতে জেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে জোয়ারের পানি ঢুকে যাওয়ায় সবজি ক্ষেত ও আমন বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় আশংঙ্কা রয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকগণ।
কচাঁ নদীর তীরবর্তী টগড়া গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক জানান, নদী তীরবর্তী অধিকাংশ স্থানে বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো তলিয়ে যায় আবার ভাটায় শুকায়। জোয়ারের লবনাক্ত পানি ফসলের মাঠে ও বাড়িঘরে ঢুকে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জগৎ প্রিয় দাস জানান, জোয়ারের পানি স্থায়ী না হলে ফসলি জমিতে ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তবে গ্রীষ্মকালীন সবজি ক্ষেতের কিছু ক্ষতি হতে পারে।