ঢাবির অবহেলায় প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা, ফলাফল অনিশ্চিত
মোঃ জাবের হোসেন:
সমাবর্তন প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনে এক অমূল্য সম্পদ।সবাই অাশা করে খেলা-পড়া শেষ করে সমাবর্তনের দিনে গাউন পরে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই দিনের স্মৃতি ধরে রাখবে।এজন্য এদিন মোবাইল,ক্যামেরার ফ্লাশে অালোকিত হতে থাকে ক্যাম্পাস।কারোর কারোর সাথে বাবা-মা,ভাই অাসে স্মরণীয় এই শিক্ষা জীবনের সমাবর্তনে।
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জীবনের এই অানন্দের দিনে নেই কোনো অানন্দ,নেই কারোর মনে প্রাশান্তি।কারণ একটাই ঢাবি অধিভূক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের তাদের অধিকার থেকে বার বার বঞ্চিত করে অাসছে।
সাত কলেজ অধিভূক্ত হওয়ার অাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলো ১০৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,অার সাত কলেজ অধিভূক্ত হলে তার সংখ্যা দাঁড়ায় ১১১ টি।
সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ তম সমাবর্তন।৫০ তম সমাবর্তন পর্যন্ত নিয়ম ছিলো ১০৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ক্যাম্পাসে সমাবর্তন দিয়েছে।৫১ তম সমাবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নতুন নিয়ম করেছে অধিভূক্ত সাত কলেজ ছাড়া বাকি ১০৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তারা ঢাবির নিজ ক্যাম্পাসে সমাবর্তন দিবে।বাকি অধিভূক্ত ৭ কলেজের সমাবর্তন প্রত্যেক কলেজের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে হবে।
প্রহসন জেগেছে সকল শিক্ষার্থীদের মনে তাহলে অধিভূক্ত সাত কলেজ কি করলো? দোষ কি অামাদের? একদিকে সেশনজটে পরীক্ষা,রেজাল্টের দীর্ঘসূত্রীতা অন্যদিকে সমাবর্তন থেকেও বঞ্চিত সাত কলেজ!
অনেকেই অভিযোগ করেছেন, অধিভূক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কেনো সমাবর্তন থেকে বঞ্চিত হবে? ১০৪ টা প্রতিষ্ঠানকে যদি তারা সমাবর্তন দিতে পারে তাহলে সাত কলেজেকে কেনো নয়? শিক্ষার্থীরা যুক্তি দেখিয়েছেন, হয়তো ঢাবি কর্তৃপক্ষ বলবে সাত কলেজের অনেক শিক্ষার্থী,এত সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাবির ক্যাম্পাসে যথেষ্ঠ জায়গা নেই।কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলছেন ১০৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যেখানে ঢাবি সমাবতর্ন দিতে পারবে সেখানে সাত কলেজের বেলায় কেনো ভিন্ন নিয়ম? শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ বলছে একই দিনে সমাবর্তন করতে না পারলে অন্য দিনে করা হোক।প্রয়োজনে এই সাত কলেজকে নিয়ে অন্যদিন সমাবর্তন দেয়া হোক।তবুও অামরা ঢাবির ক্যাম্পাসে অামাদের নায্য অধিকার চাই।অনেকেই বলেছেন সমাবর্তনের দিনে বাইরে থেকে যে পরিমান লোকের সমাগম হয় তাতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কিছুই না।
শফিকুল ইসলাম সাগর নামে একজন লিখেছেন
অনেকেই বলেছেন ঢাবি যে সমাবর্তনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তা আনন্দের বিষয় কিন্তু তার থেকেও বেশী অপমানের সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য।
এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুকে লিখেছেন
“ফেসবুকে অনেক শিক্ষার্থীই ঢাবিকে নিয়ে গালাগালি করে দেখে নিজের কাছে খারাপ লাগলেও কখনও কিছু বলতাম না। পরীক্ষা, ফলাফল এত দেরীতে পাচ্ছি এত এত ক্ষোভ ভিতরে জমা হাওয়ার পরেও ঢাবি সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলাতাম না। কিন্তু ঢাবির এরূপ কর্মকান্ডে আজ মন ক্ষত বিক্ষত। কতটা মূল্যহীন হলে সাত কলেজের স্টুডেন্টদের সাথে তাদের এরূপ আচরণ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং থাকবেও বলা যায়! ”
শারমিন সর্ণা নামে একজন লিখেছেন
“কেউ কেউ বলছেন সত্যিই লাইফের সবচেয়ে বড় ভূল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়া। এরপরের ভূল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। তার থেকেও বড় ভূল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের টপ ৭ কলেজগুলোর একটিতে ভর্তি হওয়া।”
খালিদ হাসান তমাল নামে একজন বলেছেন
“সাত কলেজের স্টুডেন্টদের নিজেদের আত্ম সম্মানবোধ থাকলে সমাবর্তন বর্জন করুন। সমাবর্তনের দরকার নাই। সনদ নিয়ে সালাম জানান এরকম নোংরা সিস্টেমকে।”
এরকম অংখ্যক ক্ষোভ একের পর এক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করছে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৫১ তম সমাবর্তন -২০১৮ উপলক্ষ্যে ৬ অক্টোবর বেলা ১২.০০ ঘটিকায় সমাবর্তনের অায়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে।অার অধিভূক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে।যেটির অনলাইনে অাবেদন শুরু ১২ অাগস্ট,চলবে ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত।
উল্লেখ ২০১৭ সালের ১৯ শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সেশনজন নিরসনে রাজধানীর সরকারী সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত করা হয়।অপরিকল্পিত ও পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় একটু সময় লাগছে বলে কর্তৃপক্ষ বারং বার অভিযোগ তুলছে।কিন্তু অধিভূক্তের ১.৫ বছর অতিবাহিত হলেও কোনো অগ্রগতি পায়নি শিক্ষার্থীরা।বরং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা অনেকটা পিয়েছে রয়েছে।সবথেকে বেশি সেশনজটের কবলে পড়েছে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের শিক্ষার্থীরা।তারা প্রায় ১৪ মাসের সেশনজটের কবলে পড়েছে।ডিগ্রি ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ২ বছর,স্নাতক ২০১২-১৩ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীরা ৮ মাসের সেশনজরে কবলে রয়েছে।এছাড়াও অারো অনেক শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীরা সেশনজটের ভোগান্তিতে রয়েছে।
এছাড়াও অারো অনেক অভিযোগ রয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময় শিক্ষার্থীরা যেমন খাতায় বা প্রশ্নে পরীক্ষা দিতো তার থেকে নিম্ন মানের খাতা,প্রশ্নে পরীক্ষা নিচ্ছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।তাছাড়া খাতার উপরে কলেজের নাম লেখা নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করেন,তারা বলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম খাতায় এর অাগে বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে কখনো লিখিনি।অার এটা লিখলে নিজেদেরকে অানসেভ মনে হয়।
সবদিক থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যার জন্য সাত কলেজকে অধিভূক্ত করা হয়েছে।সেই মূল কারণই এখন ব্যহত হচ্ছে।শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত সেশনজট মুক্ত করে পরীক্ষা নেয়া সহ সকল কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা হোক।তারা অার কারোর করুণার পাত্র হতে চাইনা।