পাবনা প্রতিনিধি : পাবনা জেলার বেড়া সিএন্ডবি চতুর হাটে জমে উঠেছে গরু-ছাগল, মহিষ,ভেড়া বেচা-কেনা । এই চতুর হাটের গরু বেচা-কেনার ঐতিহ্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ক্রয় করার জন্য আসে ক্রেতারা বা গরু ব্যবসায়ীরা। দূর-দূরান্ত থেকে গরু, মহিষ, ছাগল কেনার জন্য আসায় গরু বিক্রেতারাও বেশি অর্থের লাভে এই হাটে তাদের পশু নিয়ে আসেন। আর কয়েকদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা।
এই ঈদকে সামনে রেখে চতুর হাটে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া আমদানি হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। কিন্তু তবে গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানির পশুর দাম স্বাভাবিক বলে জানান ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবারে গরু-ছাগলের হাট বসে। কিন্তু পবিত্র ঈদ-উল-আযহা কে সামনে রেখে ১৪ই আগষ্ট মঙ্গলবার থেকে কমবেশি ঈদের আগের দিন পর্যন্ত হাট চলবে বলে জনান হাটের ইজাদাররা ।
গত মঙ্গলবার চতুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ছোট-বড়, ষাঁড়-মহিষ,বলদ, বকনা-গাভী সহ প্রায় ৭ হাজার গরু হাটে এসেছে।
সাথিয়া উপজেলার ধোপাদহ গ্রামের খামারি মো: হাসেম আলী হাটে বিক্রির জন্য ৩ টি বড় ষাঁড় এনেছেন। তার মধ্যে হাটের সবচেয়ে বড় গরুটির কি পরিমাণ মাংস হবে জানতে চাইলে স্থানীয় কসাই বলেন, গরুটির ২০ থেকে সাড়ে ২১ মণ মাংস হবে। প্রতিটি গরুর দাম চাচ্ছেন ৬লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। হাসেম আলী জানান, কোরবানী ঈদে বিক্রির জন্য আমি মোট ১৫ টি গরু পালন করেছি ।
অপর খামারি বেড়া উপজেলার শহীদনগর গ্রামের মো: মকবুল হোসেন ৬টি গরু বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন হাটে। তিনি জানান প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ টি করে ষাঁড় লালন পালন করেন। গত কোরবানীর এক মাস পর এক একটি গরু ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায় কিনেছেন। সারা বছর একটি গরুর পেছনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই অবস্থায় প্রতিটি গরু গড়ে ৯০/৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে না পারলে পোষাবেনা।
বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া গ্রামের ছালাম বলেন, কোরবানির হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে এলাকার প্রতিটি কৃষক পরিবার গরু পালে। তিনি নিজে যে গরুটি হাটে এনেছেন বিক্রি করতে সেটি ৭ মাস আগে কিনেছিলেন ৩২ হাজার টাকায় গরুটি পুষে বড় স্বাস্থ্যবান করার পর এখন দাম চাচ্ছেন ৬০ হাজার টাকা কিন্তু ক্রেতা দালাল, ব্যবসায়ীরা কেউ ৪৫ হাজার কেউবা ৪৭ হাজার দাম বলছেন।
চতুর হাটে আসা গরু ব্যবসায়ী লালচাদ বলেন গতবছর ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে সেই গরুর দাম এখন ৬০ থেকে ৬২ হাজার টাকায় কিনতে হবে। ভারত থেকে গরু আসছেনা। গতবছর কোরবানির হাটে ৬৮ থেকে ৭০ হাজার টাকাই যে গরু ক্রেতারা কিনেছেন সেই গরু ৮০ থেকে ৮২ হাজার টাকায় কিনতে হবে বলে তিনি জানান।
ঢাকা গরু ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, কোরবানি ঈদের জন্য আমরা গরু নিয়ে যাচ্ছি ঢাকায়। গতবছরের তুলনায় এবার প্রতিটি গরুর দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে।
চতুর হাটে সরেজমিনে ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতা, গরুর খামার মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায় ।
পশুর হাটে গরু-ছাগল ও মহিষেরে আমদানি ছিল চোখে পরার মতো । বাজারে বিক্রেতারা পশুর দাম হাকালেও ক্রেতারা বেশ দরদাম করেই পশু ক্রয় করছেন । তবে ক্রেতাদের পছন্দের শির্ষে রয়েছে ছোট ও মাঝারি আকারের স্বাস্থবান দেশি গরু ।
হাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান (উকিল) ও ইদ্রিস আলী জানান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ক্রেতা এবং ব্যবসায়ীরা গরু ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। গরু ব্যবসায়ীদের সকল প্রকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দুর-দুরান্ত থেকে আসা ব্যাবসায়ীদের ট্রাক ,ট্রলি রাখার সুব্যাবস্থা ,গরু গাড়িতে উঠানো নামানোর সুব্যাবস্থা করা হয়েছে ।
অন্য দিকে চতুর হাটে ছাগলের বেশি দাম বেশি বলে জানিয়েছেন হাট ইজারাদার রফিকুল ইসলাম, ক্রেতারা ও ছাগল ব্যবসায়ীরা।
সাথিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মজিদ জানান, চতুর হাটে গরু ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।